প্রতীকী ছবি।
ট্রেনে সফর করতে গিয়ে পকেটমারি হয়ে গিয়েছে। সেই টাকা উদ্ধার হয়ে ফের মালিকের হাতে পৌঁছেছে, এমন দৃষ্টান্ত বোধহয় খুঁজে পাওয়া ভার। কিন্তু মুম্বইয়ে সম্প্রতি এমনই একটা ঘটনা যা শুনে হয়তো অনেকেরই অবিশ্বাস্য বলে মনে হতেই পারে!
এপ্রিলের এক সকাল। চার দিকে তখন করোনার দাপাদাপি চলছে। দোসর লকডাউন। অতএব ঘরেই বন্দি থাকা! হঠাত্ই মোবাইল ফোনটা বেজে উঠল হেমন্ত পাদালকারের। অচেনা নম্বর। রিসিভ করে ‘হ্যালো’ বলতেই ফোনের ও-প্রান্ত থেকে ভেসে এল…‘হেমন্ত পাদালকার আছেন?’ তার পরে আবার শোনা গেল…‘ভাসি জিআরপি থেকে বলছি’।
একটু থমকে গেলেন হেমন্ত। জিআরপি থেকে ফোন! বিষয়টা বোঝার চেষ্টা করার আগেই আবার ফোনের ওপ্রান্ত থেকে বলল, ‘আপনাকে এক বার ভাসি জিআরপি-তে আসতে হবে।’ প্রথমে একটু ভয় পেয়েই গিয়েছিলেন হেমন্ত। তার পর ধাতস্থ হয়ে পুরো কথাটা শুনলেন মন দিয়ে। মুখে স্মিত একটা হাসি খেলে গেল তাঁর। কী এমন শুনলেন হেমন্ত যে, ভীত মুখটা মুহূর্তেই হাসিতে বদলে গেল!
মুম্বইয়ের পানভেলের বাসিন্দা হেমন্ত। কর্মসূত্রে ট্রেনে চেপে অফিসে যাতায়াত করতে হয় তাঁকে। ঘটনাটা ২০০৬-এর। প্রতি দিনের মতোই পানভেল থেকে ট্রেনে চেপেছিলেন হেমন্ত। ভাশিতে পৌঁছনোর আগে পেছন পকেটে রাখা মানিব্যাগটা বার করতে গিয়ে আঁতকে ওঠেন। দেখেন সেটা উধাও। ব্যাগে সব মিলিয়ে ৯০০ টাকা ছিল। আর কিছু কাগজপত্র। মহাবিপদে পড়লেন তিনি। অগত্যা ভাশি স্টেশনে নেমে জিআরপি-তে একটা অভিযোগ জানালেন। দিন যায়, মাস যায়, বছর যায়, মানিব্যাগের আর কোনও হদিশই মেলেনি। হালও ছেড়ে দিয়েছিলেন হেমন্ত। তার পরে কেটে গিয়েছে ১৪ বছর। সেই ঘটনার কথা ভুলেই গিয়েছিলেন হেমন্ত।
এ বছরের এপ্রিলের সকালের সেই ফোন ১৪ বছর পর আগেকার ঘটনার কথা হেমন্তকে মনে করাল এমনটা শুধু নয়, রীতিমতো তাঁকে অবাক করে দিয়েছে এমন একটা নজিরবিহীন ঘটনা। ভাশি জিআরপি থেকে সে দিন ফোনে তাঁকে বলা হয়েছিল, ‘২০০৬-এ খোওয়া যাওয়া মানিব্যাগটা উদ্ধার হয়েছে। তাতে ৯০০ টাকা আছে। এসে নিয়ে যান।’ ১৪ বছর আগে পকেটমারি হওয়া টাকা উদ্ধার তাও আবার পুরোটাই! কথাটা শোনার পর থেকে নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছিলেন না হেমন্ত।
আরও পড়ুন: রাজস্থানে পাক হিন্দু শরণার্থী পরিবারে রহস্যমৃত্যু, ঘর থেকে উদ্ধার ১১ দেহ
এপ্রিলে লকডাউন চলছিল, তাই যেতে পারেননি ভাসি জিআরপি-তে। লকডাউন উঠতেই সেখানে যান। হেমন্তের হাতে টাকা-সহ মানিব্যাগটা তুলে দেয় জিআরপি। হেমন্ত বলেন, “মানিব্যাগটা হাতে নিয়েও বিশ্বাস করতে পারছিলাম না এটা ফিরে পেয়েছি, তাও আবার ১৪ বছর পর। টাকাও অক্ষত রয়েছে। ৯০০ টাকা ছিল। তার মধ্যে একটা ৫০০ টাকার নোট।” তিনি আরও বলেন, “১০০ টাকা স্ট্যাম্পের জন্য জিআরপি নিয়েছে। ৫০০ টাকাটা রেখে দিয়েছে। যে হেতু নোটবন্দির ফলে পুরনো ৫০০ টাকা অচল হয়ে গিয়েছে। সেটা বদলে নতুন ৫০০ টাকা ফিরিয়ে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে জিআরপি।”
এক জিআরপি আধিকারিক বলেন, “হেমন্তের মানিব্যাগটা যে চুরি করেছিল তাকে সম্প্রতি গ্রেফতার করা হয়েছে। তার কাছ থেকে ৯০০ টাকা-সহ মানিব্যাগটা উদ্ধার করা হয়েছে। খতিয়ে দেখে জানা যায়, মানিব্যাগটা হেমন্ত পাদালকারের। ২০০৬-এ এর বিষয়ে একটা রিপোর্ট লেখানো হয়েছিল। তার পরই যোগাযোগ করা হয় হেমন্তের সঙ্গে।” ১৪ বছর আগে হারিয়ে যাওয়া মানিব্যাগ পেয়ে খুশি হেমন্তও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy