Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

মোদীর কাশ্মীর নীতি নিয়েই এ বার প্রশ্ন উঠে গেল

পাকিস্তান সরকারের সঙ্গে আলোচনার কথা ঘোষণার পরে তা বাতিল করে বিবৃতি দেওয়া হল। প্রতিরক্ষামন্ত্রী নির্মলা সীতারামন কাশ্মীরে গিয়ে রাজ্যপাল এবং সংশ্লিষ্ট পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তায় বজ্র আঁটুনি আনার কথা ঘোষণাও করলেন

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৩:৪১
Share: Save:

পাকিস্তান সরকারের সঙ্গে আলোচনার কথা ঘোষণার পরে তা বাতিল করে বিবৃতি দেওয়া হল। প্রতিরক্ষামন্ত্রী নির্মলা সীতারামন কাশ্মীরে গিয়ে রাজ্যপাল এবং সংশ্লিষ্ট পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তায় বজ্র আঁটুনি আনার কথা ঘোষণাও করলেন। কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি এটাই যে, আজ রাতের ঘুম উড়ে গিয়েছে উপত্যকার। আর এই প্রসঙ্গেই মোদী সরকারের কাশ্মীর নীতি নিয়ে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে নানা মহলে।

দক্ষিণ কাশ্মীরের সোপিয়ানে তিন পুলিশকর্মীকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে খুন করার পরে রাজ্যের নিরাপত্তা কর্মীদের সঙ্গে স্নায়ুযুদ্ধ অব্যাহত রেখেছে জঙ্গিরা। হিজবুল মুজাহিদিনের তরফে আরও ১৩ জন পুলিশকর্মীর ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে হুমকি দেওয়া হয়েছে, দু’দিনের মধ্যে চাকরি না ছাড়লে এদেরও খুন করা হবে।

এই মুহূর্তে মোদী সরকারের পাকিস্তান এবং কাশ্মীর— দু’টি নীতিই প্রায় ভেঙে পড়েছে বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল শিবির এবং বিরোধীরা। কংগ্রেসের বক্তব্য, ‘‘জম্মু-কাশ্মীর নিয়ে মোদী সরকারের আসলে কোনও নীতিই নেই। শুধু ফাঁকা আওয়াজ, পেন্ডুলামের মতো অবস্থান বদল। ক্ষমতার লোভে জোর করে পিডিপি-র সঙ্গে জোট গড়েছিল বিজেপি। মাঝপথে গোটা রাজ্যকে পথে বসিয়ে সরে গেল।’’

কিছু দিন আগেই সেনাপ্রধান জেনারেল বিপিন রাওয়তকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিরক্ষামন্ত্রী উপত্যকায় এসে পঞ্চায়েত ভোটের প্রস্তুতি এবং নিরাপত্তা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে গিয়েছেন। কিন্তু রাজনৈতিক সূত্রের মতে, এখন যা অবস্থা, তাতে ভোট করা কার্যত অসম্ভব। যাঁরা গ্রাম পঞ্চায়েতে লড়বেন ভেবেছিলেন, তাঁরাও এক এক করে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। প্রবল ভাবে ধাক্কা খেয়ে গিয়েছে স্থানীয় পুলিশ-প্রশাসন। এই অবস্থায় কেন্দ্র নিজেদের ক্ষমতা প্রমাণ করার তাগিদে যেনতেন প্রকারে ভোট করানোর প্রশ্নে অনড় থাকলেও বাস্তব পরিস্থিতি অন্য রকম বলেই মনে করছে সংশ্লিষ্ট শিবির। প্রাণ বাঁচাতে পদত্যাগ করার কথা ভাবছেন দক্ষিণ কাশ্মীরের অনন্তনাগ, সোপিয়ান অঞ্চলের বহু পুলিশ কর্মী। কংগ্রেস মুখপাত্র অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি বলেছেন, ‘‘এত কাণ্ড ঘটে যাচ্ছে, অথচ মোদীজি নীরব!” তাঁর প্রশ্ন, ‘‘সরকারের কি ধারণা যে, নিছক মজা করতে পুলিশ কর্মীরা পদত্যাগ করতে চাইছেন? এই পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ অধিবেশেনের ফাঁকে ভারত-পাকিস্তানের বৈঠকের যে সিদ্ধান্ত কেন্দ্র নিয়েছিল, তা কাশ্মীরের মানুষের সঙ্গে একটা নির্মম ঠাট্টা ছাড়া আর কিছু ছিল না।’’

বিশেষজ্ঞদের মতে, গোড়া থেকেই কাশ্মীরে একমুখী ও সর্বাত্মক দমন নীতি নিয়ে এগিয়েছিল মোদী সরকার। কিন্তু নিরাপত্তা নিয়ে তর্জন-গর্জন থাকলেও উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি অনেক ক্ষেত্রে। যার জেরে জঙ্গি কার্যকলাপ বেড়েছে, বারবার সেনা ছাউনি আক্রান্ত হয়েছে। পিডিপি-র সঙ্গে বিজেপির রাজনৈতিক মতপার্থক্য এবং কাশ্মীর নীতি নিয়ে ফারাক থাকায় ভুগতে হয়েছে উপত্যকাকে। পাশাপাশি পাকিস্তানের সঙ্গে ঠিক কোন পথে চলা হবে, তা নিয়ে মোদী সরকার আগাগোড়া বিভ্রান্ত থেকেছে বলে অভিযোগ কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের। কখনও মোদী বিনা নিমন্ত্রণেই চলে গিয়েছেন লাহৌরে, তৎকালীন পাক প্রধানমন্ত্রীর বাড়ি। আবার তার পরেই ভারতীয় সেনা আক্রান্ত হলে পাল্টা সার্জিকাল স্ট্রাইকের রাস্তায় হাঁটা হয়েছে। একটি একমুখী ধারাবাহিক নীতি ঘরে বা বাইরে— কোনও ক্ষেত্রেই না নিতে পারার কারণে আজ পরিস্থিতি এই পর্যায়ে পৌঁছেছে বলে দাবি কূটনৈতিক শিবিরের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Narendra Modi নরেন্দ্র মোদী
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE