ছবি: সংগৃহীত।
বিপুল পরিমাণ নগদ উদ্ধারের প্রেক্ষিতে তামিলনাড়ুর ভেলোর কেন্দ্রে ভোট আপাতত বাতিল করে দিল নির্বাচন কমিশন। বৃহস্পতিবার, লোকসভা ভোটের দ্বিতীয় দফায় ভোট হওয়ার কথা ছিল রাজ্যের ভেলোর-সহ ৩৯টি কেন্দ্রে। স্বাধীন ভারতে সম্ভবত এই প্রথম টাকা ছড়িয়ে ভোটারদের প্রভাবিত করার অভিযোগের জেরে কোনও লোকসভা কেন্দ্রে ভোট বাতিল হল। ২০১৭ সালে চেন্নাইয়ের আর কে নগর বিধানসভা কেন্দ্রে এমনই অভিযোগ ওঠায় ভোট বাতিল করেছিল কমিশন। এ দিনই লোকসভা নির্বাচনে তামিলনাড়ুতে টাকা ছড়িয়ে ভোটারদের প্রভাবিত করার মামলায় কমিশনের জবাব চেয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।
৩০ মার্চ নির্বাচনে হিসেব-বহির্ভূত অর্থ ব্যবহারের অভিযোগ পেয়ে ভেলোরে প্রবীণ ডিএমকে নেতা দুরাই মুরুগান ও তাঁর ছেলে কাথির আনন্দের বাড়িতে হানা দেয় আয়কর দফতর। সেখান থেকে হিসেব-বহির্ভূত ১০ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা পাওয়া গিয়েছে। তার পরে এক ডিএমকে নেতার সিমেন্টের গুদাম থেকে ১১ কোটি ৫৩ লক্ষ টাকা উদ্ধার হয়েছে বলে দাবি করেন আয়কর আধিকারিকেরা। আয়কর দফতর জানায়, বেশ কিছু দিন ধরেই ওই অবৈধ লেনদেনের উপরে নজর রাখছিল তারা। ওই টাকার খোঁজ পেতে হানাও দেয় রাজ্য পুলিশ। কিন্তু তাদের চোখ এড়িয়ে ওই টাকা এক ডিএমকে নেতার সিমেন্ট গোডাউনে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কয়েক দিন ধরে আয়কর দফতরকে অভিযান চালাতে বাধা দিয়েছে ‘রাজনৈতিক কর্মীরা’। উদ্ধার হওয়া টাকার মধ্যে ১০.৫ কোটি রয়েছে ২০০ টাকার নোটে। সেগুলি কানাড়া ব্যাঙ্কের স্থানীয় একটি শাখা থেকেই আনা। আয়কর দফতর জানিয়েছে, ওই ব্যাঙ্কের আঞ্চলিক দফতরে কর্মরত এক সিনিয়র ম্যানেজার ওই নির্দিষ্ট শাখায় বিপুল পরিমাণ ২০০ টাকার নোট পৌঁছনোর ব্যবস্থা করেছিলেন। পরে তাঁরই নির্দেশে ওই অর্থ এক ডিএমকে কর্মীকে দেওয়া হয়। সেই কর্মী আয়কর রিটার্নই জমা দেন না। কাথির আনন্দ এবং কানাড়া ব্যাঙ্কের ওই সিনিয়র ম্যানেজারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করা হয়েছে।
আয়করের রিপোর্টের ভিত্তিতে ভেলোরের ডিএমকে প্রার্থী কাথির আনন্দ এবং দুই ডিএমকে কর্মী শ্রীনিবাসন ও দামোদরনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে পুলিশ। জনপ্রতিনিধিত্ব আইনের অধীনে হলফনামায় ‘ভুল তথ্য’ দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে কাথিরের বিরুদ্ধে। শ্রীনিবাসন ও দামোদরনের বিরুদ্ধে ঘুষ দেওয়ার অভিযোগ।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
নগদ উদ্ধারের প্রেক্ষিতে রাষ্ট্রপতির কাছে ভেলোরে ভোট বাতিলের সুপারিশ করে কমিশন। আজ তা মেনে নিয়েছেন রাষ্ট্রপতি। এ দিনই সন্ধ্যায় ডিএমকে নেত্রী ও রাজ্যের থুট্টুকুড়ি কেন্দ্রের প্রার্থী কানিমোঝির বাড়িতে হানা দিয়েছে আয়কর দফতর। পরে তারা জানায়, এই তল্লাশি চালানো হয়েছে ভুল খবরের ভিত্তিতে।
বিষয়টি নিয়ে সরাসরি নরেন্দ্র মোদী সরকারকে আক্রমণ করেছে ডিএমকে। দলের সভাপতি ও কানিমোঝির ভাই এম কে স্ট্যালিনের দাবি, ‘‘মোদী সরকার নির্বাচন কমিশন, আয়কর দফতর, ইডি, সিবিআইকে ব্যবহার করে ভোট প্রক্রিয়া ভন্ডুল করে দিতে চাইছে।’’ দুরাই মুরুগানের দাবি, ‘‘আমরা কিছুই লুকোইনি। কিছু নেতার আমাদের সঙ্গে রাজনৈতিক মঞ্চে লড়াইয়ের ক্ষমতা নেই। তারাই এই ষড়যন্ত্র করেছে।’’
এডিএমকে-র তরফে দাবি করা হয়েছে, কাথির আনন্দের প্রার্থীপদ বাতিল করা হোক। ভোট বাতিল করার সিদ্ধান্ত গ্রহণযোগ্য নয়।
ঘটনাচক্রে এ দিনই তামিলনাড়ুতে লোকসভা নির্বাচনে টাকা ছড়িয়ে ভোটারদের প্রভাবিত করার চেষ্টা নিয়ে শুনানি ছিল সুপ্রিম কোর্টে। এ নিয়ে শীর্ষ আদালতে মামলা করেছেন কে কে রমেশ নামে এক ব্যক্তি। আর্জিতে তিনি জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত রাজ্যে ৭৮.১২ কোটি টাকা আটক করেছে কমিশন। রমেশের আর্জি, টাকা ছড়ানো বা নির্বাচনী বিধিভঙ্গের জন্য কোনও কেন্দ্রে ভোট পিছোনো বা বাতিল করা হলে ভোটের জন্য সরকার যে বিপুল অর্থ খরচ করে তা সংশ্লিষ্ট প্রার্থী বা দলের প্রধানের কাছ থেকে আদায় করা হোক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy