Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

ক্ষুব্ধ মোদী, অলোক নাছোড়ই

সিবিআইয়ের ডিরেক্টর অলোক বর্মা ও স্পেশাল ডিরেক্টর রাকেশ আস্থানার বিবাদ তুঙ্গে। আস্থানার বিরুদ্ধে এফআইআর হয়েছে। সিবিআই দফতরে বেনজির ভাবে সিবিআই হানা দিয়ে আজ এক অফিসারকে গ্রেফতারও করেছে।

অলোক বর্মা ও রাকেশ আস্থানা

অলোক বর্মা ও রাকেশ আস্থানা

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৩ অক্টোবর ২০১৮ ০২:৫৩
Share: Save:

সিবিআইয়ের গৃহযুদ্ধ নিয়ে রাহুল গাঁধীর ঝাঁঝাঁলো আক্রমণ আসতেই নড়ে বসল প্রধানমন্ত্রীর দফতর। জানাল, নরেন্দ্র মোদী ইতিমধ্যেই বিষয়টি নিয়ে পদক্ষেপ করেছেন।

সিবিআইয়ের ডিরেক্টর অলোক বর্মা ও স্পেশাল ডিরেক্টর রাকেশ আস্থানার বিবাদ তুঙ্গে। আস্থানার বিরুদ্ধে এফআইআর হয়েছে। সিবিআই দফতরে বেনজির ভাবে সিবিআই হানা দিয়ে আজ এক অফিসারকে গ্রেফতারও করেছে। এই আবহে রাহুল গাঁধী আজ সকালেই টুইট করে বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর নয়নমণি, গোধরা এসআইটি খ্যাত গুজরাত ক্যাডারের অফিসার সিবিআই-এ দ্বিতীয় শীর্ষ পদে আসীন। এখন তাঁকে ঘুষ নেওয়ার জন্য ধরা হচ্ছে। এই প্রধানমন্ত্রীর অধীনে সিবিআইকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে আসছে। এখন নিজেদের মধ্যে যুদ্ধ করেই প্রতিষ্ঠানটি অন্তিম পতনের দিকে এগোচ্ছে।’’

সিবিআইয়ের এক নম্বর ও দুই নম্বরের দ্বৈরথে মোদী যে আস্থানার দিকেই ঝুঁকে, এই মোক্ষম তিরটি রাহুল নিক্ষেপ করার পরেই নড়ে বসে প্রধানমন্ত্রীর দফতর। সচিবালয় সূত্রে জানানো হয়, প্রধানমন্ত্রী আদৌ চুপ করে বসে নেই। পরিস্থিতি সামাল দিতে তিনি কালই হস্তক্ষেপ করেছেন। অলোক বর্মার সঙ্গে দেখা করেছেন। আস্থানাকেও ডেকে পাঠানো হয়েছে।

সরকারের এক সূত্রের মতেও, সিবিআই নিয়ে ভোটের আগে যে ভাবে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে, তাতে অসন্তুষ্ট মোদী। এখন সিবিআই প্রধানকে ‘শান্ত’ করে গোটা বিষয়টি সামাল দেওয়ার ভার সেন্ট্রাল ভিজিল্যান্স কমিশনকে (সিভিসি) দেওয়া হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী দফতরের অধীন পার্সোনেল মন্ত্রক আস্থানার বিরুদ্ধে এফআইআর করা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। তাদের মতে, এ ধরনের এফআইআর করতে হলে আগাম অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন হয়। কিন্তু তা নেওয়া হয়নি।

আস্থানা আজ আইনজীবীদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। তাঁর শিবিরের মতে, এর আগে ২৪ অগস্ট ও ১৮ অক্টোবর আস্থানা ক্যাবিনেট সেক্রেটারির কাছে অলোকের বিরুদ্ধে দু’টি অভিযোগ জমা দিয়েছিলেন। সেখানে বলা হয়েছিল, সতীশ সানা আসলে অলোককেই ২ কোটি টাকা ঘুষ দিয়েছেন। এখন অলোক যে উল্টো অভিযোগ করছেন, তা ভুয়ো বলে আস্থানা-ঘনিষ্ঠদের দাবি।

কিন্তু এখনও অবধি দমে যাওয়ার ইঙ্গিত দেননি সিবিআই ডিরেক্টর। বরং দু’-এক দিন আগে আস্থানাকে সাসপেন্ড করা জন্য নোট পাঠানো হয়েছে। মাংস ব্যবসায়ী মইন কুরেশির মামলার তদন্তকারী অফিসার, সিবিআইয়ের ডিএসপি দেবেন্দ্র কুমারকে আজ গ্রেফতার করা হয়েছে। সিবিআই বিবৃতি জারি করে দাবি করেছে, এই অফিসারই অলোকের বিরুদ্ধে আস্থানার ‘ভুয়ো’ অভিযোগ প্রমাণের জন্য সতীশ সানার ‘ভুয়ো বিবৃতি’ নিয়েছিলেন। সতীশ আবার— সিবিআইয়ের দাবি— কুরেশি মামলা থেকে অব্যাহতি পেতে আস্থানাকে ঘুষ দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ করেছেন। সিবিআই বলছে, ২৬ সেপ্টেম্বর দেবেন্দ্র দিল্লিতে সানার বিবৃতি নেন বলে নথিভুক্ত রয়েছে। অথচ সে দিন সানা দিল্লিতে ছিলেন না।

তবে ভোটের মুখে এই গৃহযুদ্ধ চিন্তা বাড়াচ্ছে বিজেপিরই। দলের নেতারা বলছেন, অগস্ট মাস থেকেই যখন বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতে শুরু করেছে, প্রধানমন্ত্রী আগেই হস্তক্ষেপ করতে পারতেন। আস্থানার বিরুদ্ধে এফআইআর হয়েছে ১৫ অক্টোবর। প্রধানমন্ত্রী এ ক্ষেত্রেও এক সপ্তাহের বেশি সময় নিলেন। ইতিমধ্যেই রাফাল নিয়ে প্রশান্ত ভূষণ, যশবন্ত সিন্‌হাদের সঙ্গে দেখা করেছেন অলোক। এ সবে রাহুল গাঁধীর হাতই শক্ত হচ্ছে বলে তাঁদের আশঙ্কা। বিজেপির এক নেতা এ দিন বললেন, ‘সিবিআইয়ের দুই প্রাক্তন ডিরেক্টর রঞ্জিত সিন্‌হা, এ পি সিংহের পর আস্থানার বিরুদ্ধে এফআইআর। রাহুর গ্রাস লেগেছে সিবিআইতে।’’ তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কটাক্ষ, ‘‘চোর চোরদের ধরতে গিয়েছে! এর চেয়ে হাস্যকর কিছু হয় না!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE