Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
general-election-2019-national

টানা ২৮ দিনের লড়াই শেষে ইভিএম জমা ভোটকর্মীদের

জারায় প্রথম দফার ভোটে গোলমালের জেরে ২৭ এপ্রিল ফের ভোটগ্রহণের দিন ঠিক হয়। চাংলাংয়ের এসডিপিও তাসি দারাং জানান, তিনি এলাকায় একেবারেই নতুন।

স্ট্রংরুমের পথে ভোটকর্মীরা। নিজস্ব চিত্র

স্ট্রংরুমের পথে ভোটকর্মীরা। নিজস্ব চিত্র

রাজীবাক্ষ রক্ষিত
গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ২২ মে ২০১৯ ০২:৪৫
Share: Save:

পা রক্তাক্ত, অনাহারে, অর্ধাহারে ধুঁকছে ৪১টি ক্লান্ত দেহ। কিন্তু কর্তব্যে তাঁরা অবিচল।

অরুণাচলের প্রত্যন্ত জারা এলাকার একটি মাত্র বুথে ভোট করাতে গিয়ে ২৮ দিন পরে, গত কাল ফিরলেন ভোটকর্মী ও নিরাপত্তারক্ষীদের দলটি। টানা বৃষ্টির জেরে সংযোগ-বিচ্ছিন্ন ওই পার্বত্য এলাকা থেকে ভোটকর্মীদের ফেরত আনতে পারেনি হেলিকপ্টার। সড়ক পথে ইভিএম ছিনিয়ে নিতে অপেক্ষায় ছিল সশস্ত্র দুষ্কৃতীর দল। তাই পায়ে হেঁটে আটটি পাহাড় ডিঙিয়ে ইভিএম স্ট্রং রুমে পৌঁছে দিলেন এক এসডিপিও ও দু’জন সেক্টর ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বাধীন দলটি।

জারায় প্রথম দফার ভোটে গোলমালের জেরে ২৭ এপ্রিল ফের ভোটগ্রহণের দিন ঠিক হয়। চাংলাংয়ের এসডিপিও তাসি দারাং জানান, তিনি এলাকায় একেবারেই নতুন। আগাম প্রস্তুতি ছাড়াই ২২ এপ্রিল সন্ধ্যায় তাঁদের বেরিয়ে পড়তে হয়। পরদিন কলোরিয়াং হেলিপ্যাড থেকে দু’দফায় হেলিকপ্টারে তাঁদের ৪২ জনকে পিপসোরাংয়ে নামিয়ে দেওয়া হয়। ২৫ এপ্রিল সেখান থেকে ৯ ঘণ্টা হেঁটে, তিনটি পাহাড় পার করে তাঁরা জারার বুথে পৌঁছন। ২৭ এপ্রিল ভোটপর্বও মেটে শান্তিতে। কিন্তু সমস্যা শুরু তারপরেই।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, তাঁদের উপরে হামলা চালিয়ে ইভিএম ছিনতাই করতে টালি ও পারসি পারলোর সড়কপথে অপেক্ষা করছে একটি রাজনৈতিক দলের দুষ্কৃতীরা। তারা রাস্তায় থাকা সাতটি ঝুলন্ত সেতুও বিছিন্ন করে দিয়েছে। এ দিকে, টানা বৃষ্টিতে হেলিকপ্টারও আসতে পারছে না। সঙ্গে থাকা সীমিত খাবারেও টান পড়ে। দারাং জানান, পিপসোরাংয়ে দোকানের বালাই নেই। নেই টাকার লেনদেন। নুনের প্যাকেট কিনতে গেলে দাম পড়ে আড়াইশো টাকা। টানা ২০ দিন ধরে বৃষ্টি চলতে থাকে। খাবারের অভাবে গাছের পাতা সেদ্ধ করে খেতে হচ্ছিল তাঁদের। সেক্টর ম্যাজিস্ট্রেট সোপিং ও সাংপিওরা, প্রিসাইডিং অফিসার নাংগ্রাম, পোলিং অফিসার টামচি, চুংগপি সিদ্ধান্ত নেন, পাহাড় ও জঙ্গলের পথেই হাঁটা শুরু করতে হবে। স্থানীয় গ্রামবাসীদের পথ প্রদর্শক করে ১৬ মে থেকে হাঁটা শুরু হয়। কিছুদূর হাঁটার পরে ফিরে যান অয়্যারলেস অপারেটর ললিত কুমার। জানান, তিনি কপ্টারের অপেক্ষাতেই পিপসোরাংয়ে থাকবেন।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

দারাং জানান, পথে ৮টি পাহাড় টপকাতে হয়েছে তাঁদের। প্রতিদিন রাত তিনটেয় হাঁটা শুরু হতো, পরের গন্তব্যে পৌঁছতেন মাঝ রাতে। রাস্তায় সঙ্গী ছিল বৃষ্টি, জোঁক আর পাহাড়ি ডামডুম মাছি। শেষ পর্যন্ত তাঁরা জিক্কে গ্রামে পৌঁছন। সেখানেই অপেক্ষায় ছিলেন ডিএসপি কামদাম সিকম। গাড়িতে দাপোরিজো নিয়ে যাওয়া হয় সকলকে। সেখান থেকে কনভয়ের সুরক্ষায় ইভিএম-সহ গোটা দলটিকে নামনি সুবনসিরি জেলার জিরোয় নিয়ে আসা হয়।

শেষ পর্যন্ত ভোটের ২৩ দিন পরে, গত কাল স্ট্রং-রুমে লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচনের দু’টি ইভিএম জমা দিয়েছেন তাঁরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE