মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও রাহুল গাঁধী। —ফাইল চিত্র
তৃণমূলের এনডিএ-অতীত মনে করিয়ে দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জবাব দিলেন রাহুল গাঁধী। বামেদের বিরুদ্ধে এ বার একটি শব্দও শোনা গেল না তাঁর মুখে। বরং, সিপিএমের সুরেই মমতাকে পাল্টা আক্রমণে গেলেন কংগ্রেস সভাপতি।
রায়গঞ্জ লোকসভা কেন্দ্রে প্রচারে এসে মঙ্গলবার তৃণমূল নেত্রী অভিযোগ করেছিলেন, বিজেপির বিরুদ্ধে কংগ্রেস ‘ভাল ভাবে লড়াই’ করছে না। বলেছিলেন, কংগ্রেস এবং সিপিএম নিজেরা জিতবে না। বরং, তাদের মদতে বিজেপির শক্তি বাড়বে। সেই একই কেন্দ্রের করণদিঘিতে দাঁড়িয়ে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কংগ্রেস সভাপতি পাল্টা দাবি করলেন, বিজেপির বিরুদ্ধে সারা দেশে মূল লড়াইটা তাঁরাই লড়ছেন। রাহুলের কথায়, ‘‘নরেন্দ্র মোদী এখন ঘাবড়ে গিয়েছেন! দেশের মানুষের চোখে চোখ রেখে কথা বলতে পারছেন না। বক্তৃতা করার সময়ে উপরে-নীচে, ডান-বাম দিকে দেখছেন। মোদীকে এই অবস্থায় এনে দাঁড় করিয়েছে কংগ্রেস। তাঁকে হারাবেও কংগ্রেস।’’
লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের ইস্তাহারের প্রতিশ্রুতি এবং গরিব মানুষের রোজগার নিশ্চিত করার প্রকল্প ব্যাখ্যা করার পরে রাহুল বুধবার মমতার অভিযোগের প্রসঙ্গ সরাসরিই তুলেছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘মমতাজি বলছেন, বিজেপির সঙ্গে ঠিকমতো লড়াই কংগ্রেস করছে না। আচ্ছা! তা হলে রাফালের দুর্নীতি কে ধরল? চৌকিদারকে চোর কে বানাল? বিচারের দরজায় মোদীর সরকারকে কে দাঁড় করিয়েছে? অপেক্ষা করুন, কেন্দ্রের সরকারে কংগ্রেস আসার পরে সব চুরির তদন্ত হবে। চোরেদের শাস্তি হবে।’’
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
বর্তমানের লড়াইয়ের কথা বলে রাহুল চলে গিয়েছেন অতীতের প্রসঙ্গে। প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘কংগ্রেস কখনও ৭০ বছরে বিজেপির সঙ্গে কোনও জোট বেঁধেছে? কোনও রাজ্যে কংগ্রেস বিজেপির সঙ্গে জোট করেছে? কিন্তু মমতাজি বিজেপির সঙ্গে জোট করেছিলেন।’’ নাগর মাঠে হাজির কংগ্রেস জনতা সমস্বরে তাঁকে সমর্থন জানিয়েছে।
এনডিএ-র শরিক হিসেবে তৃণমূলের সঙ্গে জোট বেঁধে বিজেপি লোকসভা ভোটে প্রথমে দমদম ও পরে কৃষ্ণনগর আসন জিতে বাংলায় খাতা খুলেছিল। মমতাও অটলবিহারী বাজপেয়ীর কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় যোগ দিয়েছিলেন। এত দিন এই তথ্য তুলে ধরে তৃণমূলকে আক্রমণ করত সিপিএম। এ বার স্বয়ং রাহুল সেই কথা বলায় গোটা বিষয়টি অন্য মাত্রা পেল।
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্র ছাড়াও করণদিঘির সভা-মঞ্চে হাজির ছিলেন রায়গঞ্জের প্রার্থী দীপা দাশমুন্সি, দার্জিলিঙের প্রার্থী শঙ্কর মালাকার ও বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান। শেষের তিন জনই বামেদের সঙ্গে জোটের বিরোধিতায় দলের অন্দরে সরব হয়েছিলেন। তার উপরে রায়গঞ্জ আসন এখন সিপিএমেরই দখলে। কিন্তু এ সব সত্ত্বেও রাহুল এ দিন বামেদের
বিপক্ষে কোনও কথাই বলেননি। কেরলের ওয়েনাডে গিয়ে রাহুল বলেছিলেন, লড়াই এখন বিজেপির বিরুদ্ধে। তাই বামেদের বিরুদ্ধে তিনি কোনও কথা বলবেন না। রায়গঞ্জে রাহুলকে সেই নীতিই মেনে চলতে দেখে সিপিএম প্রার্থী মহম্মদ সেলিমের মন্তব্য, ‘‘বিজেপির বিরুদ্ধে এখানে বামেদের যে লড়াই হচ্ছে, সেটা কংগ্রেস সভাপতিও জানেন।’’ ঘরোয়া আলোচনায় সিপিএম নেতারা এমনও বলছেন, দীপাদের ‘চাপে’ রাহুল ‘বাধ্য’ হয়েছেন আলাদা লড়তে। জোট থাকলে উত্তর দিনাজপুর, মালদহ, মুর্শিদাবাদে অন্তত বিজেপিকে নিয়ে ভাবনা থাকত না!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy