হার্দিক-ঝড় ভাবিয়ে তুলেছে দু’পক্ষকেই। আরএসএস-প্রধান মোহন ভাগবত এ বার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে কথা বলবেন সংরক্ষণ নিয়ে। জাতি-ভিত্তিক সংরক্ষণ তুলে দিয়ে শুধু আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়া ব্যক্তির ক্ষেত্রে তা বজায় রাখা জরুরি কি না, আলোচনায় উঠবে সেই প্রসঙ্গ।
দিল্লিতে আরএসএস-বিজেপি সমন্বয় বৈঠক শুরু হচ্ছে পরশু থেকে। চলবে তিন দিন। সাম্প্রতিক কালের মধ্যে এটিই দু’পক্ষের মধ্যে সব থেকে বড় বৈঠক। আগে এমন বৈঠকে আরএসএসের দ্বিতীয় সারির নেতাদের যোগ দিতে দেখা গিয়েছে। এ বারে প্রতি দিনই উপস্থিত থাকবেন সরসঙ্ঘচালক ভাগবত। বেনজির ভাবে প্রধানমন্ত্রীও যোগ দেবেন এই সমন্বয় বৈঠকে।
গুজরাতের হার্দিক পটেল সংরক্ষণের আন্দোলন করে সাড়া ফেলে দিয়েছেন সম্প্রতি। জোরালো হচ্ছে জাতি-ভিত্তিক সংরক্ষণ তুলে দেওয়ার দাবিও। সঙ্ঘের শীর্ষ নেতারা মনে করছেন, সরকারেরও এই বিষয়টি বিবেচনা করা উচিত। আরএসএসের মুখপাত্র মনমোহন বৈদ্য আজ দিল্লিতে বলেন, ‘‘বৈঠকে মোহন ভাগবত ও নরেন্দ্র মোদী উপস্থিত থাকবেন। সেখানে সংরক্ষণের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে। আলোচনায় উঠে আসবে ধর্মের ভিত্তিতে জনগণনার প্রভাব ও সেনাদের ‘এক পদ এক পেনশন’-এর বিষয়টিও।’’
হার্দিক আন্দোলন শুরু করেছেন গুজরাতে পটেল সমাজকে অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণি (ওবিসি)-র জন্য বরাদ্দ ২৭% সংরক্ষণের আওতায় নিয়ে আসার দাবিতে। কিন্তু একই সঙ্গে তাঁর বক্তব্য, যদি পটেলদের সংরক্ষণের আওতায় আনা না যায়, তা হলে পুরো সংরক্ষণ ব্যবস্থাটাই তুলে দেওয়া হোক। এরই পাশাপাশি হার্দিক আবার তাঁর সংরক্ষণের আন্দোলনে সামিল করতে চান জাঠ, গুজ্জর, এমনকী অন্ধ্রের রেড্ডিদেরও। আরএসএসের একটি অংশ মনে করছে, জাতি-ভিত্তিক সংরক্ষণ তুলে দেওয়ার এটাই উপযুক্ত সময়। সঙ্ঘ পরিবার এখনও প্রকাশ্যে তাদের অবস্থান খোলসা না করলেও সঙ্ঘের মুখপাত্র মনমোহন বৈদ্যর বাবা মাধবগোবিন্দ বৈদ্য আজ বলেন, ‘‘জাতির ভিত্তিতে সংরক্ষণের কোনও মানেই হয় না। জাতির ভিত্তিতে এখন আর তেমন কেউ পিছিয়ে নেই। বড় জোর তফসিলি জাতি ও উপজাতির সংরক্ষণ এখনও বজায় রাখা যেতে পারে। তা-ও আগামী দশ বছরের বেশি নয়। তার পরে জাতির ভিত্তিতে সংরক্ষণের পুরো ব্যবস্থাটাই তুলে দেওয়া উচিত। শুধু ভোটব্যাঙ্কের জন্য এটিকে প্রাসঙ্গিক করে রাখা হয়েছে।’’
সঙ্ঘের এই অংশটির বক্তব্য, স্রেফ রাজনীতির স্বার্থে জাতির ভিত্তিতে সরকারি চাকরি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সংরক্ষণ চালু রাখা হয়েছে। আর্থিক ভাবে যাঁরা পিছিয়ে রয়েছেন, শুধু তাঁদেরই জন্য সংরক্ষণ রাখা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে জাতি বা ধর্ম দেখা উচিত নয়। হিন্দু-মুসলিম-খ্রিস্টান, ব্রাহ্মণ বা অন্য সম্প্রদায়— সকলেরই সমান সুযোগ পাওয়া উচিত। সঙ্ঘের মুখপাত্র মনমোহন বৈদ্য বলেন, ‘‘দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিভিন্ন বিষয়ে মানুষের যা যা মনোভাব আমরা টের পেয়েছি, সেই সব বিষয় নিয়েই আলোচনা হবে সমন্বয় বৈঠকে।’’
বিজেপি নেতৃত্বের একটি অংশও মনে করেন, একটি সময় ছিল যখন জাতির ভিত্তিতে সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা ছিল। কিন্তু এখন সাধারণ জাতি তথা অসংরক্ষিতদের উষ্মাও ধীরে ধীরে প্রকট হচ্ছে। তারাও এখন সংরক্ষণের দাবি তুলছে। পরিস্থিতির উপরে নজর রাখছে সরকারও। কংগ্রেস গোড়া থেকে বলে আসছে, হার্দিকের আন্দোলনের পিছনে সঙ্ঘ পরিবারের হাত রয়েছে। প্রকাশ্যে তা অস্বীকার করলেও তাঁর দাবিকে সমর্থন করা শুরু করে দিয়েছে সঙ্ঘ।
যদিও বিজেপির কিছু নেতার ধারণা, ওবিসি-দের নিয়ে মোদী সরকার একটু বেশিই মাতামাতি করছে। প্রধানমন্ত্রী নিজেও ওবিসি-ভুক্ত। ব্রাহ্মণতন্ত্র-নিয়ন্ত্রিত সঙ্ঘের একটি অংশ এটাকে খুব একটা ভাল চোখে নিচ্ছে না। সে কারণেও তারা হার্দিকের সুরে সুর মিলিয়ে সংরক্ষণ তুলে দেওয়া নিয়েও স্বর আরও জোরালো করতে চাইছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy