Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
National News

ধ্বংসস্তূপের সেই লাতুরে জেগে থাকা কচি হাত... কেমন আছে সেই শিশু

১৯৯৩ সালের ৬ অক্টোবর। ভয়াবহ ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত হয়েছিল গুজরাতের লাতুর। বহু মানুষ মারা গিয়েছিলেন। সে ঘটনা বিশ্বের ভয়াবহ ভূমিকম্পের তালিকায় ঠাঁই পেয়েছে। সেই ভূমিকম্পেই উদ্ধারকাজে গিয়েছিলেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল সুমিত বক্সি।

সে দিনের উদ্ধার হওয়া সেই ছোট্ট মেয়ে প্রিয়া জাওয়ালগে। সঙ্গে তাঁর উদ্ধারকর্তা সুমিত বক্সি।

সে দিনের উদ্ধার হওয়া সেই ছোট্ট মেয়ে প্রিয়া জাওয়ালগে। সঙ্গে তাঁর উদ্ধারকর্তা সুমিত বক্সি।

সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ১৪:০৫
Share: Save:

কংক্রিটের ধ্বংসস্তূপের মধ্যে জেগে ছিল ছোট্ট একটা হাত। এক মুহূর্ত নষ্ট না করে ঝাঁপিয়ে পড়লেন সুমিত বক্সি। চার পাশে তত ক্ষণে আরও গ্রামবাসী এসে জড়ো হয়ে গিয়েছিলেন। তারাও আর সময় নষ্ট করলেন না। সকলে হাতে হাত লাগিয়ে কংক্রিটের চাঙড়গুলো তাড়াতাড়ি সরাতে শুরু করলেন। সুমিত তত ক্ষণে সেই ছোট্ট হাতটির অনেকটাই কাছে পৌঁছে গিয়েছিলেন।

বেঁচে আছে তো সে? মনে একটা শঙ্কা কাজ করছিল সুমিতের। কিন্তু আশা ছাড়েননি। হাতটা ছুঁতেই যেন তাঁর পুরো শরীরে একটা বিদ্যুতের ঝলক খেলে গেল। প্রাণ আছে— চিৎকার করে উঠেছিলেন। গ্রামবাসীদের মধ্যে তত ক্ষণে খবরটা দাবানলের মতো চাউর হয়ে গিয়েছিল। সে দিন ১৮ মাসের শিশুকন্যাটিকে অচৈতন্য অবস্থায় উদ্ধার করেছিলেন সুমিত। গোটা গ্রামের চোখে তখন তিনি হয়ে উঠেছিলেন সাক্ষাৎ ভগবান!

১৯৯৩ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর। ভয়াবহ ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত হয়েছিল মহারাষ্ট্রের লাতুর। বহু মানুষ মারা গিয়েছিলেন। সে ঘটনা বিশ্বের ভয়াবহ ভূমিকম্পের তালিকায় ঠাঁই পেয়েছে। সেই ভূমিকম্পেই উদ্ধারকাজে গিয়েছিলেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল সুমিত বক্সি। লাতুরের মাংরুল গ্রামে উদ্ধারকাজের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। ভূমিকম্পের ঠিক ছ’দিন পরে সকালে উদ্ধারকাজ চালিয়ে তাঁবুকে সহর্মীদের সঙ্গে খেতে বসেছিলেন সুমিত। হঠাৎইমধ্য তিরিশের এক দম্পতি ছুটতে ছুটতে সেখানে আসেন। কাঁদতে কাঁদতে জানান, তাঁদের ১৮ মাসের সন্তান ধ্বংসস্তূপের নীচে চাপা পড়ে আছে।

আরও পড়ুন: আদালতে যাওয়ার পথে পহেলু খান হত্যার সাক্ষীদের লক্ষ্য করে গুলি চালাল দুষ্কৃতীরা

সেদিনের বিরবণ দিতে গিয়ে বক্সি বলেছিলেন, ‘‘গত কয়েকদিন ধরে শুধু চার দিকে মৃতদেহ দেখতে দেখতে হাঁফিয়ে উঠেছিলাম।তার মধ্যে এমন একটা খবর পেয়েই দৌড়ে গিয়েছিলেন খাবার ছেড়েই। বাড়িটির এক প্রান্ত থেকে খোঁড়াখুঁড়ি শুরু করা হয়। খুব সন্তর্পণে চাঙড়গুলো সরানো হচ্ছিল। যাতে কোনও ভাবে ধস না নামে। আশপাশের মাটিগুলোও আলগা ছিল। বক্সি বলেন, “খুঁড়তে খুঁড়তেই ছোট্ট একটা আঙুল হাতে ঠেকল। বুকের ভিতরটা ধক করে উঠল। চাঙড়গুলো এক এক করে সরাতে শুরু করলাম। এ বার একটু তাড়াতাড়িই যেন সেটা করতে হল। যাতে তাড়াতাড়ি সম্ভব ওই শিশুটির কাছে পৌঁছনো যায়। হাতের নাগালে যখন শিশুটির দেহ ঠেকল বুঝলাম ওর শরীরে এখনও প্রাণ আছে।” এর পরই সঙ্গীদের জানান বিষয়টা। তখন দ্রুততার সঙ্গে শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়।

আরও পড়ুন: রাম মন্দির আন্দোলনের সিদ্ধান্ত ৫ই

সেই ঘটনার পর প্রায় দু’দশক কেটে গিয়েছে।কিন্তু তাঁর মনে দাগ কেটে দিয়েছিল ঘটনাটি। কর্মসূত্রে সুমিতকে এ প্রান্ত ও প্রান্ত ছুটে বেড়াতে হয়েছে। কিন্তু তাঁর নিজের হাতে উদ্ধার হওয়া ছোট্ট শিশুটির স্মৃতি কিন্তু তাড়িয়ে বেড়িয়েছে সর্বক্ষণ। প্রায় দু’দশক ধরে সেই মেয়েটিকে খুঁজেছেন। সেই মাংরুল গ্রামেরইএক পুলিশকর্মীর সঙ্গে যোগাযোগ হয় সুমিতের। তাঁর মাধ্যমেই খোঁজ খবর নেওয়া শুরু করেন। অবশেষে ২০১৬-য় সেই শিশুটির খোঁজ মেলে। আজ সে অনেক বড়। একটা স্কুলে চাকরিও করছে। তাঁর নাম প্রিয়া জাওয়ালগে।

সুমিতের পোস্টিং এখন পুণেয়। পরিবার নিয়ে থাকেন ঘোরপাড়িতে। প্রিয়ার খোঁজ পেয়ে আর স্থির থাকতে পারেননি। সপরিবারেগত অগস্টেই প্রিয়ার সঙ্গে দেখা করতে মাংরুলে যান সুমিত। বলেন, “অসাধারণ এক মুহূর্ত।” প্রিয়াও উচ্ছ্বসিত। যে মানুষটি তাঁকে নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে টেনে এনেছেন, সেই মানুষটিকে এক বার দেখার জন্য সে-ও যেন অপেক্ষায় ছিল।

(এই প্রতিবেদনটি প্রথম প্রকাশের সময় দু’টি গুরুতর তথ্যগত ত্রুটি থেকে গিয়েছিল। লাতুরকে গুজরাতের জেলা বলে ভুলবশত লেখা হয়েছিল। এ ছাড়া ভূমিকম্পের দিন ৬ অক্টোবর লেথা হয়েছিল যা ঠিক নয়। এই অনিচ্ছাকৃত ত্রুটির জন্য আমরা দুঃখিত।)

(কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী, গুজরাত থেকে মণিপুর - দেশের সব রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ খবর জানতে আমাদের দেশ বিভাগে ক্লিক করুন।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Latur Gujarat earthquake লাতুর
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE