সুপ্রিম কোর্ট। -ফাইল চিত্র।
স্বঘোষিত গোরক্ষক বাহিনীকে দেখলে তাঁর রাগ হয় বলে মন্তব্য করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু গোরক্ষক বাহিনীর তাণ্ডব ঠেকানোর দায় রাজ্যের উপরেই ঝেড়ে ফেলেছিল মোদী সরকার। শুধু গোরক্ষক বাহিনী নয়। মোদী জমানায় দেশ জুড়ে ভুয়ো খবরের ভিত্তিতে ভিড় জড়ো করে পিটিয়ে মেরে ফেলার ঘটনাও লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে। আজ সুপ্রিম কোর্ট বার্তা দিল, নরেন্দ্র মোদীর সরকারকেই গোরক্ষক বাহিনী বা গণপ্রহার রোখার দায়িত্ব নিতে হবে।
প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রের বেঞ্চের রায়, গণপ্রহারকে পৃথক আইনি অপরাধের তকমা দিয়ে তার জন্য শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক। তার জন্য সংসদে বিশেষ আইন আনুক কেন্দ্রীয় সরকার। শীর্ষ আদালতের মতে, এ ক্ষেত্রে বিশেষ আইন এই ধরনের কাজে জড়িয়ে পড়া মানুষের মনে ভয় ঢোকাবে। প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন বেঞ্চের রায়, ‘‘এই ভয়ঙ্কর ভিড়তন্ত্রকে কোনওভাবেই ছাড়পত্র দেওয়া যায় না। গণপ্রহার, গণহিংসা ক্রমশ টায়ফনের মতো গ্রিক দৈত্যে পরিণত হতে পারে। কখনও ভুয়ো খবর, কখনও অসহিষ্ণুতায় প্ররোচিত উন্মত্ত জনতার হিংসার ঢেউ থেকেই তা স্পষ্ট হয়ে যায়।’’
মোদী জমানায় গোরক্ষার নামে প্রথম পিটিয়ে খুনের ঘটনা ঘটেছিল উত্তরপ্রদেশের দাদরিতে। ফ্রিজে গোমাংস আছে বলে মহম্মদ আখলাকের বাড়িতে চড়াও হয়ে তাঁকে পিটিয়ে মারে গ্রামের মানুষের একাংশ। তারপরে কখনও গরু পাচারের অভিযোগে, কখনও হিন্দু মেয়েকে পালিয়ে বিয়ের অভিযোগে, কখনও শুধু মুসলমান পরিচিতির জন্যই একের পর এক নিরীহ মানুষ গণপ্রহারের শিকার হন। সোশ্যাল মিডিয়ায় শিশু চুরির গুজবেও সেই গণপ্রহারের ঘটনা ঘটছে।
দাদরির ঘটনার পরেই মোদী জমানায় অসহিষ্ণুতার অভিযোগ উঠেছিল। মুসলিমদের নিশানা করে ধর্মীয় মেরুকরণের চেষ্টার জন্যও বিজেপি তথা সঙ্ঘ পরিবারের দিকে আঙুল ওঠে। আজ শীর্ষ আদালতও বলেছে, ‘ক্রমবর্ধমান অসহিষ্ণুতা ও মেরুকরণ’-এর জন্যই হিংসার ঘটনা ঘটছে। একে কোনওভাবেই স্বাভাবিক নিয়ম হয়ে যেতে দেওয়া যায় না। প্রধান বিচারপতি মিশ্র, বিচারপতি এম এম খানউইলকর ও বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের বেঞ্চের মত, কোনও নাগরিক নিজের হাতে আইন তুলে নিতে পারেন না। নিজেই বিচার করে শাস্তিও দিতে পারেন না। ইস্পাত-কঠিন হাতে এর শাসন জরুরি।
আরও পড়ুন: লোকসভা ভোট হতে পারে মার্চে, সঙ্গে কি ৮ বিধানসভাও
গোরক্ষার নামে সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন রুখতে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন মোহনদাস কর্মচন্দ গাঁধীর প্রপৌত্র তুষার গাঁধী, সমাজকর্মী তেহসিন পুণাওয়ালার মতো বেশ কয়েক জন। আদালতে কেন্দ্র জানিয়েছিল, সরকার গোরক্ষক বাহিনী সমর্থন করে না। আইন-শৃঙ্খলা রাজ্যের বিষয়। রাজ্যকেই আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে।
কেন্দ্রকে নতুন আইন করতে বলার সঙ্গে সঙ্গে রাজ্যের জন্যও একগুচ্ছ নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। আদালতের নির্দেশ, ভুয়ো বার্তা, ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়া আটকানোর দায়িত্ব কেন্দ্র বা রাজ্য কেউই এড়াতে পারে না। দোষী ব্যক্তির বিরুদ্ধে সমাজে ভেদাভেদ ছড়ানোর অভিযোগে পুলিশকে এফআইআর করতে হবে। প্রতি জেলায় এসপি-স্তরের একজন অফিসারকে গণপ্রহার রোখার দায়িত্ব দিতে হবে। তৈরি করতে হবে টাস্ক ফোর্স। এই ধরনের ঘটনা কোথায় ঘটছে, সেই জেলাগুলিকে চিহ্নিত করতে হবে।
শীর্ষ আদালতের নির্দেশ, পুলিশ বা প্রশাসনের কাজে গাফিলতি দেখা গেলে বিভাগীয় ব্যবস্থার বাইরেও কড়া পদক্ষেপ করতে হবে। এই সব মামলার নির্দিষ্ট বা ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টে বিচার হবে। উদাহরণ খাড়া করতে আইনে প্রদত্ত সর্বাধিক শাস্তি দিতে হবে। নির্যাতিতদের ক্ষতিপূরণের প্রকল্প তৈরি করতে হবে। রাজ্য সরকারের দায়িত্ব হল, পুলিশ-প্রশাসন ঠিকমতো কাজ করছে কি না, তা দেখা। সমস্ত নির্দেশ কী ভাবে পালন হয়েছে, তা নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্যকে রিপোর্ট দিতে হবে। ২০ অগস্ট আরও নির্দেশ দেবে শীর্ষ আদালত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy