উত্তরপ্রদেশের ভোটের মুখে তিন তালাক প্রথা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ডের তীব্র আপত্তি থাকলেও মোদী সরকার নিজেদের অবস্থানে অনড়।
সরকারের দাবি, মুসলিম বিবাহবিচ্ছেদের তিন তালাক প্রথা বিলোপ আসলে মুসলিম মহিলাদের সম্মান ও সমতা বজায় রাখার লক্ষ্যে। ভুক্তভোগী মুসলিম মহিলারাই ইউপিএ আমলে এই মামলা করেছিলেন। এর সঙ্গে অভিন্ন দেওয়ানি বিধির কোনও সম্পর্ক নেই।
কালই মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড প্রধানমন্ত্রীকে ‘স্বৈরাচারী’ বলে আইন কমিশনের প্রশ্ন বয়কটের ঘোষণা করে। তাদের মতে, সরকার এর আড়ালে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু করতে চাইছে। আজ কেন্দ্রের তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী বেঙ্কাইয়া নায়ডু বলেন, বয়কট করাই স্বৈরাচার। সরকার কোনও নির্দেশ জারি করেনি। শুধুমাত্র মুসলিম মহিলাদের সম্মানরক্ষায় সুপ্রিম কোর্টে মতামত জানিয়েছে।
প্রশ্ন হলো, উত্তরপ্রদেশের ভোটের মুখে মুসলিমদের একটি বড় অংশকে চটিয়ে দিয়ে বিজেপির কী লাভ? বরং মুসলিমদের মন জয়ের চেষ্টা করে ভোট বিভিন্ন দলে ভাগাভাগি হওয়াতেই বিজেপির লাভ বেশি।
বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ অবশ্য বলছেন, ‘‘এর কোনও প্রভাব উত্তরপ্রদেশে পড়বে না।’’ দলের এক সূত্রের মতে, আসলে এই লড়াইটি মুসলিমদের সঙ্গে মুসলিমদেরই। আদালতে এই মামলাটি মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পরে হয়নি। বিজেপির সমর্থনেও এই মামলা করা হয়নি। মামলাটি হয়েছিল ইউপিএ আমলে। তাঁদের সম্মান ফিরে পেতে বেশ কিছু ভুক্তভোগী মুসলিম মহিলা এই মামলা করেছিলেন। ফলে মহিলাদের সম্মান ও সমতার পাশে দাঁড়িয়ে মহিলা-সহ মুসলিমদেরই একটি অংশের সমর্থন যেমন বিজেপি পাবে, তেমনই আধুনিকমনস্ক হিন্দুরাও এর সমর্থন করবে।
বেঙ্কাইয়া আজ বলেন, ‘‘দেশের মানুষ তিন তালাক প্রথার অবসান চাইছেন। তাঁরা এমন কিছু চাইছেন না, যাতে ধর্মীয় বিশ্বাসের ভিত্তিতে মহিলাদের সম্মানে আঘাত আসে।’’ বেঙ্কাইয়ার দাবি, অভিন্ন দেওয়ানি বিধির সঙ্গে তিন তালাককে জুড়ে দিয়ে বিভ্রান্তি তৈরির চেষ্টা চলছে। তাঁর কথায়, ‘‘আর এ সবের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীকে জড়িয়ে রাজনীতি করাও ঠিক নয়। লিঙ্গ সমতা, মহিলাদের অধিকার এবং সম্মান রক্ষাকেই কেন্দ্র গুরুত্ব দিতে চায়।’’ আসরে নেমেছেন কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদও। তাঁর ব্যাখ্যা, তিন তালাক প্রথার বিরুদ্ধে মুসলিম মহিলারা অভিযোগ এনেছিলেন। এ নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের মতামত জানতে চেয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। তার ভিত্তিতেই সরকার জানিয়েছে, কেন্দ্র মহিলাদের সম্মান ও সমতা রাখার পক্ষে।
অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি আগেই বলেছিলেন, ‘‘ধর্মবিশ্বাসের ভিত্তিতে জন্ম, মৃত্যু বা বিয়ের অনুষ্ঠান হতে পারে। কিন্তু বিবাহবিচ্ছেদ ও উত্তরাধিকারের প্রশ্নে পুরুষ ও মহিলার বিভেদ থাকা উচিত নয়।’’ আইন কমিশনের দাবি, অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু আসলে দেশে বৈষম্য মেটানোর চেষ্টা। যদিও আইন কমিশনের দাবিকে ‘ফাঁদ’ বলে বর্ণনা করেছে মুসলিম ল বোর্ড। তাদের অভিযোগ, আইন কমিশন স্বাধীন ভাবে কাজ করছে না। তারা শুধু কেন্দ্রের নির্দেশেই চলছে। আর এই সব করে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে ‘যুদ্ধ’ ঘোষণা করতে চাইছে কেন্দ্র। এই মন্তব্যের বিরোধিতা করে আজ বেঙ্কাইয়া বলেছেন, রাজনীতি না করে প্রয়োজনে যুক্তি দিয়ে বিতর্কের পথে এগোক ল বোর্ড।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy