রাজ্য বিজেপি মঙ্গলবার থেকেই সরব। বুধবার বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর তীব্র সমালোচনা শুরু করল কেন্দ্রীয় বিজেপিও। —ফাইল চিত্র।
সমাজবিরোধীরা পশ্চিমবঙ্গে সমান্তরাল সরকার চালাচ্ছে, আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেই সরকারকে রক্ষা করছেন। এমনই তীব্র ভাষায় এ দিন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকে আক্রমণ করলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মুখতার আব্বাস নকভি। বসিরহাট মহকুমা জুড়ে চলতে থাকা অশান্তির প্রেক্ষিতেই বিজেপি নেতা তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে এ দিন আক্রমণ করেছেন। রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠীর বিরুদ্ধে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মঙ্গলবার যে সব মন্তব্য করেছেন, বুধবার তারও কড়া সমালোচনা করেছে বিজেপি।
বাদুড়িয়া, স্বরূপনগর, বসিরহাট-সহ বিস্তীর্ণ এলাকায় অশান্তি শুরুর পর থেকেই রাজ্য বিজেপি মুখ্যমন্ত্রীর দিকে আঙুল তুলেছিল। তবে কেন্দ্রীয় বিজেপির তরফে মঙ্গলবার পর্যন্ত বিষয়টি নিয়ে কোনও মন্তব্য করা হয়নি। বুধবার মুখ খুললেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা তথা মোদী মন্ত্রিসভার সংখ্যালঘু মুখ নকভি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করে নকভি বলেছেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে সমাজবিরোধীরা এখন একটা সমান্তরাল সরকার চালাচ্ছে এবং রাজ্য সরকার সেই সমান্তরাল সরকারকে নিরাপত্তা দিচ্ছে।’’ রাজ্য সরকারের আশ্রয়ে থেকে যে ভাবে দুষ্কৃতী-রাজ চলছে, তাতে সাধারণ মানুষ অত্যন্ত আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন বলে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এ দিন মন্তব্য করেছেন। বিষয়টি অত্যন্ত গুরুতর আকার নিয়েছে বলেও তাঁর মত।
ফেসবুকে এক কিশোরের পোস্ট করা একটি আপত্তিকর ছবিকে কেন্দ্র করে গোলমাল ছড়ায় বাদুড়িয়ার রুদ্রপুর এলাকায়। রবিবারই সেই কিশোরকে পুলিশ গ্রেফতার করে। কিন্তু অশান্তি তাতে থামেনি, বরং পার্শ্ববর্তী স্বরূপনগর, বসিরহাট, হাসনাবাদ, হিঙ্গলগঞ্জ, হাড়োয়া, দেগঙ্গা, বারাসতে অশান্তি ছড়িয়ে পড়ে। সোমবার এবং মঙ্গলবার উত্তর ২৪ পরগনার বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে পথ অবরোধ, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ এবং আরও বিভিন্ন ধরনের হিংসাত্মক ঘটনা ঘটতে থাকে। মঙ্গলবার রাতে কেন্দ্রীয় বাহিনী পাঠানো হয়েছে উত্তপ্ত এলাকায়। কিন্তু পরিস্থিতি এখনও পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি বলে খবর।
অশান্তির আগুন যে ভাবে ছড়িয়েছে উত্তর ২৪ পরগনার বিস্তীর্ণ এলাকায়, তার জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই দায়ী করছে কেন্দ্রীয় বিজেপি। —নিজস্ব চিত্র।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মঙ্গলবারই এক সাংবাদিক বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছিলেন। তিনি সাম্প্রদায়িক অশান্তির কড়া নিন্দা করেন। গুন্ডামি বরদাস্ত করা হবে না বলে তিনি স্পষ্ট জানান। কিন্তু রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠীর বিরুদ্ধেও তীব্র ক্ষোভ উগরে দেন মমতা। তিনি জানান, রাজ্যপাল তাঁকে ফোন করে হুমকি দিয়েছেন, অসম্মানজনক ভাবে কথা বলেছেন। রাজ্যপালের কথা শুনে মনে হচ্ছিল বিজেপির কোনও ব্লক সভাপতি কথা বলছেন— এমন মন্তব্যও করেন মুখ্যমন্ত্রী।
আরও পড়ুন: ‘রাজভবন কখনই বিজেপি-র আস্তানা হতে পারে না’
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্য নিয়ে রাজ্যপাল গতকাল বিস্ময় প্রকাশ করেছিলেন। রাজভবনের তরফে প্রেস বিবৃতি জারি করে বলা হয়েছিল, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর আচরণ এবং ভাষা বিস্ময়কর।’’ এ দিন মুখতার আব্বাস নকভি বলেন, ‘‘রাজ্যপাল সম্পর্কে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্য কুরুচিকর এবং হতাশাব্যাঞ্জক।’’ তাঁর কথায়: ‘‘রাজ্যপাল এক জন সাংবিধানিক পদাধিকারী এবং পশ্চিমবঙ্গে যে ধরনের ঘটনা ঘটছে, রাজ্যপাল তা চুপচাপ দাঁড়িয়ে দেখতে পারেন না।’’ বিষয়টি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর কাছ থেকে তথ্য চেয়ে রাজ্যপাল ঠিকই করেছেন বলে নকভির অভিমত।
উত্তর ২৪ পরগনার বিস্তীর্ণ এলাকায় যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তা নতুন কোনও ঘটনা নয় বলে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এ দিন মন্তব্য করেছেন। দীর্ঘ দিন ধরেই এই পরিস্থিতি চলছে এবং রাজ্য সরকার দুষ্কৃতীদের প্রশ্রয় দিচ্ছে বলে তাঁর অভিযোগ। তাঁর আশ্বাস, পশ্চিমবঙ্গের মানুষের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং কেন্দ্রই এর সমাধান খুঁজে বার করার চেষ্টা করছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy