ঘুমের জন্য সময় কোথায়! তাই ট্রেন চালাতে গিয়ে ভোর রাতে ক্লান্ত চোখে নেমে আসছে ঘুম। চেনা যাচ্ছে না সিগন্যালের রঙ। আর মুহূর্তেই ঘটে যাচ্ছে বড়সড় দুর্ঘটনা।
গত কয়েক বছরে রেলে যে দুর্ঘটনাগুলি ঘটেছে সেগুলির কারণ বিশ্লেষণ করে রেলকর্মীদের গাফিলতিই সামনে এসেছে। আর এর পিছনে রয়েছে তাঁদের একটানা কাজের চাপ। যাত্রীদের প্রাণ নিয়ে এ ভাবে ছিনিমিনি খেলা আটকাতে তাই এগিয়ে এসেছে রেল মন্ত্রকের সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। তাদের সুপারিশ, একজন চালককে ১৫ দিনে ১২৫ ঘন্টার বেশি কাজ না করানোর নিয়মকে কড়া ভাবে পালন করতে হবে। কাউকে টানা ৪ দিনের বেশি রাতের ডিউটি দেওয়া চলবে না।
রেললাইনে প্রতি এক কিলোমিটার একটি সিগন্যাল বসানো থাকে। সুপারফাস্ট ট্রেনের চালককে ঘন্টায় ১০০-১১০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন ছোটানোর ফাঁকেই সেই সিগন্যালের রঙ দেখে গাড়ির গতি বাড়াতে বা কমাতে হয়। চালকের কাছে এ জন্য কোনও প্রযুক্তিগত সাহায্যও থাকে না। রেলের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘দ্রুত চলার সময় প্রতি মুহূর্তে সতর্ক থাকতে হয়। কারণ, সামান্য অসতর্কতায় সিগন্যাল দেখতে ভুল হলে ঘটে যেতে পারে অনেক কিছু ।’’
আরও পড়ুন:টাকা না দিয়েই তৎকালে বুক করা যাবে টিকিট, নয়া ব্যবস্থা রেলের
হচ্ছেও তাই। স্ট্যান্ডিং কমিটির পর্যবেক্ষণ বলছে, অধিকাংশ রেল দুর্ঘটনাই ঘটছে ভোর রাতে। ভোর তিনটে থেকে পাঁচটার মধ্যে। কারণ বিশ্লেষণে দেখা গিয়েছে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কেবিনে দাঁড়ানো চালক ঝিমুনি এসে পড়ায় কোনও ভাবে সিগন্যাল দেখতে ভুল করেছেন কিংবা ঝিমুনির কারণে সিগন্যাল তাঁর চোখেই পড়েনি। ফলে ঘটে গিয়েছে দুর্ঘটনা। সংসদীয় কমিটির এক সদস্যের মতে, ‘‘আসলে চালকের সংখ্যা খুবই কম। তাই মালগাড়ি বা এক্সপ্রেস— সব ট্রেনের চালককেই নিয়মিত ভাবে অতিরিক্ত সময় ধরে কাজ করে যেতে হয়। নির্দিষ্ট শারীরিক সীমার বাইরে গিয়ে কাজ করতে হচ্ছে প্রতিটি চালককে।’’ যার প্রভাব পড়ছে রেলের সুরক্ষায়।
২০১৬ সালে রেলের একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি চালকদের বাড়তি সময় কাজ করানোর সমালোচনা করেছিল। তাঁদের কাজের জন্য সময়সীমা নির্দিষ্ট করে দেওয়ার প্রস্তাবও করা হয়। বলা হয়, ট্রেনের কোনও চালককেই টানা ১০ ঘণ্টা এবং ১৫ দিনে ১২৫ ঘণ্টার বেশি কাজ করানো ঠিক নয়। কিন্তু সংসদীয় কমিটির পর্যবেক্ষণ, মূলত চালকের অভাবে সেই নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখানো হচ্ছে। এক জন চালক পর্যাপ্ত বিশ্রাম পাওয়ার আগেই তাঁর হাতে অন্য ট্রেনের দায়িত্ব জোর করে তুলে দেওয়া হচ্ছে। ফলে অনিচ্ছা সত্ত্বেও ট্রেন ছোটাতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন যাত্রীরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy