ফাইল চিত্র।
বহুজন সমাজ পার্টির (বিএসপি) প্রধান মায়াবতীকে অশালীন ভাষায় আক্রমণ করলেন উত্তরপ্রদেশের বিজেপি বিধায়ক সাধনা সিংহ। ‘নারীজাতির কলঙ্ক’, ‘মহিলা না পুরুষ বোঝা মুশকিল’— মায়াবতী সম্পর্কে এমনই নানা মন্তব্য করেছেন মোগলসরাইয়ের বিজেপি বিধায়ক। ওই সব মন্তব্যের প্রেক্ষিতে সাধনার বিরুদ্ধে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে পদক্ষেপ করেছে জাতীয় মহিলা কমিশন। সমালোচনায় সরব বিরোধীরা।
১৯৯৫ সালে লখনউয়ের গেস্টহাউসে বিএসপি নেত্রীর উপর হামলা চালিয়েছিল সমাজবাদী পার্টির কিছু নেতা-কর্মী। শনিবারের দলীয় সভায় ওই ঘটনা উল্লেখ করে সাধনা বলেন, ‘‘দ্রৌপদীকে অসম্মান করা হয়েছিল। দ্রৌপদী প্রতিশোধ নেওয়ার প্রতিজ্ঞা করেছিলেন। এটাই মহিলাদের আত্মসম্মান। কিন্তু এই মহিলা (মায়াবতী) সব কিছু খুইয়েছেন।
আর এখন ক্ষমতার জন্য আত্মমর্যাদা বিক্রি করে চলেছেন। যারা এক সময় ওঁকে অপমান করেছিল, ক্ষমতার জন্য তাদের সঙ্গেই হাত মিলিয়েছেন।’’ এখানেই থেমে থাকেননি ওই বিজেপি বিধায়ক। মায়াবতীর সঙ্গে তৃতীয় লিঙ্গের উদাহরণ টেনে ছাপার অযোগ্য ভাষায় কদর্য আক্রমণ করে তিনি বলেছেন, ‘‘আমি বুঝতে পারি না মায়াবতী মহিলা না পুরুষ! ওঁর কোনও আত্মসম্মান নেই।’’
আরও পড়ুন: বেকারত্ব বাড়ছে, বিরোধীদের সুরে সঙ্ঘ প্রধান, অস্বস্তিতে মোদী
ওই বিজেপি বিধায়ক যখন কদর্য ভাষায় দলিত নেত্রীকে আক্রমণ করছেন, তখন সমাবেশে হাজির নেতা এবং শ্রোতারা হাততালিতে ফেটে পড়ছিলেন। মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহের ছেলে তথা নয়ডার বিধায়ক পঙ্কজ সিংহও। নেত্রী-কর্মীদের হাততালিতে আরও উৎসাহিত হয়ে সাধনা বলেন, ‘‘উনি নারী জাতির কলঙ্ক। ক্ষমতার জন্য নিজের সব অপমান হজম করেছেন।’’ তবে শুধু সাধনাই নন, সম্প্রতি উত্তরপ্রদেশের একটি সভায় ১৯৯৫ সালের লখনউ গেস্ট হাউসে হামলার ঘটনার কথা তুলে দলিত নেত্রীকে কটাক্ষ করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের মতে, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে উৎসাহিত হয়ে মায়াবতীকে আক্রমণ করতে গিয়ে শালীনতার সব সীমা লঙ্ঘন করেছেন সাধনা।
মায়াবতীকে এই প্রথম এমন আক্রমণের মুখে পড়তে হয়েছে এমন নয়। আরুষি হত্যা তদন্ত চলাকালীন বিরোধী তাঁকে কটাক্ষ করে বলেছিলেন, তাঁর (মায়াবতী) সন্তান নেই, তাই সন্তান-স্নেহের বিষয়টি তিনি বুঝবেন না।
ওই বিজেপি বিধায়কের বিরুদ্ধে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে পদক্ষেপ করছে জাতীয় মহিলা কমিশন। কমিশনের চেয়ারপার্সন রেখা সিংহ বলেন, ‘‘একজন নেত্রীর কাছ থেকে এই ধরনের মর্যাদাহানিকর মন্তব্য অনভিপ্রেত এবং অত্যন্ত নিন্দাজনক। আগামিকাল তাঁকে নোটিস পাঠানো হবে।’’
আরও পড়ুন: ব্রিগেডে তেইশ কণ্ঠের এক সুরে এখনও অস্বস্তিতে মোদী!
সাধনার সমালোচনা করে বিএসপি নেতা সতীশ মিশ্র বলেছেন, ‘‘এসপি-বিএসপির জোট ঘোষণার পর থেকেই বিজেপি নেতা-নেত্রীরা ভারসাম্য হারিয়েছেন। এটা অসুস্থ মানসিকতা। এদের মানসিক হাসপাতালে পাঠানো উচিত।’’
এসপি প্রধান অখিলেশ যাদব বলেছেন, ‘‘এটা সারা দেশের মহিলাদের অপমান, বিজেপির দেউলিয়া মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ।’’ চুপ নেই কংগ্রেসও। দলের মুখপাত্র প্রিয়ঙ্কা চতুর্বেদীর টুইট, ‘‘একজন মহিলা সম্পর্কে অন্য এক মহিলার এমন কুরুচিকর মন্তব্য এবং তাতে অন্যদের উৎফুল্ল হওয়া বিরক্তিকর ঘটনা।’’ সমালোচনায় সরব হয়েছে তৃণমূলও। সাধনার বিরুদ্ধে বাবুরি থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন এক বিএসপি কর্মী।
সমালোচনার মুখে পড়ে এক বিবৃতিতে সাধনা জানিয়েছেন, কাউকে অপমান করার উদ্দেশ্য তাঁর ছিল না। তিনি শুধু লখনউ গেস্ট হাউস-কাণ্ডের কথা মনে করিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। কেউ তাঁর কথায় অপমানিত হয়ে থাকতে তিনি দুঃখিত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy