নরেন্দ্র মোদীর সরকারের এক বছর হতে এখনও সপ্তাহখানেক বাকি। এর মধ্যেই সরকারের বিরুদ্ধে অসন্তোষ বাড়ছে ঘরে-বাইরে। জমি হারাচ্ছে দল। এ অবস্থায় ফের আসরে নেমে পড়ল আরএসএস। প্রধানমন্ত্রীর বিদেশ সফরের মাঝেই অমিত শাহ, রাজনাথ সিংহ, নিতিন গডকড়ী, মনোহর পর্রীকরের মতো নেতাদের সঙ্গে আলাদা আলাদা বৈঠক শুরু করলেন সরসঙ্ঘচালক মোহন ভাগবত।
বিজেপি বা সঙ্ঘ, কোনও পক্ষই এই বৈঠক নিয়ে মুখ খুলতে চায়নি। তবে বিজেপির শীর্ষ সূত্র জানাচ্ছে, তাঁদের ও সঙ্ঘের কাছে এটা এখন বেশ স্পষ্ট যে, বিপুল প্রত্যাশা জাগিয়ে সফর শুরু হলেও মোদী সরকারের অনেক প্রতিশ্রুতিই পূরণ হচ্ছে না। এতে আম-জনতার মধ্যে অসন্তোষ বাড়ছে। আর তারই সুযোগ নিয়ে বিরোধীরা এখন তেড়েফুঁড়ে আসরে নেমেছে। রাহুল গাঁধী নতুন অবতারে অবতীর্ণ হয়ে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে ‘গরিব-বিরোধী’ তকমা এঁটে দিতে অনেকটাই সমর্থ হয়েছেন। আর দলের নেতা-কর্মীরাও মোদী ও অমিত শাহের জুটির পরিচালনায় তেমন খুশি নন। বেনজির ভাবে ক’দিন আগে প্রধানমন্ত্রী ও দলের সব সাংসদের সামনেই উত্তরপ্রদেশের বালিয়ার সাংসদ ভরত সিংহ বিদ্রোহ করেন। বিজেপি নেতৃত্বকে এই অসন্তোষ কমানোর পরামর্শ দিয়েছে সঙ্ঘ।
অতীতে অটলবিহারী বাজপেয়ী যখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, সেই সময়ও বিজেপি ও সরকারের ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করতে চাইত সঙ্ঘ। চেষ্টা চালাত প্রভাব বাড়াতে। তা নিয়ে চলত নিরন্তর বিবাদও। তবে লোকসভা নির্বাচনে বিপুল ক্ষমতা নিয়ে আসার পর মোদীর দাপটের কাছে তেমন নাক গলাতে পারেনি আরএসএস। এখন মোদী-অমিতের ভিত একটু আলগা হতেই দল ও সরকারে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ বাড়াতে চাইছে সঙ্ঘ। সরকার জমি বিল বা খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নি নিয়ে যা পদক্ষেপ করছে, তাতে সঙ্ঘেরই একাংশ অখুশি। বিজেপির মূল ভোটব্যাঙ্কে আঁচ পড়ছে বুঝে, তারাও পথে নামছে বিরোধিতায়। আরএসএসের সদর দফতর যে শহরে, সেই নাগপুরেই বিজেপি-সমর্থিত ব্যবসায়িক সংগঠন আন্দোলনে নামতে চলেছে আগামী জুনে।
বিজেপি শিবিরে এমনও গুঞ্জন, বছর-শেষে দলের সাংগঠনিক নির্বাচনে সভাপতি হিসেবে অমিত শাহের মেয়াদ না-ও বাড়ানো হতে পারে। মোদী ও শাহের নিজের রাজ্য গুজরাতেও দলের রাশ আলগা হচ্ছে, যা নিয়ে চিন্তিত খোদ মোদীও। নিজের ঘনিষ্ঠ আনন্দীবেন পটেলকে মুখ্যমন্ত্রী করে মোদী যে কার্যসিদ্ধি করতে চেয়েছিলেন, তা হচ্ছে না। আনন্দীবেন নিজেও অসুস্থ। অমিতকে সেখানে মুখ্যমন্ত্রী করারও প্রস্তাব রয়েছে দলে। তা নিয়েও ভাগবতরা আলোচনা শুরু করেছেন। অমিতের জায়গায় কাকে সভাপতি হবে, তা নিয়েও কথা হবে।
কিন্তু সঙ্ঘের কাছে এর থেকেও বড় উদ্বেগের বিষয়, যে ভাবে বিজেপি জমি হারাচ্ছে, তাতে পরের ভোটগুলিতেও দলের ভাল ফল করার আশা ক্ষীণ। সঙ্ঘ সূত্রের মতে, অমিত শাহকে মোহন ভাগবত সতর্ক করেছেন, উত্তরপ্রদেশের মতো রাজ্যে, যেখানে লোকসভায় ভাল ফল করেছিল বিজেপি, সেখানেও দলের ভিত নড়বড়ে হচ্ছে। বিহারে নির্বাচন আসন্ন। দিল্লিতে ভরাডুবির পরে সেখানেও বিজেপি খুব একটা ভাল অবস্থায় নেই। বিশেষ করে জনতা পরিবার এককাট্টা হওয়ার পর। কারণ, মোদী সরকার যে পদক্ষেপই করছে, বাস্তবের জমিতে তার প্রতিফলন হচ্ছে না। বিরোধীদের চাপে গুরুত্বপূর্ণ বিলও আটকে যাচ্ছে। বিদ্রোহী সাংসদ ভরত সিংহ এই কথাই বলেছিলেন মোদীর সামনে। বিজেপির অনেক সাংসদই তাঁকে সমর্থন করেন।
বিদেশ সফরের মধ্যেই খোদ মোদীও এ সব নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন। সাংহাইয়ের এক অনুষ্ঠানে খেদ জানিয়েছেন, কাজ না করলে মানুষের সমালোচনা হয়। কিন্তু অনেক খেটেও তাঁকে সমালোচনা শুনতে হচ্ছে। মোদী চাইছেন, বর্ষপূর্তি উপলক্ষে অন্তত দিল্লির গণ্ডি পেরিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে মানুষের কাছে প্রচার করা হোক, সরকারের সাফল্যগুলি। কিন্তু এক সঙ্ঘ-নেতার প্রশ্ন, ‘‘দলের নেতা-কর্মীরা নেতৃত্বের উপরে অসন্তুষ্ট হয়ে থাকলে তাঁরাও কি সেই প্রচারে নামতে উৎসাহী হবেন?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy