Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
সাক্ষাত্কার

সময় বদলাচ্ছে বলেই নয়া শিক্ষা নীতি চাই

‘আমাদের লক্ষ্য, শিক্ষার মান উন্নত করা।’ শিক্ষা নীতি কেমন হবে— ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশবাসী নিজের নিজের মত জানান। চাইছেন কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকর।এই সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে যে শিক্ষা নিয়ে দলগত রাজনীতি হচ্ছে। এটা ঠিক যে কিছু মানুষ নতুন শিক্ষা নীতিকে সামনে রেখে রাজনীতি করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি শিক্ষা কোনও দলের কর্মসূচি হতে পারে না। এটি একটি জাতীয় কর্মসূচি।

শেষ আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০০:৫১
Share: Save:

এই সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে যে শিক্ষা নিয়ে দলগত রাজনীতি হচ্ছে।

এটা ঠিক যে কিছু মানুষ নতুন শিক্ষা নীতিকে সামনে রেখে রাজনীতি করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি শিক্ষা কোনও দলের কর্মসূচি হতে পারে না। এটি একটি জাতীয় কর্মসূচি। তাই শিক্ষা নীতির বিষয়ে সরকার কী করতে চাইছে তা না জেনে অকারণ সন্দেহের বশে বা ভুল ধারণার ভিত্তিতে এ নিয়ে নেতিবাচক প্রচার বা রাজনীতি করলে কারও লাভ হবে না। শিক্ষাব্যবস্থাকে সময়োপযোগী করে তোলার যে প্রচেষ্টা শুরু হয়েছে, তা ধাক্কা খাবে।

সংবিধানের ২৯ এবং ৩০ ধারায় সংখ্যালঘু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে যে অধিকার দেওয়া রয়েছে, বেশ কিছু স্থানে তা খর্ব করা হচ্ছে বলে আওয়াজ উঠেছে।

সংবিধানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে যে অধিকার দেওয়া হয়েছে তা কোনও ভাবেই খর্ব করা হবে না। বরং আমরা ইতিবাচক পদক্ষেপ করতে আগ্রহী। যাতে তফসিলি জাতি-জনজাতি, সংখ্যালঘু, ওবিসি ও সমাজের অন্যান্য পিছিয়ে পড়া বর্গ শিক্ষার ক্ষেত্রে সমান সুযোগ পায়। আর একটি বিষয় আমি স্পষ্ট করে দিতে চাই। সংবিধানে শিক্ষার ক্ষেত্রে সংরক্ষণের যে নিয়ম রয়েছে তাতেও কোনও পরিবর্তন আনা হচ্ছে না।

নতুন শিক্ষা নীতি নিয়ে অনেক রাজ্য আপত্তি তুলেছে।

শিক্ষা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর স্বচ্ছ ভাবনাচিন্তা রয়েছে। দশ বছর পর সম্প্রতি সমস্ত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের নিয়ে দিল্লিতে যে বৈঠক হয় তাতে মূলত চারটে বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। একটি বিষয় ছিল শিক্ষা। বৈঠকে থাকার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, প্রত্যেক মুখ্যমন্ত্রী শিক্ষার উন্নতি ও উপযুক্ত শিক্ষার প্রয়োজন রয়েছে বলে সরব হন। এই লক্ষ্যে তাঁরা নিজেদের রাজ্যে কী ধরনের পদক্ষেপ করেছেন তা-ও বিশদে জানান। আমি মনে করে এটি একটি শুভ সূচনা।

নতুন শিক্ষা নীতির প্রয়োজন কেন হল?

স্বাধীনতার পরে শিক্ষার ক্ষেত্রে একাধিক পদক্ষেপ করা হয়েছিল। একেবারে শুরুতে মুদালিয়র কমিশন গড়া হয়। তার পর বসে কোঠারি কমিশন। ১৯৮৬ সালে প্রথম জাতীয় শিক্ষা নীতি বানায় তৎকালীন সরকার। ছ’বছর পরে ১৯৯২ সালে তাতে কিছু পরিবর্তন করা হয়েছিল। তার পরে প্রায় ২৫ বছর কেটে গিয়েছে। সময় পাল্টেছে। কিন্তু শিক্ষা নীতিতে তার প্রতিফলন দেখা যায়নি। সেই কারণেই সময়ের চাহিদা মেনে এখন শিক্ষা নীতির পর্যালোচনা করার প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। তা ছাড়া দেশের ছাত্রদের মধ্যে উচ্চশিক্ষার আকাঙ্ক্ষা রয়েছে। যা আমাদেরই পূরণ করতে হবে। এটি একটি নিরন্তন প্রক্রিয়া। তাই সরকারের লক্ষ্য হল আলোচনা ও সর্বসম্মতির ভিত্তিতে একটি জাতীয় শিক্ষা নীতি প্রবর্তন করা।

সেই কারণে সরকার ২০১৫ সালের জানুয়ারি মাস থেকে এর পর্যালোচনা শুরু করে। পরামর্শ চাওয়া হয় সব পক্ষের কাছে। প্রথম পাঁচ মাসের মধ্যে ১ লক্ষ ১০ হাজার গ্রাম, ৩০১৫টি ব্লক, ৪০৬টি জেলা, ৯৬২টি স্থানীয় প্রতিনিধি সংগঠনের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা হয়। তাদের কাছে বহু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ পাওয়া গিয়েছে। এগিয়ে এসেছে রাজ্যগুলিও। ২১টি রাজ্য প্রাথমিক ও উচ্চশিক্ষার উন্নতি ও বিষয়সূচিকে সময়োপযোগী করে তোলার জন্য পরামর্শ দিয়েছে। একই সঙ্গে ছ’টি জোনাল বৈঠকে সব ক’টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও এ নিয়ে বৈঠক হয়েছে। ওই বৈঠকগুলিতে উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রীরা। সেখানে তাঁরা এ বিষয়ে তাঁদের মতামত জানিয়েছেন।

নতুন শিক্ষা নীতির মূল উদ্দেশ্য কী হবে?

এক কথায় বলতে গেলে মূলত পাঁচটি বিষয়কে মাথায় রেখে এই শিক্ষা নীতি বানানো হচ্ছে। সবার জন্য শিক্ষা, সামর্থ্যের মধ্যে শিক্ষা, গুণগত মান, পক্ষপাতহীনতা ও দায়বদ্ধতা। নতুন শিক্ষানীতির লক্ষ্যই হবে যাতে দেশীয় শিক্ষাকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করা সম্ভব হয়। গত সত্তর বছরে আমরা শিক্ষাকে দেশের মানুষের ঘরে পৌঁছে দিতে অনেকটাই সক্ষম হয়েছি। এখন আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে প্রাথমিক হোক বা উচ্চ শিক্ষা, সব ক্ষেত্রেই গুণগত মানকে উন্নত করা। তাই নতুন শিক্ষানীতির অন্যতম লক্ষ্য হল শিক্ষার মান উন্নয়ন। ঠিক ততটাই গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে সকলের কাছে সেই শিক্ষাকে পৌঁছে দেওয়া। তবেই সামাজিক ন্যয় সম্ভব। কী ভাবে নতুন শিক্ষা নীতিকে আরও আধুনিক ও উন্নত করা যায় সে জন্য সমস্ত দেশবাসীর কাছ থেকে পরামর্শ আহ্বান করছে কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রক। মন্ত্রকের ওয়েবসাইটে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নিজেদের পরামর্শ দিতে পারবেন আম জনতা। তার পরেই চূড়ান্ত করা হবে জাতীয় শিক্ষা নীতি।

সাক্ষাৎকার: অনমিত্র সেনগুপ্ত

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Education policy Ministry
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE