‘ব্র্যান্ড-মোদী’তে দিয়ে গেলেন প্রধানমন্ত্রী।
বিদেশে পাড়ি দেওয়ার আগে দলের সাংসদদের বুথে-বুথে গিয়ে নিজের ‘টিফিন’ ভাগ করে খাওয়া এবং সরকারের সফল্য প্রচারের দাওয়াই দিয়ে গেলেন প্রধানমন্ত্রী। নাম দিলেন ‘লাঞ্চ পে চর্চা’। কিন্তু বদলে গিয়েছে বলার মোড়ক! আগের মতো আর সাংসদদের ধমক দিলেন না নরেন্দ্র মোদী। উল্টে এক সাংসদই কৃষকদের দুর্দশার সঙ্গে রাজস্থানের হারের প্রসঙ্গ জুড়ে অস্বস্তি বাড়ালেন মোদী, অমিত শাহের।
বাজেট অধিবেশনের প্রথম পর্বের শেষ দিন ছিল আজ। বিদেশে যাওয়ার আগে সকালে দলের সাংসদদের সঙ্গে বৈঠক করলেন মোদী। অধিবেশনের দ্বিতীয় পর্ব শুরু হতে এখনও প্রায় এক মাস বাকি। এর মধ্যে বাজেটের ভাল দিকগুলি ঘরে-ঘরে পৌঁছে দেওয়ার মাধ্যমে ভোটের প্রস্তুতি শুরু করে দিতে বললেন মোদী। নিজের কেন্দ্র বারাণসীতে এক বার যেমন নিজের টিফিন সকলের সঙ্গে ভাগাভাগি করে খেয়েছিলেন, সেই কথা মনে করিয়ে মানুষের সঙ্গে সহজ ভাবে মেশার বার্তা দিলেন। ‘নকল-সংসদ’ বসিয়ে ও ‘লাঞ্চ পে চর্চায়’ বাজেট নিয়ে প্রচার চালাতে বললেন।
মোদীর বক্তব্য, এ বারের বাজেট গরিব, মধ্যবিত্ত, কৃষক— সকলের জন্যই ইতিবাচক। এর সুফল মেলে ধরতে হবে। মনে রাখতে হবে, ভোটে দলের সাফল্য জড়িয়ে আছে সাংসদদের সাফল্যের সঙ্গে।’’ বাজেটের সঙ্গে মোদীর প্রচারও যাতে হয়, তার জন্য ‘আনবিটেব্ল গ্লোবাল লিজেন্ড’ নামে একটি বইও বিলি করা হল দলের সাংসদদের মধ্যে। দাভোস থেকে সংসদ— মোদীর বিভিন্ন বক্তৃতার সংকলন ও সেই সব বক্তৃতা সম্পর্কে ২৫টি বিদেশি কাগজে যা বেরিয়েছে, সেই সব রয়েছে এতে। সব মিলিয়ে ‘ব্র্যান্ড-মোদী’তে শান দিয়ে বাজেটের ঢাক পেটানো আর রাহুল গাঁধীর মোকাবিলা— সাংসদদের সেই মন্ত্রই দিয়ে গেলেন প্রধানমন্ত্রী।
তবে সুর আলাদা। কোথায় সেই ধমক-চমক! গল্পের ছলে বোঝালেন সাংসদদের। গল্পটি এই রকম: এক ব্যক্তি ন’দিন কঠোর সাধনা করে ফলপ্রাপ্তির পরে সব গ্রামবাসীকে ডেকে খাওয়ালেন। তাঁরা শুধু খেয়ে চলে গেলেন। প্রধানমন্ত্রীর বার্তাটি স্পষ্ট, তিনি একা পরিশ্রম করবেন, আর বাকিরা তার সুফল ভোগ করবেন, এটা চলবে না। মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াতে সকলকেই পরিশ্রম করতে হবে। বৈঠক থেকে বেরিয়ে বিজেপির অনেক সাংসদই বললেন, ‘‘আগের থেকে অনেক বেশি মধুর প্রধানমন্ত্রী, অমিত শাহ। এই ধরনের বৈঠকে সাধারণত সাংসদদের জোর গলায় বলা হয়, তাঁদের কী করণীয়। ধমকও দেওয়া হয়। কিন্তু আজ বলা হল অনুরোধের সুরে।’’
কেন? সাংসদদের মতে, নেতৃত্বও বুঝতে পারছেন, হাওয়া বদলাচ্ছে। এক দিকে রাহুলের চাপ, অন্য দিকে দলের ভিতরের চাপ। চলতি সপ্তাহে বিজেপির একাধিক সাংসদ সংসদে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী নতুন প্রকল্পের স্বপ্ন দেখান, কিন্তু তা বাস্তবায়িত হয় না। আজও বৈঠকে এক সাংসদ রাজস্থানের হারের প্রসঙ্গ তোলেন। অমিত তড়িঘড়ি তাঁকে নিরস্ত করতে বলেন, ‘‘রাজস্থানের হার না দেখে পরের লোকসভা জয়ের কথা ভাবুন।’’
বিজেপির এক সাংসদের কথায়, ‘‘রাহুল যে দলের নেতৃত্বকে কতটা বিব্রত করে রেখেছেন, সেটাও স্পষ্ট। যে কারণে বন্ধ ঘরে দলের বৈঠকেও রাহুলকে নিয়ে সময় ব্যয় করতে হল বিজেপি সভাপতিকে। রাহুলের রাজনীতি অগণতান্ত্রিক বলে প্রচার করতে বলা হল দলের সাংসদদের। বিজেপির জমি খসছে নিরন্তর। লড়াই কঠিন হচ্ছে বুঝেই সুর নরম প্রধানমন্ত্রী ও দলের সভাপতির।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy