Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
পাশ স্থলসীমান্ত চুক্তি

মমতা-হাসিনাকে ফোন উল্লসিত মোদীর

দীর্ঘ ৪১ বছরের অপেক্ষার পর আজ ভারত-বাংলাদেশ স্থলসীমান্ত চুক্তি সংক্রান্ত বিলটি সংসদে পাশ করিয়ে এক ঢিলে একাধিক বার্তা দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এক দিকে তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফোন করে ‘বাধাই’ জানালেন। বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এক ধাক্কায় অনেকটাই এগিয়ে দেল আজ।

অগ্নি রায়
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৮ মে ২০১৫ ০৩:০৮
Share: Save:

দীর্ঘ ৪১ বছরের অপেক্ষার পর আজ ভারত-বাংলাদেশ স্থলসীমান্ত চুক্তি সংক্রান্ত বিলটি সংসদে পাশ করিয়ে এক ঢিলে একাধিক বার্তা দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এক দিকে তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফোন করে ‘বাধাই’ জানালেন। বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এক ধাক্কায় অনেকটাই এগিয়ে দেল আজ। অন্য দিকে তাঁর সঙ্গে গত এক বছর সংঘর্ষের রাস্তায় হাঁটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও একটি ইতিবাচক বার্তা পাঠালেন মোদী, মুখ্যমন্ত্রীর চাহিদা মেনে পুনর্বাসন প্যাকেজ ঘোষণা করে। আগামী শনিবার তাঁর কলকাতা সফরের প্রাক্কালে এ’টি প্রধানমন্ত্রীর একটি কুশলী রাজনৈতিক পদক্ষেপ বলেই মনে করা হচ্ছে।

গত কাল রাজ্যসভার মতো আজ লোকসভাতেও ভোটাভুটিতে সর্বসম্মতিক্রমে পাশ হল স্থলসীমান্ত চুক্তি সংক্রান্ত বিলটি। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে দু’দিকের ছিটমহলের মানুষের পুর্নবাসনের জন্য গত ডিসেম্বর মাসে নবান্ন থেকে কেন্দ্রীয় সরকারকে লেখা একটি চিঠিতে ঠিক যা-যা চাওয়া হয়েছিল, তা দেওয়ার কথা আজ ঘোষণা করল কেন্দ্র। বিদেশমন্ত্রী সূষমা স্বরাজ ব্যক্তিগত ভাবে এই নিয়ে মমতার সঙ্গে কথা বলেছেন। আজ লোকসভায় এ ব্যাপারে বিশদ ঘোষণাও করেছেন তিনি।

গত কাল রাজ্যসভার পর আজ লোকসভায় বিলটি পাশ হওয়ার বিষয়টি ছিল নিছকই সময়ের অপেক্ষা। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে আবেগ আজ দু’দেশের সীমানা মুছে দিয়েছে। আজ নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সৈয়দ মুয়াজ্জম আলি এই বিলটিকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, ‘‘এটি একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ।’’ প্রধানমন্ত্রী নিজে আজ কথা বলেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে। পরে তিনি ট্যুইট করে বলেছেন, ‘‘এই মাইলফলক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আমি বাংলাদেশের সব মানুষকে আমার শুভেচ্ছা জানিয়েছি।’’ মোদী ধন্যবাদ জানিয়েছেন সনিয়া গাঁধী-সহ সমস্ত বিরোধী নেতা এবং পশ্চিমবঙ্গ-সহ বাংলাদেশের লাগোয়া রাজ্যগুলির মুখ্যমন্ত্রীদেরও। বিকেলে মোদী যখন মমতাকে ফোন করে শুভেচ্ছা জানান, মুখ্যমন্ত্রীও তাঁকে রাজ্যে স্বাগত জানান। তৃণমূলের পক্ষ থেকেও সাংসদ সুগত বসু লোকসভায় একটি আবেগঘন বক্তৃতা দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের কথা স্মরণ করেছেন। তৃণমূল নেতৃত্ব ঘরোয়া ভাবে জানাচ্ছেন, এই বিলের ফলে উপকৃত হবেন পশ্চিমবঙ্গের ভূখণ্ডে অবস্থিত ছিটমহলের বাসিন্দারাও।

রাজনৈতিক সূত্রের খবর, রাজ্যের মানুষের পুনর্বাসনের বিষয়টি নিয়ে গত ডিসেম্বর মাসেই সক্রিয় হয় পশ্চিমবঙ্গ সরকার। গত বছর ডিসেম্বর মাসে রাজ্যের মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্র একটি চিঠি লেখেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব এবং বিদেশসচিবকে। সেখানে ছিটমহলের বাসিন্দাদের পরিস্থিতি এবং স্পর্শকাতরতার বিষয়টি বিশদে বর্ণনা করে ৩০০৯ কোটি টাকা চাওয়া হয়। আজ লোকসভায় বিলটি পাশ করার আগে বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ জানিয়েছেন, ‘‘বাংলাদেশ থেকে আসা মানুষদের পুর্নবাসনের জন্য আমরা পশ্চিমবঙ্গকে ৩০০৮ কোটি টাকার প্যাকেজ দিচ্ছি। আমাদের হিসাব অনুযায়ী ৩৫,০০০ মানুষের পুর্নবাসন দরকার। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই প্যাকেজ চেয়েছিলেন।’’

নবান্ন থেকে ডিসেম্বরের ৬ তারিখ যে চিঠিটি কেন্দ্রকে পাঠানো হয়েছিল, সেখানে বলা হয় রাজ্য কেন্দ্রীয় প্যাকেজের জন্য যে প্রস্তাবটি দিচ্ছে তা স্থানীয় জেলা প্রশাসন, পুলিশ ও স্বরাষ্ট্রসচিবের সঙ্গে কথা বলেই তৈরি করা হয়েছে। চিঠিতে রয়েছে, ‘বাংলাদেশের ভূখণ্ডে মোট ১১১টি ভারতীয় ছিটমহলে যে ৩৭,০০০ মানুষ রয়েছেন তাদের পুনর্বাসনের জন্য আমরা প্রস্তুত। যদি বাস্তব ক্ষেত্রে কম সংখ্যক মানুষ আসেন, তা হলে পুনর্বাসনের খরচ কম হবে। কিন্তু স্পর্শকতার সীমান্ত অঞ্চলের পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য সর্বোচ্চ আর্থিক পুঁজি নিয়েই প্রস্তুত থাকতে হবে।’ পাশাপাশি বলা হয়েছে সরকারের এই অর্থ যেন একটিমাত্র জায়গা থেকেই আসে। বিভিন্ন মন্ত্রক থেকে টাকা দেওয়া হলে কাজের ক্ষেত্রে অসুবিধা হয়।

কোচবিহারের বিষয়টি নিয়ে বিশেষ করে যত্নবান হওয়ার পরামর্শ কেন্দ্রকে দিয়েছে মমতা সরকার। চিঠিতে বলা হয়েছে কোচবিহার এমন একটি জেলা, যেখানে রাজবংশী অর্থাৎ তফশিলি জাতিই হল সংখ্যাগুরু। দেশের মধ্যে এখানেই সর্বাধিক তফশিলির হার (৫২শতাংশ)। ছিটমহল বিনিময়ের সময় এখানকার জনজাতির চরিত্র যাতে অক্ষুন্ন থাকে, সেটা মাথায় রাখতে হবে। কেএলও-র রাজনৈতিক এবং তাত্ত্বিক ঘাঁটি হল এই কোচবিহার। তারা এবং অন্যান্য বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনগুলি যাতে সামাজিক এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি না করতে পারে সেদিকেও নজর রাখা প্রয়োজন। এই চুক্তি বাস্তাবায়িত হলে বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহল ভারতে যুক্ত হবে। ভারতের ১১১টি ছিটমহল যাবে বাংলাদেশে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE