যোগী আদিত্যনাথ
আচমকা সিদ্ধান্ত নয়। উত্তরপ্রদেশে ভোটের ঘুঁটি সাজিয়েই ‘মিশন-প্রিয়ঙ্কা’য় নেমেছেন রাহুল গাঁধী। সামনের মাসে লখনউতে প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরাকে সঙ্গে নিয়ে গিয়ে ঝড় তুলবেন তিনি।
কংগ্রেস সভাপতি আজ নিজেই বলেন, তিনি প্রিয়ঙ্কাকে দু’মাসের জন্যই উত্তরপ্রদেশে পাঠাচ্ছেন না। রীতিমতো ‘মিশন’ দিয়ে পাঠানো হচ্ছে। মায়াবতী, অখিলেশ যাদব জোট করেছেন। তাঁদের প্রতি সম্মান রয়েছে, কোনও শত্রুতা নেই। তিন জনেরই লক্ষ্য, বিজেপিকে হারানো। কিন্তু কংগ্রেস ব্যাকফুটে নয়, যেখানেই সুযোগ আসবে ফ্রন্টফুটে খেলবে। মায়াবতী-অখিলেশ জোট নিয়ে কথা বলতে চাইলেও আপত্তি নেই।
মুখে যা-ই বলুন, বিজেপি নেতারা একান্তে বলছেন, রাহুলের এই কৌশল উত্তরপ্রদেশে ভরাডুবি ডেকে আনতে পারে বিজেপির। কী ভাবে? বিজেপিরই এক নেতার ব্যাখ্যা— ‘বুয়া-বাবুয়া’র অঙ্ক হল, দলিত-মুসলিম-যাদব ভোট সংগঠিত করা। মোদী-যোগীর অঙ্ক ছিল, ব্রাহ্মণ-রাজপুত-বৈশ্য-অন্য উচ্চবর্ণের পাশাপাশি জাঠ, যাদব, কুর্মি, অন্য ওবিসিদের ভোট টানা। কিন্তু ‘ভাই-বোন’-এর লক্ষ্য, বিজেপির সেই ভোটব্যাঙ্কটিও পুরোপুরি ছিনিয়ে নেওয়া। রাহুল আজ থেকেই বলতে শুরু করেছেন, প্রিয়ঙ্কাকে আনা মানে, উত্তরপ্রদেশে ফের মুখ্যমন্ত্রী বসাবে কংগ্রেস। আজ নিজের নির্বাচনী কেন্দ্র অমেঠীতে কংগ্রেস সভাপতি বলেছেন, ‘‘২০১৯ সালে দিল্লিতে কংগ্রেসের সরকার আসবে। সব রাজ্যে বিজেপিকে হারাতে বিরোধীরা ঐক্যবদ্ধ আছেন।’’
সমাজবাদী পার্টির নেতারাও বলছেন, ‘‘উত্তরপ্রদেশে ব্যক্তিকেন্দ্রিক ভোট হয় না। হয় জাতপাতের অঙ্কে। কংগ্রেস মজবুত হলে বিরোধী জোটেরই লাভ। খড়কুটোর মতো উড়ে যাবে বিজেপি।’’ ব্রাহ্মণরা প্রিয়ঙ্কাকে ‘বেটিয়া’ বলেন, ইন্দিরা গাঁধীর ছায়া দেখতে পান মানুষ। পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের দায়িত্ব পাওয়া জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়াও উচ্চবর্ণ। শহর এমনকি গ্রামেও প্রিয়ঙ্কার গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। যুবকদের মধ্যেও জনপ্রিয় তিনি। আর এমন এক এলাকার ভার প্রিয়ঙ্কাকে দিয়েছেন রাহুল, যেখানে সব থেকে বেশি জোর দিয়েছিলেন মোদী-যোগী।
কংগ্রেস নেতা বীরপ্পা মইলির কথায়, ‘‘রাহুল ভেবেচিন্তে হিসেব কষেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। প্রিয়ঙ্কার ক্যারিশমা বদলে দেবে উত্তরপ্রদেশের অঙ্ক। জাতীয় রাজনীতিতেও প্রভাব পড়বে। এক বার উত্তরপ্রদেশে বিজেপিকে ধূলিসাৎ করতে পারলে মোদী আর ক্ষমতায় ফিরবেন না।’’ তবে কংগ্রেস নেতাদের মতে, আক্রমণাত্মক হয়ে মায়াবতী-অখিলেশের উপরেও চাপ বাড়াচ্ছেন রাহুল। বিশেষ করে মায়ার উপরে। যাতে কংগ্রেসের সঙ্গে আলোচনার দরজা আরও খোলেন তিনি। কংগ্রেসের শক্ত জমিতে যাতে জোটের বাকিরাও সাহায্য করেন।
এসপি-র ঘনশ্যাম তিওয়ারি অবশ্য বলছেন, ‘‘এখনই জোটের আকারের কোনও বদল হবে না।’’ সপার মতে, উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেস এখনও অনেক দুর্বল। তবে কংগ্রেস যদি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে, তা হলে প্রার্থী বাছাইয়ের সময়ে আলোচনা করা যেতেই পারে। এই মুহূর্তে ব্রাহ্মণদের ৭২ শতাংশ, রাজপুতদের ৭৭ শতাংশ, বৈশ্যদের ৭১ শতাংশ, অন্য উচ্চবর্ণের ৭৯ শতাংশ, জাঠেদের ৭৭ শতাংশ, কুর্মিদের ৫৩ শতাংশ আসন বিজেপির দখলে। ফলে কংগ্রেস সেখানে ভাগ বসালে বিজেপি শেষ।
কংগ্রেস সূত্রের মতে, আমেরিকা থেকে ফিরে ১০ ফেব্রুয়ারি লখনউয়ের সভায় রাহুলের সঙ্গে উপস্থিত থাকতে পারেন প্রিয়ঙ্কা। নিজের একটি টিমও তৈরি করবেন তিনি। সেখানে থাকতে পারেন কনিষ্ক সিংহ, প্রীতি সহায়, গুলাম নবি আজাদ, রাজীব শুক্লের মতো নেতারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy