Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
ভোটে ঝাড়খণ্ড
general-election-2019-journalist

‘‌‌‌‌‌‌‌‌বিশটা টকা দে, তুকেই ভোট দিব’

জামশেদপুর শহর থেকে দলমার জঙ্গল ধরে কুড়ি-পঁচিশ কিলোমিটার এগিয়ে পটমদা। এই ব্লকেরই প্রত্যন্ত এলাকায়, পাহাড়-জঙ্গলে ঘেরা পাগদা। শবরদের গ্রাম। গ্রাম বলতে যে ছবিটা চোখের সামনে ফুটে ওঠে তার সঙ্গে অবশ্য এর কোনও মিল নেই।

চাঙড় খসে পড়ছে কেন্দ্রীয় যোজনায় পাওয়া ঘরে। ছবি: পার্থ চক্রবর্তী

চাঙড় খসে পড়ছে কেন্দ্রীয় যোজনায় পাওয়া ঘরে। ছবি: পার্থ চক্রবর্তী

আর্যভট্ট খান
পটমদা শেষ আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০১৯ ০৪:০৭
Share: Save:

বিশটা টকা দে। হাড়িয়া খাব। ভোট তুকেই দিব!

আরে আমরা ভোটবাবু নই।

কিন্তু ওরা ছাড়তেই চায় না। চোখে মুখে আকুতি, বিশ টকা দে। ভোট তুকেই দিব!

ভোটটা কবে? থমকে থমকে এক প্রৌঢ়র জবাব, ‘‘এই তো বৈশাখ মাসে। আমার কাছে ভোটার কার্ড আছে। ভোট দিব।’’

জামশেদপুর শহর থেকে দলমার জঙ্গল ধরে কুড়ি-পঁচিশ কিলোমিটার এগিয়ে পটমদা। এই ব্লকেরই প্রত্যন্ত এলাকায়, পাহাড়-জঙ্গলে ঘেরা পাগদা। শবরদের গ্রাম। গ্রাম বলতে যে ছবিটা চোখের সামনে ফুটে ওঠে তার সঙ্গে অবশ্য এর কোনও মিল নেই। জঙ্গলের মধ্যে কয়েকটা কুঁড়ে ও কয়েকটা কেন্দ্রীয় যোজনার পাকা ঘর ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। ঘর সংলগ্ন আঙিনায় পাতা খাটিয়া।

সকাল ন’টা। খাটিয়ায় শুয়েছিলেন অমিত শবর। তাঁর পাশে একটা খাটিয়ায় বসে বছর তিনেকের এক শিশু। সামনে একবাটি ভাত। শিশুটির মা, চুমকি শবর ভাতের সঙ্গে মেখে দিয়েছে কাঁচা টোম্যাটো। শিশুটির বাবা গিয়েছে জঙ্গলে শুকনো কাঠ জোগাড় করতে। খাটিয়ায় শুয়ে থাকা পাশের ঘরের অমিত শবর এ দিন আর জঙ্গলে যাননি। তাঁর কথায়, ‘‘বনে যাবক না আজ। শলীলটা ভাল নাই।’’ শরীর ভাল থাকার কথাও নয়। ভর সকালেই মুখ দিয়ে বেরোচ্ছে হাড়িয়ার সুবাস। শুধু অমিত নয়, গ্রামের অনেকেরই ‘শরীর ভাল নেই’। খাটিয়ায় বসে নোটবই বের করতেই গুঞ্জন, ‘‘ইয়ারা ভোট বাবুই বটেক।’’ ভজগৌরাঙ্গ শবর, মালতি শবররা ভোটবাবুদের পেয়ে তাঁদের ঘর ঘুরিয়ে দেখাতে চান।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

গ্রামে সরকারি ইন্দিরা আবাস প্রকল্প ও বিরসা আবাস প্রকল্পে কয়েকজন শবর ঘর পেয়েছেন। কয়েকটা ঘর টালির চালের। কয়েকটার আবার ঢালাই ছাদ। এমনই একটা ঘরে ঢুকে দেখা গেল ঘরের ঢালাই ছাদ থেকে চাঙড় খসে খসে পড়ছে। প্রবীণা রুদু শবর বলেন, ‘‘ঘর তো করে দিল সরকার। কিন্তু সেই ঘরের এখন কী অবস্থা, কেউ দিখল না। রাতে শুয়ে থাকি। উপর থেকে সিমেন্টের চাঁই খসে পড়ে।’’ শুধু রুদু শবরের ঘরই নয় আশপাশের কয়েকটি ঘরের হালও খারাপ। কোনও ঘরের ছাদ ভেঙে পড়ছে তো কোনও ঘরের দেওয়ালে ফাটল ধরেছে। ছোট্ট ঘরগুলোর ভিতরে একটা নিকানো উনুন ছাড়া আর কিছু নেই।

এই তিরিশ-চল্লিশ ঘর মানুষের সবাই কিন্তু পাকা ঘর পাননি। পাওয়ার থেকে না পাওয়ার তালিকাটা কম নয়। এরকমই এক জন সুভাষ শবর। জঙ্গলের মধ্যে নিজেই বানিয়ে নিয়েছেন খড়ের ছাউনি দেওয়া একটা আস্তানা। সুভাষ বলেন, ‘‘হাতি আসে, সাপ আসে, আরও নানা জন্তু আসে। হাতি কাঁঠাল খেয়ে চলে যায়।’’ ভোটবাবুদের কাছে একটা পাকা ঘর চান সুভাষ-মালতি। আর যাঁদের ঘর আছে তা মেরামতির দাবি ছাড়া ওদের আর কোনও দাবি নেই ভোটবাবুদের কাছে। ভজগৌরাঙ্গ জানান, মাসে ৩৫ কিলো চাল দেয় সরকার। শাকপাতা, মূল তো জঙ্গল থেকেই জোগাড় হয়ে যায়। সুতরাং পেটের চিন্তা নেই। এই প্রজন্মের শবররা শহরে কাজে যাচ্ছেন, স্কুলে পড়াশোনা করছেন কেউ কেউ। তবে তিনি জানান, এই গ্রামের বেশির ভাগই শুয়ে বসেই দিন কাটান।

গাড়ি ছাড়ার আগে ভজগৌরাঙ্গদের ফের আব্দার, ‘‘সব তো দেখে গিলি। তুকেই ভোট দিব। বিশ টকা দে। হাড়িয়া খাব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE