Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

নজরদার বিমান গেল কোথায়, সমুদ্র নিরুত্তর

লোকশ্রুতি বলে, সমুদ্র নেয় না কিছুই। সবই ফিরিয়ে দেয়। কিন্তু মালয়েশিয়ার যাত্রিবাহী এমএইচ-৩৭০ বিমানকে সে এখনও পর্যন্ত ফিরিয়ে দেয়নি। মাঝ আকাশ থেকে আচমকাই রহস্যজনক ভাবে হারিয়ে যায় বিমানটি। অনেক খোঁজাখুঁজির পরেও তার কোনও ভগ্নাংশই পাওয়া যায়নি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ জুন ২০১৫ ০৩:২৫
Share: Save:

লোকশ্রুতি বলে, সমুদ্র নেয় না কিছুই। সবই ফিরিয়ে দেয়। কিন্তু মালয়েশিয়ার যাত্রিবাহী এমএইচ-৩৭০ বিমানকে সে এখনও পর্যন্ত ফিরিয়ে দেয়নি। মাঝ আকাশ থেকে আচমকাই রহস্যজনক ভাবে হারিয়ে যায় বিমানটি। অনেক খোঁজাখুঁজির পরেও তার কোনও ভগ্নাংশই পাওয়া যায়নি।

তামিলনাড়ু উপকূলের কাছে সোমবার রাতে উপকূলরক্ষী বাহিনীর একটি টহলদার ডর্নিয়ের বিমানের অন্তর্ধান রহস্যে সেই মালয়েশিয়ান বিমান দুর্ঘটনার ছায়াই দেখতে পাচ্ছেন বাহিনীর অনেকে। বিমানটি হারিয়ে যাওয়ার পরে ৪৮ ঘণ্টা কেটে গিয়েছে। বায়ুসেনা, নৌসেনা আর উপকূলরক্ষী বাহিনী সমুদ্র তোলপাড় করে খুঁজে চলেছে। কিন্তু সামান্যতম চিহ্নও মেলেনি সেই বিমানের। খোঁজ নেই আরোহী তিন অফিসারেরও।

উঠে আসছে খারাপ আবহাওয়ার তত্ত্ব। উপকূলরক্ষী বাহিনী সূত্রের খবর, সোমবার চেন্নাই থেকে ওড়ার আগে পাইলটকে জানানো হয়েছিল, বঙ্গোপসাগরের আবহাওয়া অশান্ত। তবু সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ বিমান নিয়ে উড়েছিলেন ওই বিমানের পাইলট, ডেপুটি কম্যান্ডান্ট বিদ্যাসাগর। সঙ্গে ছিলেন সহকারী পাইলট, ডেপুটি কম্যান্ডান্ট সুভাষ সুরেশ এবং উপকূলরক্ষী বাহিনীর অবজার্ভার বা নজরদার এন কে সোনি।

উড়তে উড়তে হঠাৎ উধাও হয়ে যাওয়া ওই বিমানের খোঁজে সোমবার রাতে তল্লাশি শুরু হয়। কিন্তু বুধবার রাত পর্যন্ত বিমানের ধ্বংসাবশেষ বা পাইলট-সহ তিন অফিসারের কোনও হদিস মেলেনি। উপকূলরক্ষী বাহিনীর কলকাতা আঞ্চলিক দফতরের মুখপাত্র অভিনন্দন মিত্রের আশঙ্কা, ‘‘নিছক দুর্ঘটনা নয়। নিশ্চয়ই মারাত্মক কিছু ঘটে গিয়েছে!’’

সাগরের অশান্ত আবহাওয়া সত্ত্বেও পাইলটেরা উড়লেন কেন?

ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে উপকূলরক্ষী বাহিনীর একটি সূত্র জানাচ্ছে, জঙ্গি অনুপ্রবেশ ঠেকাতে কয়েক দিন পরেই তামিলনাড়ু উপকূলে বিভিন্ন নিরাপত্তা বাহিনীর মহড়া দেওয়ার কথা। সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গ উপকূলেও এই ধরনের মহড়া হয়েছে। তামিলনাড়ু উপকূলে মহড়ার প্রস্তুতি কেমন, তা খতিয়ে দেখতেই সন্ধ্যায় বিমান নিয়ে উড়েছিলেন ওই তিন অফিসার।

অশান্ত সাগরের উপরে উড়লে কতটা বিপদ হতে পারে?

অভিজ্ঞ বিমান-বিশেষজ্ঞেরা জানান, বিমানটি বঙ্গোপসাগরের উপরে উড়ছিল। গত দু’দিনে আরব সাগরের উপরে খারাপ আবহাওয়া থাকলেও বঙ্গোপসাগরের আবহাওয়া নিয়ে কোনও সতর্কবার্তা ছিল না। তা ছাড়া সমুদ্র উত্তাল থাকলেও আকাশে উড়তে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। এ ক্ষেত্রে বড় ধরনের কোনও যান্ত্রিক ত্রুটির আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। সে-ক্ষেত্রে সাগর অশান্ত থাকাকালীন বিমান ভেঙে পড়লে তা খুঁজে পাওয়া মুশকিল। তামিলনাড়ু ও আন্দামানে বর্ষা পৌঁছে যাওয়ায় সমুদ্র এখন উত্তাল। ফলে বিমানটি যদি ভেঙে পড়ে থাকে, যেখানে পড়েছে, ঢেউয়ের ধাক্কায় ধ্বংসাবশেষ হয়তো সেখান থেকে বহু দূরে চলে গিয়েছে।

উপকূলরক্ষী বাহিনীর এক কর্তা জানান, ওড়ার তিন ঘণ্টা পরেও তেমন সমস্যা হয়নি। কিন্তু রাত ৯টা নাগাদ বিমানটির সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তার পরেও বিমানের গতিবিধি দেখা যাচ্ছিল তিরুচিরাপল্লির রেডারে। ২৩ মিনিট ধরে সেই গতিবিধি নজরে এলেও তার সঙ্গে আর যোগাযোগ করা যায়নি। সোমবার রাত ৯টা ২৩ মিনিটে রেডার থেকেও উধাও হয়ে যায় বিমানটি। তার শেষ অবস্থান ছিল করাইকল উপকূলের কাছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE