সংসদে তৃণমূলের অফিসে।—নিজস্ব চিত্র।
বাইরে অঝোর বৃষ্টি, ভিতরে রজনীকান্তের গান। সঙ্গে গরম কাটলেট আর চা। আড্ডার মেজাজেই কখনও দলীয় সাংসদদের প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেওয়া অথবা অন্য দলনেতাদের সঙ্গে কুশল বিনিময়।
দ্বিতীয়বার মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে নির্বাচিত হওয়ার পর আজ প্রথম সংসদ-সফরটি এ ভাবেই কাটল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তিনি আসবেন বলে সকাল থেকেই তৃণমূলের গোটা টিম তৈরি ছিল! ছিল হলুদ এবং লাল গোলাপ দিয়ে তাঁকে সংসদীয় পার্টি অফিসে সংবর্ধনা জানানোর প্রস্তুতিও। ডেরেক ও ব্রায়েন থেকে সুব্রত বক্সী, সবাই দুপুর বাড়ে বারোটা থেকেই মূল ফটকের সামনে সিঁড়িতে অপেক্ষা করতে থাকেন।
মমতা অবশ্য এসে প্রথমেই চলে গেলেন তাঁর প্রিয় সেন্ট্রাল হলে। সেখানে অন্যান্য দলের নেতা তো বটেই, কেরলের সিপিএম সাংসদরাও হাত নেড়ে অভিনন্দন জানান মমতাকে! কোনও এক কমরেড কিছুটা লঘু স্বরে বলে উঠলেন, ‘‘আমরা কিন্তু কংগ্রেসের সঙ্গে জোটে নেই!’’ কেরলের কংগ্রেস সাংসদরাও পিছিয়ে থাকেননি। তাঁরাও এগিয়ে এসে অভিনন্দন জানান। উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদবের স্ত্রী ডিম্পল অনেক ক্ষণ গল্প করে যান মমতার সঙ্গে।
সেন্ট্রাল হল থেকে পার্টি অফিস। সেখানে সংবর্ধনা পর্ব মেটার পর সাংসদদের সঙ্গে কিছুক্ষণ বর্তমান অধিবেশনে দলের কৌশল নিয়ে কথাবার্তা হল। তার পরেই মমতার ঘোষণা, ‘‘আজ রজনীকান্ত সেনের জন্মদিন! তাই গাওয়া হোক তাঁর গান!’’ প্রথমে অর্পিতা ঘোষ, পরে সুগত বসু গান ধরলেন। তার মাঝেই নিরন্তর দর্শনার্থীর আসা-যাওয়া। মমতাকে নৈশভোজে নিমন্ত্রণ করতে আপ নেতা তথা মুখপাত্র রাঘব চাড্ডাকে পাঠিয়েছিলেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল। মমতার প্রতি কেজরীর অনুরোধ, ‘‘গত বার আমি আপনার বাড়ি গিয়ে নৈশাহার করেছিলাম, এ বার আপনি আসুন।’’ মমতা তাঁকে জানান, আজ সন্ধ্যায় নীতীশ কুমারের সঙ্গে তাঁর বৈঠক ঠিক হয়ে রয়েছে। তাই আগামী কাল তিনি কেজরীর সঙ্গে দেখা করবেন।
এর পরে এলেন বিজেডি-র সংসদীয় দলনেতা দিলীপ তিরকে এবং দলীয় সাংসদ তথা ওড়িয়া ফিল্মের সুপারস্টার অনুভব মোহান্তি। এলেন সমাজবাদী পার্টির নেতা রামগোপাল যাদব। অর্পিতা তত ক্ষণে রজনীকান্তের স্টক শেষ করে নেত্রীর নির্দেশে ধরেছেন, ‘তিসরি কসম’ ছবির ‘সজন রে ঝুট মৎ বোলো!’ গাইতেই গাইতেই ‘অভিমান’-এর নায়িকার প্রবেশ! জলসায় আলোড়ন তুলে তৃণমূল পার্টি অফিসে ঢুকলেন শ্রীমতি জয়া বচ্চন! চেয়ার থেকে উঠে তাঁকে জড়িয়ে ধরলেন মমতা।
কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসব নিয়ে মমতার ফোন থেকেই রাজ্যের তথ্য-সংস্কৃতি সচিব অত্রি ভট্টাচার্যের সঙ্গেও কথা বললেন জয়া। হাসিমুখে মমতা তাঁকে জানালেন, ‘‘আমি অমিতজি-র টুইট ফলো করি। উনি কখন কী করছেন সবটাই জানি। ওঁকে আমার শ্রদ্ধা জানাবেন।’’
সংসদের প্রচলিত সৌজন্য, মুখ্যমন্ত্রীরা এলে তাঁদের সঙ্গে দেখা করেন সংসদীয় মন্ত্রী। সেই ধারা মেনে আজ মমতার কাছে আসেন সংসদীয় প্রতিমন্ত্রী সুরিন্দর সিংহ অহলুওয়ালিয়া-ও। মমতা তাঁকে সাদর আমন্ত্রণ জানিয়ে বলেন, ‘‘রজনীকান্তের জন্মদিনে আমরা ওঁর গান গাইছিলাম।’’ অহলুওয়ালিয়া-র চটজলদি জবাব, ‘‘ওহো, তা হলে তো আমি ওঁর নতুন সিনেমাটা নিয়ে আসতে পারতাম। ‘কাবালি’র একটা প্রিন্ট রয়েছে!’’ প্রবল হাস্যধ্বনির মধ্যে তাঁকে বোঝানো হয়, ইনি তামিল সুপারস্টার নন, বাঙালি কান্তকবি! পরে অবশ্য অর্পিতার সঙ্গে ‘রুবি রায়’ গেয়ে আসর মাত করে দেন অহলুওয়ালিয়া!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy