আজকের যুগেও সমান প্রাসঙ্গিক সওয়া শতক আগের ভাষণ। ছাত্র সমাবেশে এ কথাই বোঝানোর চেষ্টা করলেন মোদী। ছবি: পিটিআই।
১৮৯৩ সাল। ১০ সেপ্টেম্বর। অনেক চেষ্টার পর শিকাগোর ধর্ম মহাসম্মেলনে ভাষণ দেওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন গেরুয়া বসনধারী এক তরুণ ভারতীয় সন্ন্যাসী। কিন্তু ভাষণ শুরু হতেই সম্ভবত দেওয়ালে লেখা হয়ে গিয়েছিল, শিকাগোর সম্মেলনে সেই ভারতীয় সন্ন্যাসীর অংশগ্রহণের আখ্যান কালোত্তীর্ণ হয়ে উঠবে। ১২৫ বছর কেটে যাওয়ার পরও বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের প্রধানমন্ত্রী স্বামী বিবেকানন্দের সেই শিকাগো বক্তৃতার সম্মানে ভাষণ দিলেন। আজও কতটা প্রাসঙ্গিক সওয়া শতক আগের সেই বার্তা, দুই নরেন্দ্রর ভাষণের টুকরো টুকরো অংশ পাশাপাশি রাখলেই বেশ স্পষ্ট হয় সে ছবিটা।
আরও পড়ুন: স্বামীজির সেই ৯/১১ সম্প্রীতির তারিখ ছিল
আরও পড়ুন: শিক্ষকদের ফূর্তির জন্য মাংস রাখল ছাত্ররা, আনল মদও
স্বামী বিবেকানন্দ, ৯/১১, ১৮৯৩:
আমি ঐকান্তিক ভাবে আশা করি, আজ সকালে এই মহাসম্মেলনের সম্মানে যে ঘণ্টা বাজানো হয়েছে, তা হবে সব গোঁড়ামি, নিপীড়ন এবং একই লক্ষ্যে পৌঁছতে চাওয়া মানুষদের মধ্যে পরস্পরের ছিদ্রান্বেষণের ইচ্ছার মৃত্যুঘণ্টা।
অসহিষ্ণুতা বিতর্কে বিদ্ধ নরেন্দ্র মোদীর পক্ষে আজ নিজের সংগঠনের লোকজনকে সামলানোই কষ্টকর হয়ে উঠছে। গো-রক্ষার নামে মানুষের উপর অত্যাচার নয়— এমন স্পষ্ট বার্তা দিয়েও স্বঘোষিত গো-রক্ষকদের ঠেকাতে পারছেন না তিনি। তাই গেরুয়া বসনধারী সন্ন্যাসীর ১২৫ বছর আগের ভাষণকে হাতিয়ার করে সম্প্রীতির বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করলেন মোদী:
নরেন্দ্র মোদী, ৯/১১, ২০১৭:
আজ ৯/১১। এই তারিখটা নিয়ে খুব বেশি চর্চা শুরু হল ২০০১ সালের পর থেকে। কিন্তু ১৮৯৩ সালের ৯/১১ ছিল ভালবাসা, সম্প্রীতি এবং সৌভ্রাতৃত্বের।
শুধু ধর্মীয় নেতা নন, বিবেকানন্দ জাতীয়তাবাদীও ছিলেন। প্রমাণ শিকাগোর ভাষণেই:
স্বামী বিবেকানন্দ, ৯/১১, ১৮৯৩:
আমি সেই ধর্মের মানুষ হতে পেরে গর্বিত, যে ধর্ম গোটা পৃথিবীকে সহিষ্ণুতা এবং বিশ্বজনীনতার শিক্ষা দিয়েছে। ... আমরা চিরন্তন সহিষ্ণুতায় বিশ্বাস করি, শুধু তাই নয়, আমরা সব ধর্মমতকেই সত্য বলে স্বীকার করি। আমি সেই জাতির প্রতিনিধি হিসেবে গর্বিত, যে জাতি পৃথিবীর সব ধর্মের এবং সব জাতির নিপীড়িত মানুষকে এবং শরনার্থীদের আশ্রয় দিয়েছে।
কিন্তু বিবেকানন্দের জাতীয়তাবাদের সঙ্গে আজকের গেরুয়া জাতীয়তাবাদের ফারাক বিস্তর। এই জাতীয়তাবাদ আত্মসমালোচনা করতে শেখেনি। কিন্তু আত্মসমালোচনাও যে অত্যন্ত জরুরি, বিবেকানন্দের ভাষণকে হাতিয়ার করে তা আজ বোঝানোর চেষ্টা করলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী:
নরেন্দ্র মোদী, ৯/১১, ২০১৭:
স্বামী বিবেকানন্দ যখন বিদেশে গিয়ে ভাষণ দিয়েছিলেন, তখন তিনি ভারতের মহানতাকেই তুলে ধরেছিলেন। কিন্তু দেশের মধ্যে যখন তিনি কথা বলতেন, তখন আমাদের নিজেদের সমস্যাগুলোর উপরেই জোর দিতেন।
বহুত্ব এবং সহিষ্ণুতার বার্তা ছিল স্বামীজির শিকাগোর ভাষণের মূল সুর:
স্বামী বিবেকানন্দ, ৯/১১, ১৮৯৩:
সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মান্ধতা এবং তাদের ভয়ঙ্কর উত্তরসূরি গোঁড়ামি দীর্ঘ কাল এই সুন্দর পৃথিবীকে দখল করে রেখেছে। তারা পৃথিবীকে হিংসায় পরিপূর্ণ করেছে, মাঝে মাঝেই পৃথিবীকে মানুষের রক্তে ভিজিয়ে দিয়েছে, সভ্যতা ধ্বংস করেছে...।
নরেন্দ্র মোদীর দল ভারতের বহুত্বকে মেনে নিতে কতটা প্রস্তুত, সে নিয়ে বিতর্ক বিস্তর। সে প্রসঙ্গে মোদী নিজে মুখ খুলতে কতটা প্রস্তুত, তা নিয়েও সংশয় রয়েছে। কিন্তু ধর্মীয় আচার আর গোঁড়ামি যে ঈশ্বরের সঙ্গে মানুষের সংযোগ স্থাপনের পথ হতে পারে না, সে বার্তাটুকু অন্তত দেওয়ার চেষ্টা করলেন মোদী:
নরেন্দ্র মোদী, ৯/১১, ২০১৭:
স্বামী বিবেকানন্দ জ্ঞান দেওয়ায় বিশ্বাস করতেন না। ... তিনি বলতেন ধর্মীয় আচার কখনও মানুষকে ঈশ্বরের সঙ্গে জুড়তে পারে না। তিনি বলতেন ‘জন সেবা হল ঈশ্বর সেবা’।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy