ভোট দিলেন কংগ্রেস নেত্রী সনিয়া গাঁধী ও বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। রবিবার দিল্লিতে।
শিখ দাঙ্গার বিতর্ক, অতিশী-গৌতম গম্ভীরের বাদানুবাদ— প্রচারে যত বিবাদই থাক, ভোটের দিন সব ভুলে কার্যত উৎসবের মেজাজে ভোট দিল দিল্লি।
আজ ষষ্ঠ পর্বে ছিল দিল্লির ভোট। পঞ্চম পর্ব ভোটের পরেই পরিকল্পিত ভাবে বিজেপির প্রচারে জায়গা করে নেয় ১৯৮৪ সালে দিল্লির শিখ নিধন পর্ব। গোটা কাণ্ডের জন্য কংগ্রেসকে দায়ী করে শিখ ভোটকে নিশানা করে প্রচারে ঝাঁপান নরেন্দ্র মোদী। তাঁকে সুবিধা করে দেন রাহুল গাঁধীর ঘনিষ্ঠ কংগ্রেস নেতা স্যাম পিত্রোদা। বলে বসেন, ‘‘হুয়া তো হুয়া।’’
অর্থাৎ হয়েছে তো হয়েছে। ভোটের মুখে এমন বক্তব্য স্বভাবতই লুফে নেয় বিজেপি। কংগ্রেস নেতৃত্ব ওই বক্তব্যের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টির চেষ্টা করলেও, ঘনিষ্ঠ মহলে তাঁরা স্বীকার করে নেয়— এতে দলের শিখ ভোট ব্যাঙ্কে প্রভাব পড়তে বাধ্য।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
তা যে পড়েছে, মানছেন তুঘলকাবাদ এক্সটেনশনে গুরুদ্বারে আসা শিখেরা। অধিকাংশই স্থানীয়। অনেকেই ভোট দেওয়ার আগে বা পরে এসে মাথা ঠেকিয়ে যাচ্ছেন গুরুদ্বারে। স্নাতক স্তরের প্রথম বর্ষের ছাত্র গুরমিত সিংহ যেমন। ভোটটা দিয়ে প্রতি রবিবারের মতো আজও এখানে এসেছিলেন। বিশ বছরের যুবক বাবা-কাকার মুখে শুনেছেন সেই হত্যাকাণ্ডের কথা। সেই ঘটনাকে কেউ কী ভাবে সমর্থন করতে পারে, তা বুঝতে পারছেন না প্রথম বার ভোট দেওয়া গুরমীত। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘এ সব কথা বলার পরে এরা ভোট চায় কোন মুখে।’’ গুরমিতকে সমর্থন করেন বন্ধু কৃপাল। তাঁরও প্রথম ভোটদানের অভিজ্ঞতা হয়েছে আজই।
রবিবার দিল্লিতে ভোট দিলেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ এবং প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়।
বয়স্ক যাঁরা, তাঁরা অবশ্য অধিকাংশই ভুলে যেতে চান সে সব কথা। চিত্তরঞ্জন পার্কের রাইসিনা স্কুলে ভোট দিতে এসেছিলেন পেশায় স্থপতি গগনদীপ সিংহ। বয়স পঞ্চাশের কাছাকাছি। প্রবীণ ওই ব্যক্তির মতে, ‘‘যা হয়েছে তা ক্ষমার অযোগ্য। তা বলে এখন ওই ঘটনা তুলে ভোট চাওয়ার পিছনে রাজনীতি ছাড়া আর কিছু নেই। মানুষ যদি তা না বোঝে, তা হলে মুশকিল।’’ একই মত পূর্ব দিল্লির শকরপর স্কুল ব্লকে সর্বোদয় প্রাথমিক স্কুলে ভোট দিতে আসা কমলজিতের। সে সময়ে আট বছর বয়সের কমলজিৎ দাঙ্গার প্রতক্ষ্যদর্শী। হিন্দু প্রতিবেশীরা লুকিয়ে থাকতে সাহায্য করায় প্রাণে বেঁচে যায় তাঁদের পরিবার। কিন্তু ত্রিলোকপুরীতে থাকা কমলের কাকা ও খুড়তুতো দাদারা দাঙ্গার শিকার হন। সরাসরি দাঙ্গার আঁচ পাওয়া কমল এখন তাই ভুলে যেতে চান সেই সব দিন। তাঁর কথায়, ‘‘আর কত দিন স্মৃতি আঁকড়ে বাঁচব। ভোট এলেই রাজনৈতিক দলগুলি ইচ্ছে করে সেই শুকিয়ে যাওয়া ঘা-কে ফের খুঁচিয়ে তোলে।’’
শিখ দাঙ্গার অস্বস্তিটুকু বাদ দিলে দিল্লিতে আজ উৎসবের মেজাজ। এমনিতেই রবিবার। ছুটির দিনে ভোট। বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী তো দূরের কথা, দিল্লি পুলিশের অফিসারদের খুঁজে পাওয়া দায়। নিশ্চিন্তে ভোট দিচ্ছেন মানুষ। তাপমাত্রা দিনভর চল্লিশের ঘরে থাকলেও, ফরফুরে হাওয়া বুঝতে দিচ্ছিল না গরমকে। তাই সকাল থেকেই একটু-একটু করে ভিড় জমছিল বুথের আশেপাশে। বেলা ন’টার মধ্যেই গোটা দিল্লিতে ভোট পড়ে যায় প্রায় সাড়ে সাত শতাংশ। দিনের শেষে তা গিয়ে দাঁড়ায় ৫৯.৬ শতাংশে। গত বারের চেয়ে প্রায় চার শতাংশ কম।
রাজধানীর সাতটি আসনের মধ্যে এ বারে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে পূর্ব দিল্লি কেন্দ্রটি। একে এখানে প্রার্থী হয়েছেন প্রাক্তন ক্রিকেটার গৌতম গম্ভীর। তায় ভোটের মুখে তাঁর সঙ্গে আপ প্রার্থী অতিশীর বাগ্যুদ্ধে লড়াইয়ের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে।
ওই কেন্দ্রের পশ্চিম বিনোদ নগরের স্কুলে সকাল ন’টার মধ্যে ভোট দিতে চলে এসেছিলেন বি এন সাক্সেনা। প্রাক্তন সরকারি কর্মচারি। সঙ্ঘ পরিবারের সদস্য। শাখায় গিয়ে লাঠি ঘোরান এখনও। স্থানীয় বন্ধু-বান্ধব, আবাসনের লোকেদের ফোন করে বুথ পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার নির্দিষ্ট লক্ষ্য রয়েছে তাঁর উপরে। সকাল থেকেই ফোনে ব্যস্ত তিনি। সকালে বিজেপি সমর্থকদের দাপট দেখে মুষড়ে পড়েছিলে বুথের সামনে বসে নাম মেলানোর দায়িত্বে থাকা আপের সদস্য প্রবীণ কুমার। বেলা বারোটায় তাঁর মুখে চওড়া হাসি! বাকি কয়েক ঘণ্টাতেও সেই হাসি বজায় থাকল প্রবীণের মুখে। যা থেকে স্পষ্ট, দিল্লি দখলের লড়াইয়ে আপের কড়া টক্করের মুখে বিজেপি।
ছবি: রয়টার্স, পিটিআই এবং এএফপি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy