শারীরশিক্ষা: যোগ-ক্লাসে ব্যস্ত রাফিয়া। —নিজস্ব চিত্র।
বাড়ির দরজায় খিল আটকে যোগ ব্যায়াম শেখান তিনি। খিল আটকাতে হয়। তা না করলে ঘরে জোর করে ঢুকে পড়ে শাসিয়ে দিয়ে যাবে ওরা। মেয়ে হয়ে ছেলেদের যোগ ব্যায়াম শেখানো? তাও আবার পোশাক বিধি না মেনে?
এতে অবশ্য অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছেন রাঁচীর ডোরান্ডার বছর একুশের রাফিয়া নাজ। মাস খানেক আগে এক দল লোক এম কম ছাত্রী রাফিয়ার বাড়িতে ঢিল মেরেছিল। বার বার বারণ করা সত্ত্বেও যদি যোগ ব্যায়াম শেখানো তিনি বন্ধ না করেন তাহলে রাস্তায় বেরোলে দেখে নেবে বলে হুমকি দিয়েছিল তারা। এমনকী খুনের হুমকি পর্যন্ত পেয়েছিলেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও বন্ধ হয় নি রাফিয়ার যোগ ব্যায়াম শেখানো। বরং এখন তিনি নিজের ডানা আরও বেশি মেলে দিয়েছেন। আন্তর্জাতিক নারী দিবসের দিন নিজের বাড়িতে বসে রাফিয়া বলেন, ‘‘রাঁচীর মানসিক হাসপাতালের রোগীদের ও রাঁচীর জেলের কয়েদিদের যোগ ব্যায়াম শেখানোর কাজের জন্য আবেদন করেছি। আশা করি সবুজ সঙ্কেত মিলে যাবে কিছুদিনের মধ্যেই।’’
গোলমালটা শুরু হয়েছিল ২০১৫ সালের আন্তর্জাতিক যোগ দিবসের দিন। রাফিয়া ততদিনে যোগ ব্যায়ামের প্রশিক্ষণ নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় যোগ ব্যায়ামের প্রদর্শনী করছেন। বিভিন্ন প্রতিযোগিতা থেকে মিলেছে পুরস্কারও। ২০১৫ সালের আন্তর্জাতিক যোগ দিবসে রাফিয়ার যোগ ব্যায়াম শেখানোর একটি ছবি একটি স্থানীয় কাগজে প্রকাশ পায়। সেই ছবি নজরে পড়তেই গোলমাল পাকাতে শুরু করে কয়েকটি শিবির। ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত করে এমন পোশাক পরে ছেলেদের কোনওভাবেই যোগ ব্যায়াম শেখানো যাবে না বলে ফতোয়া জারি হয়। রাফিয়া বলেন, ‘‘২০১৫ সালে আমার তখন বয়স মাত্র আঠেরো। তখন থেকেই ফতোয়া উপেক্ষা করে যোগ ব্যায়াম শেখাচ্ছি। বাড়িতে বাচ্চাদের প্রশিক্ষণ দিই। বিভিন্ন কলেজেও ডাক পড়ে শেখানোর জন্য।’’ রাফিয়া জানান, তাঁর বাবার ছোটোখাটো ব্যবসা আছে। যোগ ব্যায়াম শেখানোই তাদের বাড়ির প্রধান রুজি রোজগার।
নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে রাফিয়া জানায় তিনি মূল উৎসাহটা পেয়েছেন মা জামিলা খাতুনের কাছ থেকে। জামিলা অন্দরমহলে থেকেই রাফিয়াকে উৎসাহ দিয়েছেন। জামিলা বলেন, ‘‘যে দিন বাড়িতে ঢিল পড়ছিল, সে দিনও বলেছিলাম ওদের কথায় বন্ধ করবি না। ওদের ঢিল মারা এক দিন ঠিক থেমে যাবে।’’
রাঁচী পুলিশ রাফিয়াকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। এখন প্রয়োজন হলে তিনি দেহরক্ষী নিয়ে যোগ ব্যায়াম শেখাতে যান। রাঁচীর এসএসপি কুলদীপ দ্বিবেদীর কথায়, ‘‘এমন সাহসী আর জেদি মেয়ে খুব কম দেখেছি। ওকে আমরা সব ধরনের সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy