ছবি: সংগৃহীত।
ফোন তুলতেই অপর প্রান্ত থেকে অভিযোগ উড়ে এল, ‘‘আমি অতিরিক্ত আয়কর দিয়ে বসে আছি। এখনও টাকা ফেরত পাচ্ছি না।’’
ফের একটি ফোন এল কন্ট্রোল রুমে। অফিসার ফোন তুলে ‘হ্যালো’ বলতেই ও-পারের কণ্ঠ বলল, ‘‘জিএসটি কোথায় কী ভাবে জমা দেব বলতে পারবেন?’’
এখানেও শেষ নয়। আয়কর ভবনের কালো টাকার খোঁজ সংক্রান্ত কন্ট্রোল রুমে ফোন করে জনৈক নাগরিক বলেছেন, ‘‘আমাকে গুলি করে মেরে দেবে বলছে! কী করব?’’
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
এমন নানান ফোন পেয়ে অফিসারেরা স্বগতোক্তির করছেন, ‘‘আ মোলো যা! এ তো অদ্ভুত জ্বালা! কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে কালো টাকা নিয়ে। আর এ সব উদ্ভট ফোন আসছে!’’
১০ মার্চ লোকসভা নির্বাচন ঘোষণার পরে ‘মডেল কোড অব কনডাক্ট’ (নির্বাচনী আচরণবিধি) চালু হয়। নির্বাচন কমিশন জানায়, কোনও ব্যক্তি এক লপ্তে ১০ লক্ষ টাকার বেশি নিয়ে ঘুরলে তাঁর সম্পর্কে তথ্য দিন আয়কর দফতরকে। এমনকি, কেউ ব্যাঙ্ক থেকে ১০ লক্ষ টাকার বেশি তুললেও যেন আয়কর কর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। তার পরেই কলকাতা-সহ সারা দেশে এ ব্যাপারে বিশেষ কন্ট্রোল রুম খোলা হয়। আয়কর দফতর সেই কন্ট্রোল রুমের ফোন নম্বর দিয়ে সাধারণ মানুষের কাছে বেআইনি টাকার লেনদেনের খবর দিতে আর্জি জানিয়েছে।
আয়কর দফতর সূত্রের খবর, গত এক মাসে সাধারণ মানুষদের কাছ থেকে মেরেকেটে শতাধিক ফোন এসেছে আয়কর দফতরের কন্ট্রোল রুমে। যার ৯০ শতাংশই কালো টাকা বাদ দিয়ে অন্য নানান বিষয় নিয়ে। বাকি ১০ শতাংশ ফোনের মধ্যে এত দিনে একটি মাত্র নির্দিষ্ট তথ্য নিয়ে ফোন এসেছে। সেখানে বলা হয়েছিল, অমুক দিন সন্ধ্যা সাতটায় অমুক রাস্তায় একটি অমুক রঙের গাড়ি আসবে। সেখানে টাকা রাখা আছে। সেই তথ্য পেয়ে সে দিন বিকেল পাঁচটা থেকে রাত ন’টা পর্যন্ত অফিসারেরা সেখানে নজরদারি চালান। কিন্তু সেই গাড়ি আসেনি।
আয়কর সূত্রের দাবি, একটি ফোনও নির্দিষ্ট করে কোনও রাজনৈতিক দল বা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আসেনি। তার বদলে নিজেদের নানান প্রশ্ন বা কোনও শত্রুকে হয়রান করার ছুতো খুঁজছেন ‘অভিযোগকারীরা’।
আয়কর কর্তাদের কথায়, ‘‘এ ভাবে আলেয়ার পিছনে ছুটে বেড়ানো সম্ভব নয়।’’ তাঁরা জানান, কোনও ব্যক্তির নামে এই ধরণের অভিযোগ এলেই সঙ্গে সঙ্গে তাঁর বাড়িতে গিয়ে তল্লাশি করা যায় না। অভিযুক্ত ব্যক্তির উপরে কিছু দিন গোপনে নজরদারি চালানোর পরে যদি আয়কর অফিসারেরা মনে করেন যে তাঁর বাড়ি বা অফিসে গিয়ে তল্লাশি করলে টাকা পাওয়া যাবে তা হলে সেই রিপোর্ট দিল্লিতে পাঠানো হয়। তার পরেই তল্লাশি সংক্রান্ত সমন জারি করা হয়।
আয়কর দফতর সূত্রের খবর, ১০ মার্চের পরে এখনও পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গ থেকে ১৮.২৫ কোটি টাকা নগদ বাজেয়াপ্ত হয়েছে। তার মধ্যে বড়বাজারে হাওয়ালা কারবারিদের কাছ থেকে পাওয়া একটি বড় অংশ রয়েছে। সোনা বাজেয়াপ্ত হয়েছে প্রায় সমমূল্যের। কিন্তু সেগুলির ক্ষেত্রেও নির্বাচন বা রাজনৈতিক দলের যোগাযোগ খুঁজে পাওয়া যায়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy