তোমাদেরই: শিলচরে প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরা। —নিজস্ব চিত্র।
দলের খাতায় তিনি পূর্ব উত্তরপ্রদেশের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক। কিন্তু ভোটের যুদ্ধ এগোতেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে, নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে লড়াইটাকে আর উত্তরপ্রদেশের পূর্ব ভাগে বেঁধে রাখছেন না প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরা। উত্তরপ্রদেশের পশ্চিম অংশে প্রচার চালানোর পরে আজ তিনি রোড-শো করলেন অসমের শিলচরে। এই প্রথম প্রচারে উত্তরপ্রদেশের বাইরে পা রাখলেন সনিয়া-কন্যা। ডাক আসছে পশ্চিমবঙ্গ-সহ অন্যান্য রাজ্য থেকেও।
প্রিয়ঙ্কা নিজের ব্যাপারে বড় মুখচোরা। কিন্তু মোদীকে আক্রমণে কোনও রকম ছাড় দিচ্ছেন না। আজ শিলচরেও তাঁর মূল নিশানা ছিলেন মোদীই। এখানে মানুষকে তিনি জানালেন, প্রধানমন্ত্রীর সংসদীয় কেন্দ্রে অনেক বার গিয়েছেন তিনি। ঘুরেছেন বারাণসীতে। গিয়েছেন গ্রামে। সাধারণ মানুষ মোদীর ওপর ক্ষিপ্ত। দেশ-বিদেশে ঘুরে বেড়ালেও মোদী নিজের নির্বাচনী এলাকার যাওয়ার সময় পান না। বারাণসী নিয়ে প্রিয়ঙ্কার এই আক্রমণ কংগ্রেসের ভিতরে-বাইরে জল্পনাটা উস্কে দিল আরও। তবে কি প্রিয়ঙ্কা বারাণসীতেই নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে প্রার্থী হবেন?
বৃহস্পতিবার শিলচরে এসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। রামনগরের সভায় ভাল ভিড় হয়েছিল। রবিবার এলেন প্রিয়ঙ্কা। তাঁকে দেখতেও শহরে মানুষের ঢল। কংগ্রেস জানিয়েছিল, রোড-শো শুরু হবে বেলা দশটায়। তার অনেক আগেই রাস্তায় ভিড় বাড়তে থাকে। অনেকে ছুটে এসেছেন দূর-দূরান্তের গ্রাম থেকে। চৈত্র সংক্রান্তির খাঁখাঁ রোদে ঘাম ঝরছে। তবু কেউ জায়গা ছাড়তে রাজি নন।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
প্রিয়ঙ্কা বেরোলেন বেলা ১টায়। হুডখোলা গাড়িতে শিলচরের দলীয় প্রার্থী সুস্মিতা দেব ও এআইসিসি সাধারণ সম্পাদক হরিশ রাওয়ত। পিছনে জনতা। কেন তাঁর প্রতি মানুষের এত আকর্ষণ, প্রিয়ঙ্কা ভাল বোঝেন। জানেন, চেহারা-ছবি, চালচলন ও কথাবার্তায় অনেকে তাঁর মধ্যে ইন্দিরা গাঁধীর আদল খুঁজে পান। সুস্মিতার জন্য ভোট চাইতে গিয়ে তিনি টেনে আনেন ইন্দিরার কথাই। বলেন, ‘‘সুস্মিতা দেব আমার ঠাকুমারই মতো। সেই কাজকর্মের ধরন, সেই মানুষের জন্য দরদ! ইন্দিরা গাঁধী ছিলেন দিল সে সাচ্চে। সুস্মিতাও তা-ই। দু’জনেই সত্যনিষ্ঠ এবং কাজের মানুষ।’’
১৯৭৯ সালে শিলচরে এসে ইন্দিরা এই অঞ্চলকে ‘শান্তির দ্বীপ’ বলেছিলেন। এই অঞ্চলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা ছিল রাজীবেরও। তিনিই সুস্মিতার বাবা সন্তোষমোহন দেবকে মন্ত্রিসভায় নেন। । সেই ধারা অব্যাহত রয়েছে। রাহুল সুস্মিতাকে মহিলা কংগ্রেস সভাপতি পদে বেছে নিয়েছেন। প্রিয়ঙ্কার পাশে দাঁড়িয়ে সে সব কথা মনে করাচ্ছিলেন সুস্মিতা।
মোদীকে আক্রমণের ব্যাপারে প্রিয়ঙ্কার ধরনটা দাদা রাহুলের থেকে আলাদা প্রথম থেকেই। শান্ত ভাবে ছোট ছোট মন্তব্য বা প্রশ্নেই যা বলার বলেন। এ দিন পুরো ভাষণে এক বারও চৌকিদার শব্দটার উল্লেখ করেননি। বলেছেন, বেকারি, কৃষকদের সঙ্কট, মহিলাদের নিরাপত্তাহীনতার কথা। প্রতিটি একবাক্যে। এর পরেই মন্তব্য করেন, ‘‘সমস্যার কথা আপনাদের আর কী বলব! এই অঞ্চলেও তো কত সমস্যা। সে সবের সমাধান কি হয়েছে? মোদীর প্রচার আর বাস্তবে কতটা ফারাক, সে সবের বড় উদাহরণ তো আপনারাই।’’ সংবিধানপ্রণেতা বি আর অম্বেডকরের জন্মদিনে তাঁকে শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রিয়ঙ্কা সংবিধান টিকে থাকা নিয়ে আশঙ্কা জানান। বলেন, ‘‘যা চলছে, সংবিধানকে কে তোয়াক্কা করে!’’ তাঁর মতে, ‘‘নীতি ও উদ্দেশ্য (হিন্দিতে বললেন ‘নিয়ত’) এক বিন্দুতে মিললেই কাজ হয়। সেখানেই মোদীকে নিয়ে সমস্যা, আর কংগ্রেসের কাছে প্রত্যাশা।’’ সেই প্রত্যাশা পূরণের অঙ্গীকার করলেন প্রিয়ঙ্কা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy