Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

সাগরে আর নয়, বলছেন সাগরজয়ী

বুধবার রাতে প্রশ্নটা শুনে শুধু ফ্যালফেলিয়ে তাকিয়ে ছিলেন অমৃত কুজুর। কথা বলে মালুম হল, সমুদ্র সব ফিরিয়ে দিক আর না-দিক, তিনি আর সমুদ্রে ফিরছেন না।

অমৃত কুজুর। বৃহস্পতিবার আন্দামান ভবনে। নিজস্ব চিত্র

অমৃত কুজুর। বৃহস্পতিবার আন্দামান ভবনে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০১৯ ০৪:০১
Share: Save:

সমুদ্র নেয় না কিছুই, সবই ফিরিয়ে দেয়! প্রবাদটা সেই জীবনমরণ সঙ্কটে মনে পড়ছিল কি তাঁর?

বুধবার রাতে প্রশ্নটা শুনে শুধু ফ্যালফেলিয়ে তাকিয়ে ছিলেন অমৃত কুজুর। কথা বলে মালুম হল, সমুদ্র সব ফিরিয়ে দিক আর না-দিক, তিনি আর সমুদ্রে ফিরছেন না।

বিমানে পোর্ট ব্লেয়ারে নেমে স্ত্রী এবং তিন মেয়েকে দেখার জন্য তখন আর তর সইছে না অমৃতের। সল্টলেকে আন্দামান ভবনের ঘরে রাতটুকু কাটাতে আসা, দেশের প্রান্তিক দ্বীপের এই অখ্যাত বাসিন্দার নিস্তরঙ্গ জীবন এখন সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের জল্পনার বিষয়। প্রায় দু’মাস অকূল সমুদ্রে তাঁর ভেসে থাকার অভিজ্ঞতায় ‘লাইফ অব পাই’ বা ‘কাস্টঅ্যাওয়ে’ ছবির কাহিনিবৃত্তের ছায়া দেখছেন অনেকে।

আন্দামানের নীল দ্বীপের বাসিন্দা, সমুদ্রতীরবর্তী গ্রামে ডিঙিনৌকায় চাল-ডালের ফেরিওয়ালা অমৃতের মনে পড়ছে প্রায় দু’মাস না-ঘুমিয়ে বাঁচার কথা। ভুলতে পারছেন না নিরুপায় হয়ে তাঁর মাসখানেকের সঙ্গী বাঙালি বন্ধু রঞ্জন বিশ্বাসের দেহ সমুদ্রে ভাসিয়ে দেওয়ার মুহূর্তটাও। দু’জনে একসঙ্গে ডিঙিনৌকায় পাড়ি দিয়েছিলেন ২৮ অগস্ট। মাঝসমুদ্রের ঝড়ে দিগ্‌ভ্রষ্ট হয়ে ১৬-১৭ দিন ভেসে বেড়ানোর পরে তাঁরা মায়ানমারের (বর্মা) দিকে চলে যান। ‘‘বর্মি নৌবাহিনী কিছু তেল, কম্পাস আর নুডলস, শুকনো মাছের মতো কিছু খাবার দেয়। মাঝসমুদ্রে টেনে এনে ভেসে যেতে বলে,’’ বলছিলেন অমৃত।

তেল ফুরিয়ে যায় দিন চারেকের মধ্যেই। কম্পাসের কাঁটাও অচল। খাবার, জল ফুরিয়ে যাওয়ার পরে দিন ১০-১২ সমুদ্রের জল খেয়ে বাঁচার লড়াই অব্যাহত ছিল। এর মধ্যেই মারা যান রঞ্জন। অতঃপর একা ভেসে চলা! ২৫ অক্টোবর চিলিকার কাছে ওড়িশায় ডাঙা মিলল নিশুত রাতে। পুরীর হাসপাতালে দু’দিন কাটে। আজ, শুক্রবার নীল দ্বীপে ফেরার কথা অমৃতের। ‘‘আর সমুদ্রে নয়! সাগরে আগেও বেশ কয়েক বার মৃত্যুর মুখে পড়েছি। বাকি জীবনটা গায়েগতরে খেটেই কাটিয়ে দেব,’’ বললেন অমৃত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Sea Odisha Port Blair
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE