Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

মমতা-কেজরীকে ভ্যাটের খোঁচা জেটলির

বাজেট পেশ শেষ হতেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অরবিন্দ কেজরীবালকে খোঁচা দিলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। তাঁর দাবি, নোট বাতিলের পরে আর্থিক লেনদেন অনেক বেশি স্বচ্ছ হয়েছে। দেশের অন্য রাজ্যে ভ্যাট সংগ্রহের হার ঊর্ধ্বমুখী। কিন্তু কেবল দিল্লি ও পশ্চিমবঙ্গে সেই সূচক নিম্নমুখী।

অনমিত্র সেনগুপ্ত ও জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়
নয়াদিল্লি ও কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০৩:৫৯
Share: Save:

বাজেট পেশ শেষ হতেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অরবিন্দ কেজরীবালকে খোঁচা দিলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। তাঁর দাবি, নোট বাতিলের পরে আর্থিক লেনদেন অনেক বেশি স্বচ্ছ হয়েছে। দেশের অন্য রাজ্যে ভ্যাট সংগ্রহের হার ঊর্ধ্বমুখী। কিন্তু কেবল দিল্লি ও পশ্চিমবঙ্গে সেই সূচক নিম্নমুখী। জেটলির মতে, প্রশাসনিক দক্ষতার অভাবেই ওই দুই সরকার ব্যবসা হারাচ্ছে। ফলে কমছে ভ্যাট সংগ্রহ।

জেটলি আজ পশ্চিমবঙ্গ বা দিল্লির সরকারকে কাঠগড়ায় তুলেছেন। কিন্তু জিএসটি পরিষদের গত বৈঠকে এই দুই রাজ্যের পাশাপাশি উত্তরপ্রদেশ, কেরলের অর্থমন্ত্রীরাও দাবি করেন যে নোট বাতিলের কারণে তাঁদের রাজ্যে ভ্যাট-বাবদ আয় কমে গিয়েছে। এমনকী কিছু বিজেপি শাসিত রাজ্যের অর্থমন্ত্রীরাও ওই দাবি তুলে সরব হয়েছিলেন। যদিও জানুয়ারি মাসের শুরুতে অর্থ মন্ত্রক রীতিমতো পরিসংখ্যান তুলে ধরে জানায়, নোট বাতিল সত্ত্বেও মহারাষ্ট্রের মতো শিল্পোন্নত রাজ্যে যথাক্রমে নভেম্বর ও ডিসেম্বরে ভ্যাট সংগ্রহ বেড়েছে ২৫.৯৯ শতাংশ ও ১৬.৭৩ শতাংশ। একই ভাবে ওই দুই মাসে তামিলনাড়ুতে সংগ্রহ বেড়েছে যথাক্রমে ৯.৭২ শতাংশ ও ১১ শতাংশ। অর্থ মন্ত্রক জানিয়েছে, ডিসেম্বর মাসে পশ্চিমবঙ্গে ভ্যাট সংগ্রহের হার কমে গিয়েছে প্রায় ৭.৮৪ শতাংশ।

যদিও কেন্দ্রের এই যুক্তি মানতে চায়নি নবান্ন। অর্থ দফতর সূত্রে দাবি করা হয়েছে, পাঁচশো-হাজারের নোট বাতিলের পরে ডিসেম্বর মাসে ভ্যাট সংগ্রহ ২ শতাংশের কাছাকাছি কমে গিয়েছিল। কিন্তু জানুয়ারি মাসে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৫ শতাংশ। যা মাসিক গড় বৃদ্ধির চেয়ে বেশি। অর্থ দফতরের দাবি, ভ্যাট ডিলারদের কাছে গত ২১ জানুয়ারি পর্যন্ত কর দেওয়ার সুযোগ ছিল। তাই চূড়ান্ত পরিসংখ্যান যোগ হলে ভ্যাট সংগ্রহের হার আরও বাড়বে। অর্থ দফতরের কর্তাদের যুক্তি, নভেম্বর বা ডিসেম্বর মাসে লক্ষ্যমাত্রা ছোঁয়া না গেলেও পরিস্থিতি যতটা খারাপ বলা হচ্ছে ততটা নয়।

উল্টে তৃণমূল সূত্রে দাবি করা হচ্ছে, রাজনৈতিক কারণেই এ ভাবে দুই রাজ্যের বিরুদ্ধে সরব হতে হচ্ছে জেটলিকে। নোট বাতিলকে কেন্দ্র করে শুরু থেকেই সবচেয়ে বেশি সরব ছিলেন তৃণমূল নেতৃত্ব। চলতি বাজেট অধিবেশনেও নোট বাতিলকে কেন্দ্র করে সংসদের ভিতরে ও বাইরে বিরোধিতায় নামার হুমকি দিয়ে রেখেছে তৃণমূল। এই পরিস্থিতিতে নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত যে দেশের অর্থনীতির পক্ষে ইতিবাচক তা প্রমাণ করার দায় রয়েছে জেটলির উপরে। তাছাড়া ইতিমধ্যেই প্রধানমন্ত্রীর বিরোধিতায় নেমে মমতা ঘোষণা করেছিলেন, মোদীর পরিবর্তে লালকৃষ্ণ আডবাণী, অরুণ জেটলি বা রাজনাথ সিংহের মতো নেতাদের নেতৃত্বে জাতীয় দলের সরকার গঠিত হলে সেই সরকারকে সমর্থন করতে তাঁর আপত্তি নেই। রাজনৈতিক ভাবেই মমতার তাঁর হয়ে সওয়াল করাটাও যথেষ্ট অস্বস্তির জেটলির কাছে। তাই তিনি যে মোদীর পাশে রয়েছেন সেই বার্তা দিতেই আজ মমতা ও তাঁর প্রশাসনিক ব্যর্থতাকে আক্রমণ শানিয়েছেন জেটলি।

দিল্লির বিরুদ্ধে মুখ খোলার পিছনে পঞ্জাব ভোটই প্রধান কারণ বলে মনে করছেন রাজনীতিকরা। পঞ্জাবে দলকে জেতাতে বাজেটের আগের সপ্তাহেও ঘাঁটি গেড়ে বসেছিলেন জেটলি। ওই রাজ্যে বিজেপির অন্যতম প্রতিপক্ষ আপ। ফলে প্রশাসক হিসেবে যে কেজরীবালের ব্যর্থতা প্রমাণেই আজ ভ্যাটের বিষয়টি তুলে ধরে এক ঢিলে দুই পাখি মারতে চেয়েছেন জেটলি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE