Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
অর্ধেক দিলেই বাকিটা সাদা

মোদীর দাবি গরিবের ভাল, বিরোধী মতে কালো-কল্যাণ

একুশে পা দিয়ে হুঙ্কার মিলিয়ে গেল হাওয়ায়! একুশ দিন আগে নরেন্দ্র মোদী ঘোষণা করেছিলেন, কোনও কালো টাকার মালিককে তিনি রেয়াত করবেন না।

বিজেপির সংসদীয় দলের বৈঠকে যোগ দিতে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। মঙ্গলবার সংসদে প্রেম সিংহের তোলা ছবি।

বিজেপির সংসদীয় দলের বৈঠকে যোগ দিতে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। মঙ্গলবার সংসদে প্রেম সিংহের তোলা ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০১৬ ০৩:১৭
Share: Save:

একুশে পা দিয়ে হুঙ্কার মিলিয়ে গেল হাওয়ায়!

একুশ দিন আগে নরেন্দ্র মোদী ঘোষণা করেছিলেন, কোনও কালো টাকার মালিককে তিনি রেয়াত করবেন না। এ বার কালো টাকার অর্ধেক কর-জরিমানা হিসেবে মিটিয়ে দিয়ে বাকি অর্ধেক টাকা নিয়ে নিশ্চিন্তে থাকার সুযোগ করে দিতে বিল পাশ হল লোকসভায়। বিরোধীদের প্রশ্ন, কোথায় গেল মোদীর সেই হুঙ্কার? কালো টাকার মালিকদের থেকে নেওয়া জরিমানায় গরিবদের কল্যাণ হবে বলে দাবি করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। বিরোধীরা আজ প্রশ্ন তুললেন, এটা গরিব কল্যাণ যোজনা নাকি কালো টাকার মালিকদের কল্যাণে প্রকল্প?

মোদী বলেছিলেন, গত ৭০ বছর ধরে জমানো কালো টাকা লুঠ করছেন তিনি। তাঁকে জ্যান্ত পুড়িয়ে ফেললেও তিনি পিছু হটবেন না। আজ বিজেপির সংসদীয় দলের বৈঠকেও প্রধানমন্ত্রী দাবি করেন, এই প্রকল্প মোটেই কালো টাকা সাদা করার প্রকল্প নয়। এই প্রকল্প গরিবদের জন্য। জরিমানা বাবদ আদায়ের অর্থ আলাদা অ্যাকাউন্টে যাবে। গরিবদের টাকা গরিবদের জন্যই ব্যবহার হবে। সব কালো টাকা সুদে-আসলে গুণে নেবেন বলেও হুঙ্কার দেন মোদী। কিন্তু বিরোধীদের অভিযোগ, মোদী বলছিলেন লড়াইটা নাকি কালো টাকার বিরুদ্ধে। কিন্তু বাস্তবে আরও এক বার কালো টাকার মালিকদের পার পেয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দিলেন তিনি। মোদীর উদ্দেশে তাই বিরোধীদের প্রশ্ন, এটাই যদি করবেন, তবে আমজনতাকে এমন ভোগান্তির মধ্যে ফেললেন কেন?

পুরনো ৫০০-১০০০ টাকার নোটে জমানো কালো টাকার পরিমাণ নিজে থেকেই জানিয়ে দিলে, ৫০% কর-জরিমানা মিটিয়ে ছাড় পেয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দিতে আয়কর আইনে সংশোধনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন মোদী। জরিমানার অর্থ গরিবদের জন্য খরচ হবে দাবি করে এর নাম দেওয়া হয় ‘প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ যোজনা’। কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় সিদ্ধান্তের পর গত কাল সংসদে এই বিল পেশ করেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। বিরোধীদের প্রবল হট্টগোলের মধ্যেই বিলটি আজ লোকসভায় পাশ হয়।

আয়কর আইনে এই সংশোধনের পক্ষে জেটলি যুক্তি দেন, ‘‘পুরনো নোট বাতিলের পরে অনেকেই কালো টাকা সাদা করার চেষ্টা করছিলেন। তা রুখতেই আয়কর আইনে সংশোধন হল। পুরনো নোট বাতিলের পিছনে নরেন্দ্র মোদীর উদ্দেশ্যই ছিল, অর্থনীতি থেকে কালো টাকা মুছে ফেলা।’’ জেটলি যখন বিলের পক্ষে যুক্তি দিচ্ছেন, সে সময় তৃণমূল সাংসদরা তাঁর সামনে দাঁড়িয়েই মোদী-বিরোধী স্লোগান দিতে থাকেন। জেটলির কণ্ঠস্বর চাপা দিতে উলু থেকে হাততালি কিছুই বাদ যায়নি। তার পরেও সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে বিলটি পাশ করিয়ে নেয় সরকার।

এটি অর্থ বিল হওয়ায় রাজ্যসভায় তা খারিজ করে দেওয়ার সুযোগ পাবেন না বিরোধীরা। খুব বেশি হলে রাজ্যসভা ১৪ দিন আটকে রাখতে পারে। তার পরে এমনিতেই বিলটি পাশ হয়ে গিয়েছে বলে ধরে নেওয়া হবে। তা সত্ত্বেও এই বিলে যাতে রাষ্ট্রপতি সই না করেন, তার জন্য আজই তাঁকে চিঠি লিখে অনুরোধ জানিয়েছেন লোকসভায় তৃণমূলের দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর যুক্তি, সরকার নিয়ম না মেনে বিল পেশ করেছে। আলোচনা ছাড়াই, হট্টগোলের মধ্যে বিল পাশ হয়েছে।

এর আগে ১ জুন থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত স্বেচ্ছায় কালো টাকা ঘোষণা করে ৪৫% কর-জরিমানা মিটিয়ে রেহাই পাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছিলেন মোদী। রাহুল গাঁধী যার নাম দিয়েছিলেন ‘ফেয়ার অ্যান্ড লাভলি’ প্রকল্প। তার মেয়াদ ফুরোতে ৮ নভেম্বর রাতে পুরনো ৫০০-১০০০ টাকার নোট বাতিলের ঘোষণার পরে সরকার হুঁশিয়ারি দেয়, পুরনো নোটে কালো টাকা জমা দিলে ৩৩% হারে কর ও সেই করের ২০০% জরিমানা হিসেবে দিতে হবে। অর্থাৎ, ১০০ টাকা জমা দিলে ৯৯ টাকাই সরকারকে কর-জরিমানা বাবদ গুণে দিতে হবে। তিন সপ্তাহ পরে আজ যে বিল পাশ হল, তাতে ৫০% কর-জরিমানা দিলেই বাকি অর্ধেক কালো টাকা সাদা হয়ে যাবে।

কংগ্রেসের মুখপাত্র রণদীপ সূর্যেওয়ালা বলেন, ‘‘আগের আয়কর আইনের একটি ধারায় কারও লুকোনো টাকা ধরা পড়লে কর ও করের তিন গুণ জরিমানা আদায়ের নিদানও ছিল। সে ক্ষেত্রে কালো টাকার ১৩২% আদায় করার সুযোগ ছিল মোদী সরকারের। তার বদলে মাত্র ৫০% কর-জরিমানা দিয়েই ছাড় পেয়ে যাবেন কালো টাকার মালিকরা। টাকার উৎস নিয়ে প্রশ্ন করা হবে না, কোনও মামলাও হবে না। সরকার এরই নাম দিয়েছে গরিব কল্যাণ যোজনা! আসলে এটা প্রধানমন্ত্রীর কালো টাকার মালিক কল্যাণ যোজনা।’’

সিপিএম নেতা মহম্মদ সেলিম বলেন, ‘‘এমনিতেই নোট বাতিলের পরে মোদী সরকার একের পর এক ঘোষণা করে কালো টাকার মালিকদের সুবিধা করে দিচ্ছিল। এ বার সরাসরি কালো টাকার অর্ধেক জমা দিয়ে বাকি অর্ধেক নিয়ে নিশ্চিন্তে থাকার সুযোগ করে দিল।’’ বিরোধীদের ক্ষোভ, মোদী প্রথমে কালো টাকা নির্মূল করবেন বলে নোট বাতিল করলেন। তার পর বললেন, তিনি ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড, অনলাইন লেনদেন বাড়ানোর জন্য নোট বাতিল করেছেন। এ বার বলছেন গরিবদের কল্যাণের কথা। পুরনো ৫০০-১০০০ টাকার নোটে বাজারে প্রায় ১৪ লক্ষ কোটি টাকা ছিল। তার প্রায় ৮.৪ লক্ষ কোটি টাকা অর্থাৎ ৬০% জমা পড়ে গিয়েছে। সরকারের উচিত ছিল, এর মধ্যে কালো টাকা কতটা, তার খোঁজ করা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Narendra Modi Black Money
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE