Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

৫৬ ইঞ্চি ভুলে প্রধানমন্ত্রী মোদী এখন রক্ষণাত্মক

ক্ষমতার আসার পরেও কত বার। পাক অধিকৃত জমিতে সেনার ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ বা পাঁচশো, হাজার টাকার নোট বাতিলের পরেও তাঁর ৫৬ ইঞ্চি ছাতির কথাই বলেছেন দলের নেতা-মন্ত্রী-সাংসদেরা।

কানপুরের জনসভায় নরেন্দ্র মোদী। সোমবার। ছবি: পিটিআই

কানপুরের জনসভায় নরেন্দ্র মোদী। সোমবার। ছবি: পিটিআই

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৩:৩৭
Share: Save:

তখনও প্রধানমন্ত্রী হননি। লোকসভা ভোটের প্রচারপর্বেই গোটা দেশ শুনেছিল ৫৬ ইঞ্চি ছাতির কথা।

ক্ষমতার আসার পরেও কত বার। পাক অধিকৃত জমিতে সেনার ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ বা পাঁচশো, হাজার টাকার নোট বাতিলের পরেও তাঁর ৫৬ ইঞ্চি ছাতির কথাই বলেছেন দলের নেতা-মন্ত্রী-সাংসদেরা। কিন্তু নোট বাতিলকে কেন্দ্র করে গত কয়েক সপ্তাহে একের পর এক ঘটনায় বেজায় চাপে নরেন্দ্র মোদী। এতটাই যে, গত আড়াই বছরের চেনা মেজাজ ভুলে হঠাৎই বেশ রক্ষণাত্মক তিনি। বিরোধীদের নিশানা করলেও সেই চড়া সুর যেন অনেকটাই উধাও।

যেমন এ দিন কানপুরে। ভোটমুখী উত্তরপ্রদেশের জনসভায় নরেন্দ্র মোদী তীব্র ভাষায় বিরোধীদের আক্রমণ করবেন, এমন প্রত্যাশা নিয়েই ভিড় জমিয়েছিলেন বিজেপি সমর্থকেরা। কিন্তু সভায় প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী রাজীব গাঁধীর প্রসঙ্গ টেনে মোদী যা বললেন, তাতে অনুযোগের সুরই যেন বেশি! কংগ্রেস দীর্ঘদিন ধরেই প্রচার করেছে, রাজীব গাঁধীর জন্যই এ দেশে কম্পিউটার ক্ষেত্রে বিপ্লব এসেছে। তাঁর দূরদর্শিতার কারণেই গরিবের হাতে-হাতে এখন মোবাইল। নগদ বাতিল করে ডিজিটাল লেনদেন বাড়ানোর বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে সভায় কংগ্রেসের সেই বক্তব্যেরই সূত্র টানলেন মোদী। বললেন, ‘‘আমার পরামর্শ ছিল, সেই মোবাইলকে নিজের ব্যাঙ্ক বানাক দেশবাসী। এ কথা বলতেই কংগ্রেস এখন বলছে, সবার হাতে মোবাইল কোথায়! এরা মানুষকে কী ভাবে ভুল পথে চালিত করছে, তা দেশবাসী দেখে রাখুক।’’

গত শুক্রবারই আগাগোড়া পণ্ড হয়ে যাওয়া শীতকালীন অধিবেশনের শেষ দিনে দলীয় সাংসদদের সামনে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গাঁধীর উদাহরণ তুলেছিলেন মোদী। এ দিন টানলেন রাজীবের কথা। যে ভাবে গত এক সপ্তাহে নিজের সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা বোঝাতে গিয়ে ইন্দিরা-রাজীবের শরণাপন্ন হলেন মোদী, তা দেখে দলের লোকেরাই বলছেন, এই মোদী চেনা ছকে ব্যাট করছেন না। ইনি অনেক বেশি রক্ষণাত্মক।

আসলে মোদী-অমিত শাহদের দুশ্চিন্তা বাড়িয়েছেন উত্তরপ্রদেশের বিজেপি সাংসদেরাই। শীতকালীন অধিবেশন শেষ হওয়ার আগের দিন অমিত শাহের সঙ্গে বৈঠকে ওই সাংসদদের একাংশ জানিয়ে দেন, নোট বাতিলের সিদ্ধান্তে উত্তরপ্রদেশে শুধু দলের নয়, মোদীরও ভাবমূর্তি খারাপ হচ্ছে। ডিসেম্বরের মধ্যে পরিস্থিতি না ঠিক হলে বিধানসভা ভোটে ভাল ফলের আশা নেই। দলের শীর্ষ নেতৃত্বও বুঝতে পারছেন, নগদের অভাবে কৃষক-শ্রমিকেরা মজুরি পাচ্ছেন না, বন্ধ হয়ে যাচ্ছে কলকারখানা। যার দায় বিজেপিকে নিতেই হবে। আর তাই মোদী বা কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি যতই দীর্ঘমেয়াদে অর্থনীতির উন্নয়নের কথা বলুন, নিচু তলার নেতা-কর্মীরা বুঝতে পারছেন, এতে আমজনতার সমস্যা বা ক্ষোভ কোনওটাই মিটবে না। আর তাই আগের চেয়ে রক্ষণাত্মক ভঙ্গিতে প্রচার করতে হচ্ছে খোদ মোদীকেও।

এ দিন নোট বাতিলের সুফলের থেকেও মোদী বেশি বলেছেন বিরোধীদের নিয়ে। কালো টাকার পক্ষে বিরোধীরা সওয়াল করছে বলে অভিযোগ তাঁর। উত্তরপ্রদেশে উন্নয়নের প্রতিশ্রুতির কথা তত শোনা যায়নি মোদীর মুখে। বরং কালো টাকা ও নির্বাচনী সংস্কার নিয়েই এ দিন বেশি সরব ছিলেন তিনি।

নির্বাচনী সংস্কার

বিজেপি দীর্ঘদিন ধরেই লোকসভা-বিধানসভা নির্বাচন এক সঙ্গে করার পক্ষে। সোমবার কানপুরের সভায় ফের বিষয়টি তোলেন মোদী। নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক দলগুলির তহবিলে বেনামে দেওয়া চাঁদার সীমা কমিয়ে দু’হাজার করার সিদ্ধান্তকেও এ দিন সর্মথন জানান তিনি। বিজেপি সূত্রে জানানো হয়েছে, দেশের প্রায় ১৮০০টি রাজনৈতিক দলের মাত্র ৪০০টি নির্বাচনে লড়ে। যারা লড়ে না, তাদের তহবিল খতিয়ে দেখার বিষয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু হয়েছে। কেন না সরকার মনে করছে, কালো টাকা সাদা করতেই ওই দলগুলির অধিকাংশ গড়ে তোলা হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Narendra Modi Kanpur Rajiv Gandhi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE