Advertisement
১৯ মার্চ ২০২৪

গঙ্গা সফরে প্রিয়ঙ্কা যেন ঠাকুরমার ছন্দে

হাসিমুখে বললেন, ‘‘চিনতে পারছেন? এত দূর থেকেও!’’ 

নৌকাবিহার: নৌকায় সঙ্গমের পথে প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরা। সেখান থেকে স্টিমারে গঙ্গায় প্রচার অভিযান শুরু করেন তিনি। সোমবার। ছবি: এপি।

নৌকাবিহার: নৌকায় সঙ্গমের পথে প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরা। সেখান থেকে স্টিমারে গঙ্গায় প্রচার অভিযান শুরু করেন তিনি। সোমবার। ছবি: এপি।

সংবাদ সংস্থা
ইলাহাবাদ শেষ আপডেট: ১৯ মার্চ ২০১৯ ০৪:৫০
Share: Save:

স্টিমারের ডেকে রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে তিনি। তীরে হইহই করে উঠছেন উৎসাহী মানুষ— প্রিয়ঙ্কা, প্রিয়ঙ্কা! হাসিমুখে বললেন, ‘‘চিনতে পারছেন? এত দূর থেকেও!’’

ভিড় এ বার স্লোগান তুলল— প্রিয়ঙ্কা গাঁধী জিন্দাবাদ! পাশ থেকে কেউ এক জন মাইক্রোফোন এগিয়ে দিয়ে বললেন, ‘‘ভাইয়া ইয়ে লিজিয়ে!’’

ভাইয়া ডাক কেন প্রিয়ঙ্কাকে? আসলে লখনউ-ইলাহাবাদের কংগ্রেস কর্মীরা এই নামেই ডাকেন সনিয়া তনয়াকে, বহু দিন ধরেই। সনিয়া তাঁদের কাছে ‘বহুজি’, প্রিয়ঙ্কা ‘ভাইয়া’।

মাইক তুলে নিয়ে সবাইকে শুভেচ্ছা জানালেন উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেসের নতুন কান্ডারি। বাঁ হাত তুলে নাড়লেন যখন, কোথাও যেন ঠাকুরমা ইন্দিরার ছন্দ।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

রবিবার রাতে ইলাহাবাদে এসে ‘স্বরাজ ভবন’-এই উঠেছিলেন প্রিয়ঙ্কা। সেই বাড়ি, ঠাকুরমার জন্মস্থান। রাতে ঘরটির ছবি দিয়ে হিন্দিতে টুইট করেন, ‘সেই ঘরে বসে আছি, যেখানে আমার ঠাকুরমা ইন্দিরা জন্মেছিলেন। মনে পড়ে জোয়ান অব আর্কের গল্প বলে আমাকে ঘুম পাড়াতেন তিনি। বলতেন— সাহসী হও, তা হলেই সব কিছু ভাল হবে।’

পরম্পরা: প্রয়াগের হনুমান মন্দিরে পুজো। ইন্দিরা-প্রিয়ঙ্কার এই মিল দেখিয়ে টুইটারে ছবি পোস্ট করল কংগ্রেসই।

ইন্দিরার ছায়া যে প্রিয়ঙ্কায়, সেটা বোঝানোটা কংগ্রেসেরও কৌশল। স্টিমারে ওঠার আগে প্রয়াগে লেটে হনুমানের মন্দিরে ভক্তিভরে পুজো দেন প্রিয়ঙ্কা। সেই ছবিকে পাশে রেখে কংগ্রেস টুইট করে আরও একটি সাদা-কালো ছবি— ১৯৭৯ সালে এই লেটে হনুমানের মন্দিরেই ফুলের মালা হাতে পুজো দিচ্ছেন ইন্দিরা।

স্মৃতি: ইলাহাবাদের স্বরাজ ভবনে জন্মেছিলেন ইন্দিরা গাঁধী। রবিবার রাতে সেখানেই রাত্রিবাস করে ছবি-সহ টুইট করলেন প্রিয়ঙ্কা।

শুধু এই মন্দিরই নয়, বারাণসী পর্যন্ত তিন দিনের যাত্রাপথে বেশ কিছু মন্দির আর দরগায় পুজো দেবেন, ফুল চড়াবেন প্রিয়ঙ্কা। লেটে হনুমানের মন্দিরে পুজো দিয়ে ভিড় ঠেলে বেরিয়ে আসার সময়ে এক সাংবাদিক জানতে চাইলেন, কী প্রার্থনা করলেন সঙ্কটমোচনের কাছে? হাসি মুখে জানালেন— নিজের জন্য কিছু চাননি, দলের জন্যও নয়। চেয়েছেন দেশের সমৃদ্ধি হোক, শান্তি আসুক সর্বত্র।

নির্ধারিত সময়ের প্রায় দু’ঘণ্টা দেরিতে বেলা ১১টায় ইলাহাবাদের মানাইয়া ঘাটে এসে পৌঁছলেন প্রিয়ঙ্কা। তৈরি ছিল তেরঙা কাপড়ে মোড়া স্টিমার। ঘাট থেকে যখন তরতর করে সিঁড়ি ভেঙে ডেকে উঠে গেলেন প্রিয়ঙ্কা, কী আশ্চর্য— তাতেও যেন সেই ভীষণ চেনা ছন্দ। কংগ্রেসের এক কর্মী তো বলেই ফেললেন— ‘‘কী বলবেন? ডিজিটাল ইন্দিরা!’’

সারা দিনের যাত্রাপথে বেশ কয়েক জায়গায় থেমেছেন প্রিয়ঙ্কা। কথা বলেন জনতার সঙ্গে, পড়ুয়াদের সঙ্গে। সর্বত্র বিপুল উৎসাহ। সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মানুষ। বেরোজগারি নিয়ে মোদী সরকার উদাসীন— এই অভিযোগ উঠে এসেছে পড়ুয়াদের থেকে।

গোয়ার মুখ্যমন্ত্রী মনোহর পর্রীকরের মৃত্যুতে প্রিয়ঙ্কা গঙ্গায় প্রচার-সফর স্থগিত না করায় বিজেপি অখুশি হলেও প্রকাশ্যে কিছু বলেনি। কিন্তু শাসক দলের নেতারা যে ভাবে তাঁকে আক্রমণ করেছেন, তাতে তাঁদের অস্বস্তিই প্রকট হয়েছে। কেন্দ্রীয় সংস্কৃতিমন্ত্রী মহেশ শর্মা রাহুলকে ‘পাপ্পু’ এবং প্রিয়ঙ্কাকে ‘পাপ্পুকা পাপ্পি’ আখ্যা দিয়েছেন। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘রাহুলের বোন কি দেশে নতুন আমদানি নাকি? আগে তিনি গাঁধী পরিবারের কন্যা ছিলেন না? তাঁকে নিয়ে নতুন আদিখ্যেতার কারণ কী?’’ মন্দিরে প্রিয়ঙ্কার পুজো দেওয়া নিয়ে বিজেপির আর এক নেতা গিরিরাজ সিংহ বলেছেন, ‘‘খ্রিস্টান মায়ের শিবভক্ত মেয়ে, দেখে ভালই লাগছে!’’

স্টিমারে ওঠার আগে এ দিন গঙ্গা পুজো করেন প্রিয়ঙ্কা। গণ্ডুষে গঙ্গাজল নিয়ে আচমনও করেন। বিজেপি বলছে, কংগ্রেসের প্রচার করতে গিয়ে তো মোদী সরকারেরই প্রচার করলেন প্রিয়ঙ্কা। গঙ্গাকে নাব্য রাখা, তার জলকে পানযোগ্য রাখার কৃতিত্ব তো সরকারেরই!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE