Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

‘ভিআইপিরা’ বুথে যান না, দেখাল দিল্লি

হাফ-সেঞ্চুরি হল, শেষ বেলায় চালিয়ে খেলে ছোঁয়া গেল গত বারের রেকর্ড। কিন্তু লোকসভা বা বিধানসভার মতো এ বারেও নাক উঁচু দিল্লিবাসীর কাছে জাতে উঠতে পারল না দিল্লির পুরভোট! দিনের শেষে ২০১২ সালের মতো ৫৪ শতাংশ ভোট নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হল নির্বাচন কমিশনকে।

বড় নেতাদের তেমন দেখা গেল না বুথে। ছবি: পিটিআই।

বড় নেতাদের তেমন দেখা গেল না বুথে। ছবি: পিটিআই।

অনমিত্র সেনগুপ্ত
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০১৭ ০৪:২০
Share: Save:

হাফ-সেঞ্চুরি হল, শেষ বেলায় চালিয়ে খেলে ছোঁয়া গেল গত বারের রেকর্ড। কিন্তু লোকসভা বা বিধানসভার মতো এ বারেও নাক উঁচু দিল্লিবাসীর কাছে জাতে উঠতে পারল না দিল্লির পুরভোট! দিনের শেষে ২০১২ সালের মতো ৫৪ শতাংশ ভোট নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হল নির্বাচন কমিশনকে।

সকাল ন’টা। চিত্তরঞ্জন পার্কের দু’নম্বর মার্কেটের সামনে চেয়ার-টেবিল, ভোটার তালিকা তখনও ভাল করে সাজিয়ে উঠতে পারেননি বিভিন্ন দলের প্রতিনিধিরা। প্রশ্নে করতেই এক কর্মী জানালেন, ‘‘দাদা আজ রবিবার। বাজার সেরে নাস্তা করে লোক আসবে। তাই একটু দেরি করেই আয়োজন।’’

সামনেই রাইসিনা স্কুল। সামনে বড় মাঠে বাঁশের ব্যারিকেড ভিড় সামলাতে। কিন্তু ভিড়! তারই দেখা নেই ভোট শুরু হওয়ার আড়াই ঘন্টা পরেও। বুথে ঢুকে দেখা মিলল জনা তিনেক ভোটারের। এক পোলিং এজেন্ট জানালেন, সকাল থেকে নাকি ২২টি ভোট পড়েছে তার ঘরে। গোটা দিনেই একই ছবি দেখা গেল গোটা চিত্তরঞ্জন পার্কের বিভিন্ন বুথে। এলাকার কংগ্রেস প্রার্থী বীরেন্দ্র কাসানা ভোটারদের ধরতে বৈশাখের সকালে মাইকে চালিয়ে দিয়েছিলেন ‘ফাগুন লেগেছে বনে বনে’। কিন্তু সব চেষ্টার পরেও দেখা গেল বুথের সামনে ভোটারদের লাইন কম। রাস্তায় দলীয় কর্মীর ভিড় তার চেয়ে ঢের বেশি।

চিত্তরঞ্জন পার্কের এই ছবি দেখা গেল দক্ষিণ দিল্লির বিভিন্ন প্রান্তে। সাকেত থেকে নেহরু প্লেস, ডিফেন্স কলোনির বিভিন্ন বুথে ভোটাররা সংখ্যায় ছিলেন রীতিমতো কম। অনেকের মতে, এটা আসলে দিল্লির অভিজাততন্ত্রের উন্নাসিক মনোভাবের প্রকাশ। রাজধানীর বিত্তবান শ্রেণির অধিকাংশই কোনও না কোনও ভিআইপিকে চেনার সুবাদে নিজেরাও প্রায় ভিআইপি, ঠাট্টা করে এমনও বলেন অনেকে। বাস্তবেও দেখা গেল, আম আদমির সঙ্গে লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দেওয়ার কথা ভাবতেও পারেন না দিল্লির এই সব বাসিন্দা। তা ছাড়া রাস্তার খানাখন্দ, আর্বজনা নিয়ে ভাবার এত সময়ই বা কোথায় অভিজাত দিল্লির!

স্বাভাবিক ভাবেই অনেক বেশি ভোট পড়েছে আর্থিক ও প্রতিপত্তির দিক থেকে পিছিয়ে পড়া দিল্লির অন্য এলাকাগুলিতে।

নির্বাচন কমিশন আশা করেছিল, প্রথম ক’ঘণ্টা ভোট পড়ার হার কম হলেও বেলা বাড়লে ছবিটা পাল্টাবে। সকাল থেকেই ভোটারদের রাস্তায় নামাতে একের পর টুইট করছিল কমিশন। তার মধ্যে গত কাল বিকেলে দিল্লির নানা প্রান্তে আঁধি, শিলাবৃষ্টি দেখে হাসি ফুটেছিল কমিশন কর্তাদের। কিন্তু কোথায় কী! সকালের রোদ্দুর আগুন ঝরাতে দেখে বাড়ির ছায়া থেকে বার হতে চাননি অনেকেই।

এরই মধ্যে ছিল মোবাইল ফোন নিয়ে কড়াকড়ি। পটপরগঞ্জের ময়ূর পাবলিক স্কুলকে মডেল বুথ হিসেবে বানিয়েছিল কমিশন। সেখানে বৃদ্ধা মায়ের সঙ্গে ভোট দিতে এসেছিল প্রিয়া। হাতে মোবাইল দেখে আটকালেন পুলিশকর্মীরা। জানিয়ে দিলেন, ভিতরে মোবাইল নিয়ে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। হতাশ, ক্ষিপ্ত প্রিয়া বলেই দিলেন, ‘‘ধুত্তোর! আর আসব থোড়াই। এই রোদ্দুরে এতটা এসেছি। এখন ফিরে যেতে হচ্ছে। আর আসব না।’’

প্রিয়া একা নন। মোবাইলের কারণে অনেকেই এ দিন ভোট না দিয়ে বাড়ি ফিরে গিয়েছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

MCD Election Delhi VIP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE