Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

নির্ভয়া-কাণ্ডে সুপ্রিম কোর্টে ফাঁসিই বহাল চার ধর্ষকের

শাস্তি মৃত্যুই। নির্ভয়ার গণধর্ষণ ও খুনে দোষী চার জনকে বিন্দুমাত্র দয়া দেখাতে নারাজ দেশের সর্বোচ্চ আদালত। বিচারপতিদের কথায়, ‘‘যদি কোনও মামলায় ফাঁসির সাজা দিতে হয়, তা হলে এটাই সেই মামলা।’’

অপেক্ষা: তখনও রায় শোনায়নি সুপ্রিম কোর্ট। আদালতের বাইরে নির্ভয়ার বাবা-মা। শুক্রবার। —নিজস্ব চিত্র।

অপেক্ষা: তখনও রায় শোনায়নি সুপ্রিম কোর্ট। আদালতের বাইরে নির্ভয়ার বাবা-মা। শুক্রবার। —নিজস্ব চিত্র।

প্রেমাংশু চৌধুরী
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৬ মে ২০১৭ ০৩:৫৪
Share: Save:

শাস্তি মৃত্যুই। নির্ভয়ার গণধর্ষণ ও খুনে দোষী চার জনকে বিন্দুমাত্র দয়া দেখাতে নারাজ দেশের সর্বোচ্চ আদালত। বিচারপতিদের কথায়, ‘‘যদি কোনও মামলায় ফাঁসির সাজা দিতে হয়, তা হলে এটাই সেই মামলা।’’

২০১২-র ১৬ ডিসেম্বর দিল্লিতে চলন্ত বাসের মধ্যে নির্ভয়ার উপরে নৃশংসতম অত্যাচার চালিয়েছিল ছ’জন। দু’সপ্তাহ জীবনযুদ্ধের পর মারা যান নির্ভয়া। ছয় অপরাধীর মধ্যে মূল অভিযুক্ত রাম সিংহ তিহাড় জেলে আত্মহত্যা করে। সবথেকে বেশি হিংস্র ছিল যে, সেই নাবালক অপরাধী জুভেনাইল হোমে তিন বছর কাটিয়ে ছাড়া পেয়ে যায়। বাকি চার জন— অক্ষয় ঠাকুর, পবন গুপ্ত, মুকেশ সিংহ এবং বিনয় শর্মাকে ফাঁসির সাজা শুনিয়েছিল নিম্ন আদালত। দিল্লি হাইকোর্ট সেই রায়ই বহাল রাখে। আজ ফাঁসির রায় দিল সুপ্রিম কোর্টও।

বিচারপতি দীপক মিশ্র, বিচারপতি অশোক ভূষণ এবং বিচারপতি আর ভানুমতীর বেঞ্চ আজ বলেছে, সমাজের মনে সুনামির মতো ধাক্কা দিয়েছে এই ঘটনা। অপরাধীদের যৌনতা ও হিংসার খিদে সমাজকে স্তম্ভিত করে দিয়েছে।

এমন নয় যে, সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরেই চার অপরাধীকে ফাঁসিকাঠে ঝোলানো হবে। তাদের আইনজীবী এ পি সিংহ বলেছেন, তিনি রায় পুনর্বিবেচনার আর্জি জানাবেন। তার পরেও রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার দরজা খোলা থাকবে। এ পি সিংহের যুক্তি, ‘‘সমাজে বার্তা দেওয়ার জন্য কাউকে ফাঁসিতে ঝোলানো যায় না। অপরাধীরা কোন সামাজিক প্রেক্ষাপট থেকে উঠে এসেছে, তা-ও দেখা দরকার। সকলেরই বয়স কম। বিহার, উত্তরপ্রদেশ থেকে দিল্লিতে এসে রোজগারের চেষ্টা করছিল। কারও বাড়িতে বয়স্ক বাবা-মা, কারও শিশুসন্তান রয়েছে।’’

আরও পড়ুন:ওদের ছেড়ো না, বলেছিলেন নির্ভয়া

৪২৯ পাতার রায় দিতে গিয়ে বিচারপতিরা বলেছেন, জেলে ভাল আচরণের যুক্তি দেখিয়ে পুনর্বাসনের সুযোগ চেয়েছে অপরাধীরা। কিন্তু মৃত্যুদণ্ড ছাড়া তাদের আর কোনও সাজা হতে পারে না। বিচারপতি মিশ্র এবং বিচারপতি ভূষণ বলেন, ‘‘অপরাধীদের কাজ থেকে তাদের নৃশংস, বর্বরোচিত, শয়তানসুলভ চেহারাটা স্পষ্ট।’’ বেঞ্চের মহিলা সদস্য বিচারপতি ভানুমতী বলেন, ‘‘এটি বিরলের মধ্যে বিরলতম অপরাধের মধ্যেই পড়ে।’’

বিচারপতিরা বলেছেন, অপরাধীরা লোহার রড দিয়ে নির্ভয়া ও তাঁর বন্ধুকে মারধর করেছিল। সর্বস্ব লুঠের পরে নৃশংস অত্যাচার চালিয়েছিল নির্ভয়ার উপরে। তাঁকে বিকৃত যৌনাচারে বাধ্য করা হয়েছিল। তাঁর মুখে, শরীরে, গোপনাঙ্গে ১০টি কামড়ের দাগ মিলেছিল। যৌনাঙ্গে লোহার রড ও হাত ঢোকানোয় ফুটো হয়ে গিয়েছিল অন্ত্র। সেই ক্ষতের পচনই নির্যাতিতার মৃত্যুর কারণ হয়। অপরাধীদের মানসিক বিকৃতি এতেই স্পষ্ট। তখন কোনও অনুভূতিই তাদের কাজ করেনি।

বিচারপতিদের বক্তব্য, দোষীরাই দু’জনকে বাসে ডেকে তুলেছিল। অপরাধের পর নির্যাতিতা ও তাঁর বন্ধুকে অবলীলায় রাস্তায় ছুড়ে ফেলে বাসের চাকায় পিষে মারতে চেয়েছিল, যাতে কোনও সাক্ষী না থাকে। প্রমাণ লোপাটের জন্য বাস ধুয়ে, দু’জনের জামাকাপড় পুড়িয়ে, লুঠের মাল নিজেদের মধ্যে ভাগ-বাটোয়ারা করে নিয়েছিল তারা।

রায় ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই হাততালিতে ভরে যায় আদালত কক্ষ। এক মহিলা চিৎকার করে ওঠেন, ‘‘ফাঁসির আগে ওদের অঙ্গচ্ছেদ করা হোক।’’ নির্ভয়ার মা তখন চোখের জল ফেলছেন নীরবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE