Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
general-election-2019-journalist

ফাটা কপালেই খুলবে কপাল, আশায় তারুর

পুরো নাম কুম্মানাম রাজশেখরন। আগে কেরল বিজেপির রাজ্য সভাপতি ছিলেন। মোদী-অমিত শাহের বিশেষ পরিকল্পনায় মিজোরামের রাজ্যপালের পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে সোজা তিরুঅনন্তপুরমে এসে পদ্মচিহ্নে প্রার্থী।

মাথায় ব্যান্ডেজ বেঁধে প্রচারে শশী তারুর। নিজস্ব চিত্র

মাথায় ব্যান্ডেজ বেঁধে প্রচারে শশী তারুর। নিজস্ব চিত্র

সন্দীপন চক্রবর্তী
তিরুঅনন্তপুরম শেষ আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০১৯ ০৩:১০
Share: Save:

কুম্মানাম, কুম্মানাম, কুমান্নাম! শহর জুড়ে মাইকে তারস্বরে একটাই নাম। চায়ের দোকনি থেকে অটো-চালক, মুখে মুখে ফিরছে— এ বার মনে হচ্ছে কুম্মানামই বাজিমাত করবেন! দু’দিন আগে নরেন্দ্র মোদী এসে তাঁর হাত তুলে ধরে বলে গিয়েছেন, এ বার কুম্মানামকে চাই।

পুরো নাম কুম্মানাম রাজশেখরন। আগে কেরল বিজেপির রাজ্য সভাপতি ছিলেন। মোদী-অমিত শাহের বিশেষ পরিকল্পনায় মিজোরামের রাজ্যপালের পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে সোজা তিরুঅনন্তপুরমে এসে পদ্মচিহ্নে প্রার্থী। রাজভবন থেকে বার করে ভোটের ময়দানে নামিয়ে তাঁকে জেতানোর জন্য বিজেপি এবং সঙ্ঘ দৃশ্যতই মরিয়া। সাদা দাড়িতে আঙুল চালাতে চালাতে স্মিত হেসে রাজশেখরন বলছেন, ‘‘তিরুঅনন্তপুরমের সঙ্গে এখানকার সাংসদের মধুচন্দ্রিমা শেষ! এ বার এখানে মোদী।’’

সাংসদের কপাল তা হলে এ বার খারাপ? পাঁচ দিন আগে সে কপালের উপরে ৯টা সেলাই পড়েছে। ব্যান্ডেজ আড়াল করে মালয়ালি ‘মুন্ডু’ তিন-ফেরতা করে কপালের উপরে বাঁধা। এক গাল হেসে সাংসদ কিন্তু বলছেন, ‘‘না, না! কপালের জোর এ বারই তো বুঝছি। মন্দিরে ‘তুলাভরম’ করতে গিয়ে দাঁড়িপাল্লার ১০ কেজির রডটা কপালে পড়লে অন্ধ হয়ে যেতাম। মাথার পিছনে লাগলে মস্তিষ্ক চেপ্টে যেত। কপালের উপর দিকে মাথায় পড়েছে বলে বেঁচে গিয়েছি।’’ সঙ্গে জুড়ছেন, ‘‘বেঁচে যখন গিয়েছি, আসনটাও বাঁচিয়ে দেব!’’ আবার গালভরা হাসি।

ক্রেপ ব্যান্ডেজ, ব্যথা কমানোর ওষুধ, স্প্রে-র একটা বাক্স উঠে গেল গাড়িতে। হাত ধরে ভিতরে টেনে নিলেন সাংসদ। সময় বাঁচাতে তাঁর ‘পরিয়াদানম’ (পরিক্রমা)-এ যাওয়ার পথেই কথা হবে। জে কে নগরের মধ্যে দিয়ে গাড়ি ছুটছে। সামনের আসন থেকে রাষ্ট্রপুঞ্জের প্রাক্তন আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল এবং প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বলছেন, ‘‘আগের ভোটটা আরও কঠিন ছিল, জানেন তো। কেন্দ্রে ও রাজ্যে, দু’জায়গাতেই তখন কংগ্রেসের সরকার। প্রতিষ্ঠান-বিরোধিতার সঙ্গেই মোদী-হাওয়া। আর আমার চরিত্র হননের জন্য ব্যক্তিগত আক্রমণের পথ বেছে নিয়েছিল ওরা। এখন পরিস্থিতি তার চেয়ে ভাল।’’

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

গত লোকসভা ভোটের আগেই দিল্লির হোটেলে রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছিল সুনন্দা পুষ্করের। স্ত্রীর মৃত্যু ঘটানোর দায়ে তৎকালীন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে ক্ষমতায় এসে জেলে ঢোকাবেন, বলতেন মোদী। তারও আগে সুনন্দার প্রতি ইঙ্গিত করেই বলতেন, ‘পচাশ করোড় কা গার্লফ্রেন্ড’। পিছন থেকে মনে করিয়ে দিলেও পিছনে আর তাকাতে চান না সাংসদ। ‘‘ও সব থাক। লেট আস কিপ দ্য ফন্ড মেমোরিজ।’’

উল্টো দিক থেকে রোড-শো করতে করতে আসছিলেন এলডিএফের প্রার্থী সি দিবাকরন। রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী এবং সিপিআই বিধায়কও এ বার রাজধানী শহরে পাশা উল্টে দেবেন বলে আত্মবিশ্বাসী। প্রতিদ্বন্দ্বীকে দেখে গাড়ি থামিয়ে সৌজন্য বিনিময় করলেন সাংসদ। আবার চলতে চলতে বলা শুরু হল, ‘‘বামেদের সঙ্গে আমাদের লড়াইটা রাজনৈতিক। বিজেপি-আরএসএস রাজনীতিতে কিছু করতে না পেরে সাম্প্রদায়িক তাস নিয়ে আসছে। শবরীমালা নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে, আমার কিছু বিবৃতি বিকৃত করেছে। কিন্তু এই নোংরা খেলা জিতবে না! তৃতীয় হবে ওরা।’’ রাহুল গাঁধী ওয়েনাডে প্রার্থী হয়েছেন মানে কেরলের কোনও সাংসদকে দেশের প্রধানমন্ত্রী করার সুবর্ণ সুযোগ এসেছে, মনে করাচ্ছেন সে কথাও।

কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্সের স্নাতক। একটু আগেও নির্বাচনী কার্যালয় এবং বাড়ির ড্রয়িং টেবিলে বাংলায় ঠাট্টা-মশকরা হয়েছে। দুই ছেলে ইশান আর কণিষ্ক নিউ ইয়র্ক এবং ওয়াশিংটনে প্রবাসে। সাংসদ হিসেবে ১০ বছর, না তার আগের কূটনীতিকের জীবনটাই ভাল ছিল? এঞ্চাক্কল পৌঁছে গাড়ি থেমে গিয়েছে। গাড়ি ঘিরে ধরে হইহইয়ের মধ্যে তিনি বলছেন, ‘‘এই প্রশ্নটা নিজেকে করিনি কখনও! যে কাজে যখন থেকেছি, মন দিয়ে করেছি। কলকাতা গিয়ে এ সব নিয়ে না হয় আরও আড্ডা দেব!’’

রাস্তার উল্টো দিকে সাজানো রথ প্রস্তত। ‘পরিয়াদানম’ আবার শুরু হবে। মাথা বাঁচিয়ে রথের পেটের ভিতর দিয়ে গলে গেলেন শশী তারুর। হাত বুকের কাছে, মুখে ক্লান্তিজড়ানো হাসি— ‘‘উইশ মি লাক!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE