Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

বেখেয়ালেই এমন নিখুঁত মিলে গেল অঙ্কটা?

কয়েক জন দলিত ও অনগ্রসর। দু’একটা ব্রাহ্মণ। গুটিক’য় সংখ্যালঘু। জনাদু’য়েক মহিলাও।উত্তর আছে, দক্ষিণ, পূর্ব, পশ্চিম, মধ্য সব আছে। আছে উত্তর-পূর্বও। বিভিন্ন অঞ্চল, বিভিন্ন রাজ্য, বিভিন্ন ধর্ম এবং বর্ণের মধ্যে এ ভাবেই একটা ভারসাম্য রক্ষার চেষ্টা দেখা গেল নরেন্দ্র মোদীর মন্ত্রিমণ্ডলের সম্প্রসারণে।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০৬ জুলাই ২০১৬ ০৪:০৬
Share: Save:

কয়েক জন দলিত ও অনগ্রসর। দু’একটা ব্রাহ্মণ। গুটিক’য় সংখ্যালঘু। জনাদু’য়েক মহিলাও।

উত্তর আছে, দক্ষিণ, পূর্ব, পশ্চিম, মধ্য সব আছে। আছে উত্তর-পূর্বও।

বিভিন্ন অঞ্চল, বিভিন্ন রাজ্য, বিভিন্ন ধর্ম এবং বর্ণের মধ্যে এ ভাবেই একটা ভারসাম্য রক্ষার চেষ্টা দেখা গেল নরেন্দ্র মোদীর মন্ত্রিমণ্ডলের সম্প্রসারণে। দু’বছরের কিছুটা বেশি সময় দিল্লির মসনদে অতিবাহিত তাঁর। এ যাবৎ মন্ত্রিসভার সবচেয়ে বড় সম্প্রসারণ। পাঁচ জনকে সরিয়ে দিয়েছেন মন্ত্রিত্ব থেকে। নতুন ১৯ জনকে এনেছেন। অস্বাভাবিক কিছু করেননি নরেন্দ্র মোদী। রাজ্য হোক বা কেন্দ্র, মন্ত্রিসভায় রদবদল বা সম্প্রসারণ স্বাভাবিক ঘটনাই। উন্নয়নের স্বার্থে, প্রতিশ্রুতি পালনের স্বার্থে পারদর্শী এবং সুদক্ষ ব্যক্তিকে বেছে নেওয়ার অধিকার মন্ত্রিসভার প্রধানের অবশ্যই রয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন রয়ে যাচ্ছে কয়েকটা।

মন্ত্রিসভার এই রদবদল কী শুধু পারদর্শী এবং দক্ষদের সুযোগ দেওয়ার জন্যই?

তা হলে কি প্রথমে পারদর্শী আর দক্ষদের অনেককে চিনতে পারেননি নরেন্দ্র মোদী?

২০১৪-র লোকসভা নির্বাচনের আগে ‘অচ্ছে দিন’ সংক্রান্ত যত রকমের স্বপ্ন ভোটারের চোখে এঁকে দেওয়া হয়েছিল, যে সব স্বপ্নের সিংহভাগেরই বাস্তবে অবতরণটা এখনও বাকি, এই সম্প্রসারণ তথা রদবদল কি সেই সব স্বপ্নের কোনও সুরাহা করতে পারবে?

মন্ত্রিসভার একটা সম্প্রসারণ বা রদবদলকে ঘিরে এত প্রশ্ন হয়তো উঠত না। উঠছে একটা ‘সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং’-এর ছবি দৃশ্যপটে ফুটে ওঠায়। গোবলয়ের প্রাণকেন্দ্র উত্তরপ্রদেশে আগামী বছর বিধানসভা নির্বাচন। অলিখিত ভাবে দামামাও বেজে গিয়েছে। সব শিবিরে প্রস্তুতি তুঙ্গে, সাজ সাজ রব। ওই নির্বাচনের কথা মাথায় রেখেই কি কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় উত্তরপ্রদেশের প্রতিনিধিত্ব সাত থেকে বাড়িয়ে দশে নিয়ে যাওয়া? মুলায়ম সিংহের মুসলিম-যাদব সমীকরণকে টেক্কা দিতেই কি ব্রাহ্মণ, দলিত এবং অন্য অনগ্রসরদের কাছে টানার চেষ্টা? এক জন ব্রাহ্মণ, এক জন দলিত এবং এক জন অন্য অনগ্রসর শ্রেণিভুক্তকে উত্তরপ্রদেশ থেকে মন্ত্রী হিসেবে বেছে নেওয়ার পর সে প্রশ্ন অবধারিত ভাবে উঠছে।

রাজস্থান, গুজরাত, কর্নাটক, মধ্যপ্রদেশ সহ যে সব রাজ্যে নির্বাচন এগিয়ে আসছে, সেখানে সংগঠন গুছিয়ে নিতে আর ঘুঁটি সাজিয়ে নিতেই বেশ কয়েকটা করে মন্ত্রিপদ উপহার দেওয়া নয় তো? সে প্রশ্নও উঠছে।

হতেই পারে, সরকারি কর্মসূচিতে গতি আনাই প্রধানমন্ত্রীর লক্ষ্য। হতেই পারে, সেই লক্ষ্য পূরণের স্বার্থেই প্রধানমন্ত্রী পারদর্শী সাংসদদের খুঁজে আনলেন। কিন্তু এই পারদর্শিতা বাছাইয়ের মাপকাঠিটা খুব স্পষ্ট নয় প্রথমত। দ্বিতীয়ত, ‘পারদর্শী’দের তালিকার সঙ্গে সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এর সমীকরণটা হুবহু মিলে গিয়েছে। তৃতীয়ত, এ সম্প্রসারণে কার্যকরী মন্ত্রীর সংখ্যা বড়ই নগণ্য। প্রতিমন্ত্রীর সংখ্যা বাড়িয়ে সম্ভাব্য ভোটব্যাঙ্কের সুরক্ষা সুনিশ্চিত করার তাগিদটাই যেন বেশি চোখে পড়ছে।

সবটাই খুব কাকতালীয়, এমন ভাবতে পারছি না। কারণ এই কাটাছেঁড়া রাষ্ট্রক্ষমতার সর্বোচ্চ অলিন্দ সম্পর্কিত। ওই অলিন্দে কোনও সমীকরণই খুব বেখেয়ালে জন্ম নেয় না।

আড়াই বছরের একটু বেশি সময় নরেন্দ্র মোদীর হাতে রয়েছে এখনও। তার মধ্যেই স্পষ্ট হয়ে যাবে, ‘অচ্ছে দিন’ এল কি না। প্রমাণিত হয়ে যাবে, মোদীর বেছে নেওয়া ‘পারদর্শী’রা সাফল্য আনতে পারলেন কি না।

রাজধর্মের সাফল্যের কথাই বলছি। নির্বাচনী সাফল্যের কথা নয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Modi Cabinet Reshuffle Anjan Bandyopadhyay
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE