Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

যৌথ বিবৃতিতে এনআরসি নেই, তিস্তা নিয়ে চাপ

ঢাকার অনুরোধে তিস্তা এবং রোহিঙ্গা নিয়ে ভারতের উদ্যোগ এবং প্রতিশ্রুতির বিষয়টি দু’দেশের যৌথ বিবৃতিতে রাখা হয়েছে বিশদে। তবে অসমের নাগরিকপঞ্জি থেকে বাদ পড়া ১৯ লক্ষ মানুষের বিষয়টি স্বাভাবিক ভাবেই উহ্য রাখা রয়েছে। বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের বক্তব্য, বিষয়টি ভারতের আদালতের নির্দেশে চলতে থাকা একটি প্রক্রিয়া, সম্পূর্ণ ভাবেই অভ্যন্তরীণ বিষয়।

শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদী।

শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদী।

অগ্নি রায়
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০১৯ ০১:১৭
Share: Save:

দ্বিপাক্ষিক শীর্ষ বৈঠকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতার পথে এক ধাপ এগোনো গেল ঠিকই, কিন্তু তার পাশাপাশি এনআরসি, রোহিঙ্গা এবং তিস্তা নিয়ে বাংলাদেশের উদ্বেগ আজ স্পষ্ট ভাবে প্রকাশ করল বাংলাদেশ। শীর্ষ বৈঠকের পর বাংলাদেশের নেতৃত্ব জানিয়েছেন, ভারতের এনআরসি প্রক্রিয়াটির দিকে তাঁরা নজর রাখবেন।

ঢাকার অনুরোধে তিস্তা এবং রোহিঙ্গা নিয়ে ভারতের উদ্যোগ এবং প্রতিশ্রুতির বিষয়টি দু’দেশের যৌথ বিবৃতিতে রাখা হয়েছে বিশদে। তবে অসমের নাগরিকপঞ্জি থেকে বাদ পড়া ১৯ লক্ষ মানুষের বিষয়টি স্বাভাবিক ভাবেই উহ্য রাখা রয়েছে। বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের বক্তব্য, বিষয়টি ভারতের আদালতের নির্দেশে চলতে থাকা একটি প্রক্রিয়া, সম্পূর্ণ ভাবেই অভ্যন্তরীণ বিষয়। তা অন্য কোনও দেশের সঙ্গে যৌথ বিবৃতিতে রাখার প্রশ্ন ওঠে না। আজ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শীর্ষ বৈঠকের পর বাংলাদেশের বিদেশসচিব শহিদুল হক সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, ‘‘ভারতের প্রধানমন্ত্রী আমাদের বিশদে জানিয়েছেন, এনআরসি-র বিষয়টি তাঁদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। আমরা সেটাই ধরে নিতে চাই। পাশাপাশি গোটা প্রক্রিয়াটির দিকে আমরা নজর রাখব।’’

এর আগে নিউ ইয়র্কে রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সভার ফাঁকে নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে স্বল্পমেয়াদি বৈঠকেও শেখ হাসিনা এনআরসি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। আর আজকের বৈঠকেও হাসিনা উদ্বেগের বিষয়টি পুনরাবৃত্তি করেছেন বলে জানিয়েছেন সে দেশের বিদেশসচিব। ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের পক্ষ থেকে অবশ্য এই নিয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের পর সাউথ ব্লক সূত্রে শুধু এ কথাই জানানো হয়েছে, ‘আলোচনায় বিষয়টি উঠেছিল। প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন যে শীর্ষ আদালতের নির্দেশে এই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এটি এখনও চালু রয়েছে। কী ভাবে এই প্রক্রিয়া এগোয় তা দেখা যাক!’

তিস্তার বিষয়টি অবশ্য বিশদে রয়েছে যৌথ বিবৃতিতে। বলা হয়েছে, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশেষ ভাবে জানিয়েছেন, বাংলাদেশের মানুষ অপেক্ষা করে রয়েছেন তিস্তা জলবণ্টন চুক্তি দ্রুত স্বাক্ষর এবং বাস্তবায়নের জন্য। ২০১১ সালে দু’দেশের সরকার এ ব্যাপারে এ ব্যাপারে একমত হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী মোদী জানিয়েছেন যে এই চুক্তি যত দ্রুত সম্ভব চূড়ান্ত করতে তাঁর সরকার বিভিন্ন অংশীদারদের সঙ্গে কথা বলছে।’ সূত্রের বক্তব্য, যৌথ বিবৃতিতে বিষয়টি রেখে একই সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর উপরেও পরোক্ষ চাপ তৈরি করল কেন্দ্র। পাশাপাশি তিস্তা ছাড়া অন্য ছ’টি আন্তঃসীমান্ত নদীর জলবণ্টন নিয়ে খসড়া ফ্রেমওয়ার্ক তৈরি করতে শীঘ্রই যৌথ নদী কমিশনের বৈঠকে বসার নির্দেশ দিয়েছেন দুই রাষ্ট্রপ্রধান।

তৃতীয় যে বিষয়টি নিয়ে বিশদে আলোচনা হয়েছে মোদী এবং হাসিনার মধ্যে তা হল—রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যা। তাদের ফেরাতে ভারত মায়ানমারের উপর যথেষ্ট চাপ বাড়াচ্ছে না, এই অভিযোগ ঘরোয়া ভাবে জানিয়েছিলেন বাংলাদেশের নেতৃত্ব। বিষয়টি নিয়ে মোদী সরকারের উপর চাপও দেওয়া হয়েছে। আজ তার প্রতিফলন দেখা গিয়েছে যৌথ বিবৃতিতে। দু’টি পৃথক অনুচ্ছেদ রাখা হয়েছে রোহিঙ্গা নিয়ে। মায়ানমারের প্রতি বার্তা দিতে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘দুই প্রধানমন্ত্রী একমত হয়েছেন মায়নমারের রাখাইন প্রদেশ থেকে আসা শরণার্থীদের দ্রুত, নিরাপদ এবং স্থায়ী প্রত্যাবর্তনের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে। রাখাইন প্রদেশের আর্থ সামাজিক এবং নিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটানো এবং শরণার্থীদের ফেরত পাঠানোর প্রয়াস শুরু করতে সহমত ভারত ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।’ বাংলাদেশের বিদেশসচিবের কথায়, ‘‘ভারতের সঙ্গে মায়ানমারের

সম্পর্ক যথেষ্ট ভাল। আমরা ভারতকে অনুরোধ করেছি রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ফেরত নেওয়ার ব্যাপারে মায়ানমারের সঙ্গে কথা বলতে।’’ শীর্ষ বৈঠকে চেন্নাইয়ে বাংলাদেশের একটি ডেপুটি হাই কমিশন খোলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে বলেও জানিয়েছেন শহিদুল হক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE