প্রিয়দর্শিনী: কৃষ্ণনগরের জনসভায় ইন্দিরা গাঁধী। ছবি-সৌজন্য: সত্যেন মণ্ডল
এ যেন ছোট ইন্দিরা!
বছর কয়েক আগে খবরের কাগজে প্রিয়ঙ্কা গাঁধীর ছবি দেখে এই কথাটাই প্রথম ঝটকায় মনে এসেছিল। প্রায় চমকেই উঠেছিলাম।
শুধু নাতনি তো নয়, অবিকল আমাদের সকলের প্রিয় ইন্দিরাই যেন মেয়েটা! সেই তীক্ষ্ণ মুখশ্রী, সেই চোখা নাক, টানা চোখ। মনের মধ্যে একটা অদ্ভূত অনুভূতি তৈরি হয়েছিল। তার পর থেকে যত বার মেয়েটাকে ছবিতে দেখেছি, তত বারই সেই অনুভূতিটা ফিরে এসেছে। ইন্দিরা গাঁধীকে খুব কাছ থেকে দেখার সুবাদে যেন আরও বেশি করে মনে হয়েছে এ কথা।
ইন্দিরার পৌত্রী সেই প্রিয়ঙ্কা শেষমেশ রাজনীতিতে এলেন— ভাবতেই ভাল লাগছে!
ইন্দিরা গাঁধীকে আমি কাছ থেকে দেখি ১৯৬৯ সালে। পশ্চিমবঙ্গে তখন অর্ন্তবর্তীকালীন নির্বাচন আসন্ন। তিনি কৃষ্ণনগরে জনসভা করতে এলেন। আমি সদ্য গ্রাজুয়েট হয়েছি। চুটিয়ে যুব কংগ্রেস করছি। হঠাৎ জেলার নেতারা আমায় মঞ্চে ওঁকে আপ্যায়নের দায়িত্ব দিলেন। এত বড় দায়িত্ব পেয়ে আমি তো ভিতরে ভিতরে প্রচণ্ড উত্তেজিত! মানুষটাকে মঞ্চে এত কাছ থেকে দেখব, বিশ্বাসই হচ্ছে না।
সার্কিট হাউসের সামনে তখন বিশাল মাঠ ছিল। সেই মাঠে জনসভা হবে। মুর্শিদাবাদ থেকে সভা করে ইন্দিরা গাঁধী এসে পৌঁছলেন। আমি তখন মঞ্চের উপরে। একটা একটা করে সিঁড়ি বেয়ে উনি উপরে উঠছেন আর আমরা সকলে যেন স্তব্ধ হয়ে দেখছি ওঁকে। তার সঙ্গে মঞ্চে উঠছেন প্রতাপচন্দ্র চন্দ্র। তিনি দোভাষীর কাজ করছেন। গোটা মাঠ তাঁকে দেখে উল্লাসে ফেটে পড়ছে। আমি মাত্র এক হাত দূরে। চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলা দায়! এতই তাঁর ব্যক্তিত্ব। রূপে মুগ্ধ সকলে। রবীন্দ্রনাথ তাঁর নাম দিয়েছিলেলন ‘প্রিয়দর্শিনী’। একেবারেই উপযুক্ত নাম। তাঁকে কাছ থেকে যত দেখছি, ততই মনে হচ্ছে এ নাম তাঁর ছাড়া আর কারও হতে পারে না। তাঁর কথা বলা, হাঁটাচলা, তাকানো সব কিছুর মধ্যেই যেন একটা রাজকীয় ব্যক্তিত্ব ফুটে উঠছে।
ইন্দিরাজি যখন বক্তৃতা করছেন, তখনও আমরা সবাই মুগ্ধ হয়ে দেখছি তাঁকে। যেন এক সম্মোহনী শক্তি। শুধু আমরা যারা মঞ্চের উপরে তারাই নয়, গোটা মাঠের হাজার-হাজার মানুষ তাঁকে দেখে মন্ত্রমুগ্ধ। আমার বয়স এখন তিয়াত্তর। এত বছর পরেও যেন পরিষ্কার সেই দিনটা দেখতে পাই। আর প্রিয়ঙ্কাকে দেখলে মনে হয় যেন তাঁর ছায়া। তাই আজ যখন প্রথম শুনলাম যে প্রিয়ঙ্কা সক্রিয় রাজনীতিতে আসছে, মনে হল, এটা তো হওয়ারই ছিল!
গাঁধী পরিবারের প্রতি এ দেশের মানুষের একটা দুর্বলতা আছে। প্রিয়ঙ্কা রাজনীততে আসায় কংগ্রেস কর্মীদের তো বটেই, সাধারণ মানুষের মনেও প্রভাব পড়বে। প্রিয়ঙ্কাকে দেখলেই সকলের মনে পড়ে যাবে প্রিয়দর্শিনীর কথা। ইন্দিরাকে ঘিরে মানুষের আবেগ কিছুটা হলেও ফিরবে। কংগ্রেস তার সুফল তো পাবেই! (মতামত লেখকের ব্যক্তিগত)
আইনজীবী তথা প্রাক্তন পুরপ্রধান
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy