প্রকাশিত: কংগ্রেসের ইস্তাহার হাতে সভাপতি রাহুল গাঁধী। মঙ্গলবার নয়াদিল্লিতে। ছবি: পিটিআই
মলাটে মালদহের চাঁচলের সভায় উপচে পড়া ভিড়ের ছবি। তার উপরে লেখা: হম নিভায়েঙ্গে। ভিতরের ৫৩টি পাতা ভর্তি উগ্র হিন্দুত্ব আর দেশভক্তির হাতিয়ার ভোঁতা করার উপাদানে। মঙ্গলবার কংগ্রেস সদর দফতরে লোকসভা ভোটের ইস্তাহার প্রকাশ করলেন দলীয় সভাপতি রাহুল গাঁধী।
আজ যেখানে অনুষ্ঠান হল, দেড় বছর আগে সেখানেই মঞ্চ গড়ে রাহুলের হাতে দলের ভার তুলে দিয়েছিলেন সনিয়া গাঁধী। রাহুলের সভাপতিত্বে এটাই প্রথম লোকসভা ভোট। এ দিন সনিয়া তাঁর পাশে ছিলেন ঠিকই, কিন্তু একটা কথাও বলেননি। সদ্য সক্রিয় রাজনীতিতে যোগ দেওয়া বোন প্রিয়ঙ্কাও দর্শক আসনে। আজ রাহুলই সব। কিন্তু গোটা আয়োজনের মধ্যমণি তিনিই। ছবিও তাঁর একার।
স্বাভাবিক ভাবেই সাংবাদিকদের থেকে প্রশ্ন এল: ‘আমরা কি ভারতের ভবিষ্যৎ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলছি?’ এত দিন কৌশলে এই প্রশ্ন এড়িয়ে যাচ্ছিলেন রাহুল। বিজেপি-বিরোধী জোটের দিকে তাকিয়ে বলছিলেন, সে সব ভোটের পরে ঠিক হবে। আজ কিন্তু তাঁর গলায় সামান্য হলেও অন্য সুর। বললেন, ‘‘সে তো দেশের মানুষের উপরে নির্ভর করছে। আমি আমার কাজ করছি।’’
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
কংগ্রেস সূত্রের বক্তব্য, রাহুলের মূল কাজ হল ভোট প্রচারের অভিমুখ হিন্দুত্ব, দেশভক্তি থেকে ঘুরিয়ে বেকারত্ব, চাষিদের দুর্দশার দিকে নিয়ে যাওয়া। এ দিন প্রকাশিত ইস্তাহারের লক্ষ্য সেটাই। সেখানে যুব সমাজের কর্মসংস্থানের সমস্যা এবং কৃষকদের সঙ্কট কাটানোর দিশা দেখিয়েছেন তিনি। সেই সঙ্গে তুরুপের তাসের মতো ‘ন্যায়’ প্রকল্প তো রয়েছেই।
প্রিয়ঙ্কা পরে বলেন, ‘‘এই ইস্তাহার সকলের পড়া উচিত। বিশেষ করে যুবক ও প্রথমবার ভোটারদের। কারণ, এ বারের ভোট সাধারণ মানুষের সঙ্গে জড়িত আসল বিষয়ের উপরেই হওয়া উচিত।’’ প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী এবং ইস্তাহারের রূপকার পি চিদম্বরমেরও একই মত।
প্রধান প্রতিশ্রুতি
• গরিবতম ২০ শতাংশ পরিবারের জন্য বছরে
৭২ হাজার টাকা
• ২০৩০-এর মধ্যে সমস্ত দারিদ্র দূরীকরণ
• ২০২০-র মার্চের মধ্যে কেন্দ্রীয় সরকারের
৪ লক্ষ পদ পূরণ
• গ্রাম পঞ্চায়েত ও পুরসভায় ১০ লক্ষ সেবা মিত্র
• এমজিএনআরজিইএ-তে ন্যূনতম কাজের গ্যারান্টি ১০০ দিন থেকে বাড়িয়ে ১৫০ দিন
• কৃষির জন্য আলাদা বাজেট
• কৃষি ঋণ শোধ না করতে পারা ফৌজদারি অপরাধ হবে না
• শিক্ষায় জিডিপি-র ৬ শতাংশ ব্যয়
• সকলের জন্য স্বাস্থ্য পরিষেবার অধিকার আইন চালু হবে
• সরকারি হাসপাতাল থেকেই উচ্চমানের স্বাস্থ্য পরিষেবা
• নতুন ক্ষুদ্র ও ছোট শিল্পের জন্য প্রথম তিন বছর কোনও লাইসেন্স নিতে হবে না, ন্যূনতম বেতন ও কর মেটালেই চলবে
রাহুল শোনালেন হাতের পাঁচ আঙুলের কথা। যে ‘হাত’ কংগ্রেসের প্রতীক। ইস্তাহারে পাঁচ প্রধান অস্ত্র (১) ন্যায়— গরিবদের বছরে ৭২ হাজার টাকা, (২) রোজগারের পথ বাড়ানো, (৩) কৃষি সঙ্কট দূর করা, (৪) শিক্ষায় সকলের সুযোগ, বাজেট বৃদ্ধি, (৫) সকলের জন্য স্বাস্থ্যের অধিকার। কংগ্রেস সূত্রের মতে, এই সার্বিক বৃদ্ধির কথা বলার লক্ষ্য, দল যে সমাজের সব চেয়ে শেষের সারিতে থাকা মানুষটিকেও উন্নয়নের ভাগিদার করতে চায়, সেই বার্তা দেওয়া।
অরুণ জেটলি অবশ্য বলছেন, ‘‘এই ইস্তাহার রূপায়ণ সম্ভবই নয়।’’ এমন আক্রমণ আসবে জেনেই রাহুল বলে রেখেছেন, ‘‘বিজেপির পক্ষে সম্ভব নয়। আমাদের পক্ষে সম্ভব। নোটবন্দি, জিএসটির পর অর্থনীতি থমকে গিয়েছে। এই ইস্তাহার রূপায়ণ হলে চাকা ফের গড়াবে। আর প্রধানমন্ত্রীর মতো আমি রোজ মিথ্যা বলি না। যেটুকু সম্ভব, তা-ই বলা হয়েছে।’’
মোদীর মিথ্যা আর কংগ্রেসের ইস্তাহারের বাস্তবতার ব্যাখ্যাও এ দিন দিয়েছেন রাহুল। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন প্রত্যেকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ১৫ লক্ষ টাকা দেবেন। মিথ্যা। কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে দেবে ৭২ হাজার। এতে ক্রয়ক্ষমতা বাড়বে, আর্থিক বৃদ্ধি হবে। দুই, প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন বছরে ২ কোটি চাকরি। ফের মিথ্যা। ২২ লক্ষ সরকারি খালি পদ ভরে দেওয়া হবে। একশো দিনের কাজ বাড়িয়ে দেড়শো দিনের নিশ্চয়তা আনা হবে। যেটিকে ‘বোগাস’ বলেছিলেন মোদী। তিন, কৃষি-ঋণ মাফ থেকে ঋণ-মুক্তির দিকে যাওয়া হবে। পৃথক কৃষক বাজেট। কৃষকরা ঋণ না-মেটালে আর ফৌজদারি অপরাধ নয়।
চার, শিক্ষা বরাদ্দ বাড়িয়ে ৬% হবে। পাঁচ, প্রধানমন্ত্রী জনতার টাকা নিয়ে স্বাস্থ্যবিমার মাধ্যমে ১০-১৫ জন শিল্পপতিকে দেন। কংগ্রেস বেসরকারি ব্যবস্থায় ভরসা না করে সরকারি ব্যবস্থা মজবুত করবে। গরিবকে উচ্চমানের চিকিৎসা দেবে। আর সেই সঙ্গেই মোদীর হিন্দু-আক্রমণের জবাবে রাহুল বললেন, ‘‘সব লোক হিন্দু। কিন্তু দেশের কাছে আসল বিষয় বেকারত্ব, কৃষকরা আত্মহত্যা করছেন। প্রধানমন্ত্রী ‘অচ্ছে দিন’ আনার কথা বলেছিলেন। কিন্তু চৌকিদার চুরি করেছেন। আমরা গরিবের ঘরে ৭২ হাজার টাকা দেব। তাতে প্রধানমন্ত্রী ধাক্কা খেয়েছেন, ভয়ে আছেন, লুকোচ্ছেন। কিন্তু পালাতে পারবেন না। চ্যালেঞ্জ করছি, আসুন না বিতর্ক হয়ে যাক। আপনি ভয় পেতে পারেন, কিন্তু ভোটে হারাব, দেখে নিন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy