Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

আবেদন খারিজ, নির্ভয়ার ধর্ষকদের রায় মৃত্যুদণ্ডই

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখন আর দু’টো রাস্তা খোলা। অপরাধীরা ফের ‘কিউরেটিভ আপিল’ করতে পারে সুপ্রিম কোর্টেই, নয়তো সরাসরি ক্ষমার আর্জি জানাতে পারে রাষ্ট্রপতির কাছে।

সাংবাদিকদের মুখোমুখি জ্যোতির মা আশা দেবী। ফাইল চিত্র।

সাংবাদিকদের মুখোমুখি জ্যোতির মা আশা দেবী। ফাইল চিত্র।

সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১০ জুলাই ২০১৮ ০৪:০৭
Share: Save:

পুনর্বিবেচনার আর্জি সত্ত্বেও কমল না সাজা। শীর্ষ আদালতে বহাল রইল মৃত্যুদণ্ডই।

দিল্লির যুবতী জ্যোতি সিংহ ওরফে নির্ভয়ার গণধর্ষণ ও খুনের মামলায় গত বছর ফাঁসির সাজাপ্রাপ্ত তিন অপরাধী মুকেশ সিংহ (২৯), বিনয় শর্মা (২৩), এবং পবন গুপ্ত (২২) যাবজ্জীবন চেয়ে সাজা পুনর্বিবেচনার আবেদন জানিয়েছিল সুপ্রিম কোর্টে। প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্র, বিচারপতি আর ভানুমতী এবং বিচারপতি অশোক ভূষণের বেঞ্চ আজ সেই আর্জি খারিজ করে জানিয়েছে, সাজা পুনর্বিবেচনা করার মতো কোনও নতুন বিষয়ই তাঁদের চোখে পড়েনি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখন আর দু’টো রাস্তা খোলা। অপরাধীরা ফের ‘কিউরেটিভ আপিল’ করতে পারে সুপ্রিম কোর্টেই, নয়তো সরাসরি ক্ষমার আর্জি জানাতে পারে রাষ্ট্রপতির কাছে।

২০১২-র ১৬ ডিসেম্বরের রাত। দিল্লির চলন্ত বাসে জ্যোতিকে গণধর্ষণ ও নৃশংস অত্যাচারের পরে রাস্তায় ছুড়ে ফেলে দিয়েছিল ছ’জনের দলটি। গুরুতর আহত হয়েছিলেন জ্যোতির বন্ধুও। ১৩ দিন লড়াইয়ের পরে সিঙ্গাপুরের হাসপাতালে মারা যান জ্যোতি। অন্যতম অভিযুক্ত, বাসচালক রাম সিংহ তার তিন মাস পরে তিহাড় জেলে আত্মঘাতী হয়। নির্যাতনে সব চেয়ে নৃশংস ভূমিকা ছিল যার, সেই নাবালক অপরাধীকে পাঠানো হয় জুভেনাইল হোমে। তিন বছর সেখানে থাকার পরে মুক্তি দেওয়া হয় তাকে। বাকি চার জনকে নিম্ন আদালত এবং পরে দিল্লি হাইকোর্ট ফাঁসির সাজা শুনিয়েছিল। গত বছর ৫ মে সুপ্রিম কোর্টও সেই রায়ই বহাল রেখে বলেছিল, ‘‘এই ঘটনা সমাজের মনে সুনামির মতো ধাক্কা দিয়েছে।’’

এর পরেই মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে তিন জন অর্থাৎ মুকেশ-বিনয়-পবন সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন করার জন্য আবেদন জানায় সুপ্রিম কোর্টে। চতুর্থ অপরাধী অক্ষয়কুমার সিংহ (৩১) আর্জি জানায়নি। যদিও তার আইনজীবী এ পি সিংহের দাবি, আগামী সপ্তাহেই অক্ষয়ও সাজা পুনর্বিবেচনার জন্য আবেদন করবে। এ পি সিংহ শীর্ষ আদালতে বলেছিলেন, ‘‘মৃত্যুদণ্ড হচ্ছে বিচারের নামে ঠান্ডা মাথায় খুন করার নামান্তর।’’ সুপ্রিম কোর্ট তাতে গুরুত্ব দেয়নি। শীর্ষ আদালতের বেঞ্চ বলেছে, শুনানি চলাকালীন দোষীদের সব রকম আবেদনই শোনা হয়েছে। মৃত্যুদণ্ড পুনর্বিবেচনা করার মতো কোনও নতুন প্রসঙ্গ খুঁজে পাওয়া যায়নি।

আরও পড়ুন: মৃত্যুদণ্ডই শেষ কথা নয়, মত আইনজীবীদের

এ দিন রায়ের পরে এ পি সিংহ সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘ছেলেগুলোর প্রতি অবিচার হল।’’ তাঁর মতে, জনতা এবং রাজনৈতিক চাপে পড়েই আদালতের এই সিদ্ধান্ত। জ্যোতির বাবা-মা রায় শুনে বিচারব্যবস্থায় তাঁদের আস্থার কথাই বলেছেন। জ্যোতির মায়ের আর্জি, দ্রুত যেন এই শাস্তি কার্যকর করা হয়। রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবালও। টুইটে তিনি লিখেছেন, ‘‘এ ধরনের ভয়ঙ্কর অপরাধ রুখতে কার্যকরী হবে এই রায়।’’ দিল্লি মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন স্বাতী মালিওয়াল বলেছেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের রায়কে স্বাগত জানাই। তবে আরও আগেই ফাঁসি হলে ভাল হত।’’ কেন্দ্রীয় মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন রেখা শর্মার বক্তব্য, ‘‘এই রায় প্রমাণ করল, বিচারে সময় লাগলেও ন্যায় হয়ই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE