এক দিকে জাতীয় নাগরিক পঞ্জী, অন্য দিকে অসমীয়ার সংজ্ঞা এই দুই বিষয়ে ঝড়ের অশনি-সঙ্কেত দেখছেন অসমের বঙ্গভাষীরা। তাঁদের আশঙ্কা, সিদ্ধান্ত গ্রহণে সামান্য ভুলেই গোটা রাজ্যে অশান্তি ছড়াতে পারে।
বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলনের পক্ষ থেকে অসম বিধানসভার স্পিকার প্রণব গগৈকে আজ এ ভাবেই সতর্ক করে দেওয়া হয়। সংগঠনটির এক প্রতিনিধি দল এ দিন তাঁর সঙ্গে দেখা করে।
অসমীয়ার সংজ্ঞা নির্ধারণে রাজ্যের বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর সঙ্গে কথা বললেও, বরাকের বঙ্গভাষীদের প্রতিনিধিদের ডাকেননি স্পিকার। কেন এই বৈষম্য তা জানতে চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছিল বরাক বঙ্গের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। এর পরই প্রণববাবু ডেকে নেন তাঁদের। এ দিন ৪৫ মিনিট ধরে দু’পক্ষে কথা হয়। সংগঠনটির তরফে জানানো হয়েছে, স্পিকার আশ্বাস দিয়েছেন, এ নিয়ে সবার বক্তব্য জেনে তিনি সরকারের কাছে রিপোর্ট পেশ করবেন। বরাক বঙ্গের প্রতিনিধিরা তাঁকে জানান, অসম বহুভাষিক রাজ্য। সরকার কাউকে তাঁর সাংবিধানিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করতে পারে না। তার উপর, ১৯৫১ সালের জাতীয় নাগরিক পঞ্জীর কথা বারবার বলা হচ্ছে। কিন্তু একটি অসম্পূর্ণ পঞ্জীকে ভিত্তি করার কথা কী ভাবে বলা হয়, তা তাঁরা স্পিকারের কাছে জানতে চান।
বরাক বঙ্গের সভাপতি নীতীশ ভট্টাচার্য, সম্পাদক গৌতমপ্রসাদ দত্তদের বক্তব্য, কাছাড়-সহ কয়েকটি জেলায় ওই নথির খোঁজ মেলেনি বলে সরকার বিধানসভায় জানিয়েছে। এর পরও ১৯৫১ সালের নাগরিক পঞ্জীর কথা অর্থহীন। নীতীশবাবুর মন্তব্য, “এখানকার বঙ্গভাষীরা বিদেশি হতে পারেন না। তৎকালীন শ্রীহট্ট অসম প্রদেশেরই জেলা ছিল। শ্রীহট্ট থেকে আসা বাঙালিরা অসমেরই ভূমিপুত্র।” অসমীয়া সংজ্ঞা নির্ধারণে বঙ্গভাষী বা কোনও ছোট জনগোষ্ঠীর স্বার্থ যাতে বিঘ্নিত না হয়, সে দিকে নজর রাখতে স্পিকারকে অনুরোধ জানানো হয়।
বরাকের পৃথকীকরণের দাবির কথাও স্পিকারকে জানান গৌতমবাবুরা। তাঁকে বলা হয়, বঙ্গভাষীদের অধিকার ক্ষুণ্ণ হলে পৃথক রাজ্যের দাবি জোরাল হতে পারে।
স্পিকার গগৈ একই বিষয়ে এ দিন আমসু, জমিয়ত, চরচাপরি সাহিত্য সভার মতো কয়েকটি সংগঠনের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানেও বরাক বঙ্গ প্রতিনিধিদের হাজির থাকতে অনুরোধ জানান। সভায় সংগঠনগুলির প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, অহেতুক বিতর্কের জেরে অসম ভয়ঙ্কর পথে যাচ্ছে। জানা গিয়েছে, স্পিকার শুধু বলেছেন, “আপনাদের কথা আমার রিপোর্টে থাকবে।”
বরাক বঙ্গের প্রতিনিধি দলে ছিলেন সঞ্জীব দেব লস্কর, পরিতোষ চন্দ্র দত্ত, মাসুক আহমেদ এবং বিশ্বনাথ মজুমদারও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy