Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪
National News

কেউ কি হাতটা ছুঁল? ধ্বংসস্তূপের নীচে বিচিত্র অনুভূতি অল্পের জন্য রক্ষা পাওয়া জিনাতের

প্রথম বুঝতে পারলেন স্পর্শে! কেউ যেন তার হাতটা ছুঁয়ে দেখলেন! সেই ছোঁয়াতেই ২৩ বছর বয়সী জিনাত প্রথম টের পেলেন তিনি বেঁচে রয়েছেন। তার পর পা-টা নাড়াতে গেলেন। দেখলেন, পারছেন না। পায়ের উপর যে পড়ে রয়েছে ভারী একটা কিছু। যাঁরা জিনাতের হাত ছুঁয়েছিলেন, সেই জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর (এনডিআরএফ) সদস্য ও মুম্বইয়ের দমকল কর্মীরা তখনই বুঝে গিয়েছিলেন ধ্বংসস্তূপের নীচে চাপা পড়া জিনাতের শরীরে প্রাণ রয়েছে।

ধ্বংস্তূপের নীচ থেকে টেনে বের করা হল জিনাতের দেহ। ছবি- টুইটারের সৌজন্যে।

ধ্বংস্তূপের নীচ থেকে টেনে বের করা হল জিনাতের দেহ। ছবি- টুইটারের সৌজন্যে।

সংবাদ সংস্থা
মুম্বই শেষ আপডেট: ১৭ জুলাই ২০১৯ ১৮:০২
Share: Save:

রয়েছেন কোথায়, চেতনে না অবচেতনে, তা বুঝে ওঠার মতো অবস্থাতেই ছিলেন না তখন জিনাত সালমানি। অপারেশন থিয়েটারে অ্যানাস্থেশিয়া দেওয়ার পরেও যেমন রোগীর কানে যায় ডাক্তার, নার্সদের চাপা ফিসফাস, তেমনই কিছু চাপা আওয়াজ, জুতোর শব্দ, ফিসফাস কানে যাচ্ছিল জিনাতের। কিন্তু তা কোথা থেকে আসছে? কী ভাবেই বা তা বোঝা সম্ভব লোহার ভারী ভারী বিম, ভেঙে পড়া কংক্রিটের বিশাল চাঙড় আর দুমড়ে, মুচড়ে ভেঙে পড়া দরজা, জানলার কাঠের স্তূপের তলায় জমাট অন্ধকারে ডুবে থাকলে? চেতন আর অবচেতনের মধ্যে কোনও একটা অজানা জায়গায় থেকে জিনাতও বুঝতে পারেননি, সেই ফিসফাস আসছে কোথা থেকে?

প্রথম বুঝতে পারলেন স্পর্শে! কেউ যেন তার হাতটা ছুঁয়ে দেখলেন! সেই ছোঁয়াতেই ২৩ বছর বয়সী জিনাত প্রথম টের পেলেন তিনি বেঁচে রয়েছেন। তার পর পা-টা নাড়াতে গেলেন। দেখলেন, পারছেন না। পায়ের উপর যে পড়ে রয়েছে ভারী একটা কিছু। যাঁরা জিনাতের হাত ছুঁয়েছিলেন, সেই জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর (এনডিআরএফ) সদস্য ও মুম্বইয়ের দমকল কর্মীরা তখনই বুঝে গিয়েছিলেন ধ্বংসস্তূপের নীচে চাপা পড়া জিনাতের শরীরে প্রাণ রয়েছে। কারণ, ধুকপুক করছিল জিনাতের নাড়ি। শহর মুম্বইয়ের দমকল বিভাগের প্রধান প্রশান্ত রাহাঙ্গদালের কথায়, ‘‘ওই সময়ই আমরা প্রথম বুঝতে পারি, কোনও প্রাণের সঙ্গে আমাদের গোল্ডেন হ্যান্ডশেক হল!’’

তার পরেই ধ্বংসস্তূপের নীচ থেকে কংক্রিটের ভারী চাঙড় আর কাঠের স্তূপ সরিয়ে টেনে বের করে আনা হয় জিনাতকে। পাঠানো হয় মুম্বইয়ের জে জে হাসপাতালে। হাসপাতালের বিছানায় শুয়েই জিনাত বললেন, ‘‘ধ্বংসস্তূপের নীচে ছিল জমাট বাঁধা অন্ধকার। কিছুই ঠাওর করতে পারছিলাম না। আশপাশ থেকে শুধুই কানে আসছিল ফিসফাস। চাপা গুঞ্জন। পা নাড়াতে পারছিলাম না। ধ্বংসস্তূপের নীচে পায়ের উপর ভারী কিছু যেন চেপে বসেছিল।’’

মুম্বইয়ের ডোংরি এলাকায় বহুতল ভেঙে ১৪ জনের মৃত্যুর ঘটনার পর ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে একমাত্র যে মহিলাকে জীবন্ত অবস্থায় উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে, তিনি জিনাত সালমানি। বোন জিনাতের সঙ্গে সে দিন দেখা করতে এসেছিলেন তাঁর ২৫ বছর বয়সী দাদা জুবের আর ১৩ বছরের ভাই মুজাম্মিল।

দমকল কর্মীরা জানিয়েছেন, জুবের আর মোজাম্মিল সে দিন বাঁচতে পারেননি। মৃত্যু হয়েছে জিনাতের বৌদি সানা আর তাঁর শিশুপুত্র ইব্রাহিমেরও।

আরও পড়ুন- মুম্বইয়ে বহুতল ধসে মৃত বেড়ে ১৪, এখনও আটকে অনেকে​

আরও পড়ুন- মুম্বইয়ের বহুতল ধসে মৃত এগারো​

হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করতে করতে এখন জিনাতের কি দুই ভাই, বৌদি আর ছোট্ট ভাইপোর সঙ্গে সেই শেষ সাক্ষাতের কথাই মনে পড়ছে?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE