Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
বরাক

সংসদে পাশ, তবু দিশা নেই জাতীয় জলপথের

করিমগঞ্জের ভাঙ্গা থেকে শিলচর হয়ে লক্ষ্মীপুর অবধি বরাক নদীর ১২১ কিলোমিটার অংশ ৬ নম্বর জাতীয় জলপথ হিসেবে ঘোষণার জন্য দু’-দু’বার সংসদে বিল পাশ হয়েছে। কিন্তু এখনও তা আইনে পরিণত হয়নি। ফলে এক দশক আগে যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল, এখনও একই জায়গা থেকে সেই কাজই ফের শুরু করতে হবে। শিলচরের সাংসদ সুস্মিতা দেব জাহাজ চলাচল মন্ত্রী নীতীন গডকড়ীর সঙ্গে দেখা করে ফের লোকসভায় ৬নং জাতীয় জলপথ বিল আনার দাবি জানিয়েছেন।

উত্তম সাহা
শিলচর শেষ আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:৪৫
Share: Save:

করিমগঞ্জের ভাঙ্গা থেকে শিলচর হয়ে লক্ষ্মীপুর অবধি বরাক নদীর ১২১ কিলোমিটার অংশ ৬ নম্বর জাতীয় জলপথ হিসেবে ঘোষণার জন্য দু’-দু’বার সংসদে বিল পাশ হয়েছে। কিন্তু এখনও তা আইনে পরিণত হয়নি। ফলে এক দশক আগে যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল, এখনও একই জায়গা থেকে সেই কাজই ফের শুরু করতে হবে। শিলচরের সাংসদ সুস্মিতা দেব জাহাজ চলাচল মন্ত্রী নীতীন গডকড়ীর সঙ্গে দেখা করে ফের লোকসভায় ৬নং জাতীয় জলপথ বিল আনার দাবি জানিয়েছেন।

চতুর্দশ লোকসভায় বিলটি সংসদের দুই কক্ষেই অনুমোদিত হয়েছিল। তার পুনরাবৃত্তি ঘটে পঞ্চদশ লোকসভাতেও। কিন্তু সেই বিলকে আইনে পরিণত করার উদ্যোগ কোনও বারই নেওয়া হয়নি। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরের জন্য বিলটি না পাঠানোয় তা খারিজ হয়ে যায়। সুস্মিতার কথায়, ‘‘ষোড়শ লোকসভার মেয়াদের মধ্যে একে আইনে পরিণত করা গেলে ‘ভাঙ্গা-শিলচর-লক্ষ্মীপুর’ ৬ নম্বর জাতীয় জলপথ হিসেবে চিহ্নিত হবে। তখন ভারত-বাংলাদেশ চুক্তিকে কাজে লাগিয়ে কলকাতা, হলদিয়া থেকে বাংলাদেশ হয়ে বরাক উপত্যকায় পণ্য পরিবহণের পথ সুগম হবে।’’

জাহাজ পরিবহণ মন্ত্রক সূত্রে জানা গিয়েছে, ৬ নম্বর জাতীয় জলপথ আইন জারির সঙ্গে সঙ্গে দু’টি পর্বে মোট ১২১ কিলোমিটার জলপথ তৈরি হবে। প্রথমে ভাঙ্গা-শিলচর ৭০ কিলোমিটার, পরে শিলচর-লক্ষ্মীপুর ৫১ কিলোমিটার। নেভিগেশন, চ্যানেল মার্কিং, টার্মিনাল নির্মাণ, ট্রানজিট শেড তৈরি ইত্যাদির জন্য ১২৩ কোটি ৩০ লক্ষ টাকা প্রয়োজন। বছরে সংস্কার বাবদ ব্যয় হবে ৩ কোটি ১৬ লক্ষ টাকা।

এর আগে সীতারাম ইয়েচুরির নেতৃত্বাধীন স্ট্যান্ডিং কমিটিও এই রুটের সম্ভাবনা নিয়ে সদথর্ক মন্তব্যই করেছিল। রিপোর্টে উল্লেখ করেছিল, প্রস্তাবিত জলপথের মাধ্যমে বছরে ১২ লক্ষ ৪৫ হাজার টন পণ্যসামগ্রী পরিবহণ করা সম্ভব হবে। লক্ষ্মীপুর, শিলচর, বদরপুর এবং করিমগঞ্জ টার্মিনালের মাধ্যমে বাঁশ, সিমেন্ট, সার, তেল, চাল, পাথর, চা, চিনি, কফি ইত্যাদি আমদানি-রফতানি করা যাবে। এই রুটটি স্থল এবং রেল পরিবহণের বিকল্প হতে পারবে।

১৮৩২ সালে কাছাড় অধিগ্রহণের পর ব্রিটিশরা যখন একটি শাসনকেন্দ্র স্থাপনের কথা ভাবে, তখন এই নদী তীরই তাদের ভাবনায় বিশেষ গুরুত্ব পায়। যে কারণে প্রথমে তারা দুধপাতিলকে বেছে নেয়। পরবর্তী সময়ে শিলচরের গুরুত্ব বাড়ে ওই একই কারণে। কার্যত জলের সঙ্গেই যে বরাক উপত্যকার জীবন ও সংস্কৃতি বরাবরই জড়িয়ে রয়েছে তা এখানকার নদী-ব্যবস্থা নিয়ে নানা নথিতেও বার বার উল্লিখিত হয়েছে। বরাক ভ্যালি পেম্বারটন রিপোর্ট, স্ট্যাটিস্টিক্যাল অ্যাকাউন্ট অব আসাম এবং ডিস্ট্রিক্ট গেজেটিয়ারে স্পষ্ট করেই বলা হয়েছে, তখন সম্পূর্ণ জলপথ-নির্ভর যোগাযোগই ছিল বরাকে। দেশভাগের পর জলপথ ভাগাভাগি হয়ে যাওয়ায় এবং দুই দেশের নিয়ম-বিধির দরুন বরাক উপত্যকায় জাহাজ পরিষেবা কমতে শুরু করে। তবু ষাটের দশকেও জাহাজ এসে নোঙর করত সদরঘাটে। এরপর ব্যবধান ক্রমে বাড়তে থাকে। ১৯৬৬ ও ১৯৭৬ সালে বন্যার সময় ত্রাণ নিয়ে জাহাজ এসেছিল এই অঞ্চলে। তারপর দীর্ঘ ব্যবধান।

গত চার-পাঁচ বছর ধরে আবার বছরে একটি-দু’টি জাহাজ শিলচরে আসছে। মূলত বরাক ভ্যালি সিমেন্টস-এর ফ্লাই অ্যাশ, কেমিক্যাল জাতীয় বিভিন্ন সামগ্রী নিয়ে। একে নিয়মিত করা গেলে রফতানিও হতে পারে। টি অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়া এবারের অধিবেশনেও বরাকের চা-রফতানির জন্য জলপথের দাবি করেছে। এখানকার আনারস এবং বনজ দ্রব্য সহজে বাইরে পাঠানোও যেতে পারে।

তবে স্থল ও রেলপথের গুরুত্ব ক্রমশ বৃদ্ধির পর থেকেই নদীপারের এলাকাগুলি তাদের সাবেক অর্থনৈতিক গুরুত্ব হারিয়েছে। জাতীয় জলপথ চালু করা গেলে এই সব অঞ্চল আবারও সমৃদ্ধ হয়ে উঠবে বলেই মনে করেন তথ্যাভিজ্ঞ মহল। বরাক নদীর গভীরতা কমে যাওয়ায় কয়েক বছর পর পর এখানে বন্যা হয়। জাহাজ চলাচল করতে শুরু করলে নদীর গভীরতা বাড়াতে হবে। তাতে বরাক নদীর বন্যা-সমস্যারও অনেকটা হিল্লে হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE