Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

সুইস ব্যাঙ্কে সব টাকাই কালো নয়, যুক্তি মন্ত্রীর

পীযূষের যুক্তিতে ভুল না-থাকলেও তা নরেন্দ্র মোদীর ঢাল হয়ে উঠতে পারেনি। প্রশ্ন উঠেছে, নোট বাতিল, কালো টাকার বিরুদ্ধে ঢাক পিটিয়ে যুদ্ধ সত্ত্বেও সুইস ব্যাঙ্কে ভারতীয়দের জমা টাকার পরিমাণ বাড়ছে কী করে?

পীযূষ গয়াল। ছবি: পিটিআই।

পীযূষ গয়াল। ছবি: পিটিআই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ৩০ জুন ২০১৮ ০৪:০৬
Share: Save:

সুইস ব্যাঙ্ক থেকে কালো টাকা ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী। বলেছিলেন, কালো টাকা ফিরিয়ে এনে প্রত্যেকের ব্যাঙ্কে ১৫ লক্ষ টাকা জমা করবেন।

এ বার সুইস ব্যাঙ্ক জানিয়েছে, সুইৎজ়ারল্যান্ডের ব্যাঙ্কে ভারতীয়দের জমা টাকার পরিমাণ ৫০% বেড়েছে। ২০১৬-য় ছিল ৪,৫০০ কোটি টাকা। ২০১৭-য় তা বেড়ে হয়েছে প্রায় ৭ হাজার কোটি। বিতর্ক ওঠায় মোদী সরকারের ভারপ্রাপ্ত অর্থমন্ত্রী পীযূষ গয়াল প্রশ্ন তুলেছেন, এর সবটাই যে কালো টাকা, তা ধরে নেওয়া হচ্ছে কেন? আর নর্থ ব্লকে গরহাজির, গৃহবন্দি অরুণ জেটলিও ব্লগ লিখে যুক্তি দিয়েছেন, সুইস ব্যাঙ্কে জমা মানেই সেটা কর ফাঁকির টাকা নয়।

পীযূষের যুক্তিতে ভুল না-থাকলেও তা নরেন্দ্র মোদীর ঢাল হয়ে উঠতে পারেনি। প্রশ্ন উঠেছে, নোট বাতিল, কালো টাকার বিরুদ্ধে ঢাক পিটিয়ে যুদ্ধ সত্ত্বেও সুইস ব্যাঙ্কে ভারতীয়দের জমা টাকার পরিমাণ বাড়ছে কী করে?

মোদীকে কটাক্ষ করে কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধী টুইট করেছেন, ‘‘২০১৪-য় উনি বলেছিলেন, আমি সুইস ব্যাঙ্কের সব কালো টাকা ফিরিয়ে আনব, প্রত্যেকের অ্যাকাউন্টে

১৫ লক্ষ টাকা জমা করব। ২০১৬-য় উনি বলেছিলেন, নোট বাতিল দেশকে কালো টাকা মুক্ত করবে। ২০১৮-য় উনি বলছেন, সুইস ব্যাঙ্কে ভারতীয়দের জমানো অর্থ সাদা টাকা। সুইস ব্যাঙ্কে কোনও কালো টাকা নেই!’’ শুধু রাহুল নন। মোদীকে নিশানা করেছেন অন্যান্য বিরোধী নেতারাও। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দুইটে লিখেছেন, ‘‘সাবাস! নোটবন্দি? টাকা উড়ে যাচ্ছে সুইস ব্যাঙ্কে। লোকসান হচ্ছে দেশের!’’ সিপিএমের সীতারাম ইয়েচুরির কটাক্ষ, ‘‘নিজের লম্বা লম্বা প্রতিশ্রুতিই জুমলা-ম্যানের মনে রাখার ইচ্ছে নেই।’’ আবার বিজেপি নেতা সুব্রহ্মণ্যম স্বামীর খোঁচা, ‘‘এটাই হাসমুখ আঢ়িয়ার সাফল্য!’’

পীযূষের অবশ্য দাবি, ‘‘সুইৎজ়ারল্যান্ডের সঙ্গে নতুন চুক্তি অনুযায়ী সুইস ব্যাঙ্কে জমা টাকার সব তথ্যই ভারত এক বছর পরে হাতে পাবে। ২০১৮-র ১ জানুয়ারি থেকে এক বছরের যাবতীয় তথ্য ২০১৯-এর ১ জানুয়ারি থেকে মিলবে। কেউ বেআইনি লেনদেন করলে, কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ এই চুক্তিতে অবশ্য আগের তথ্য মিলবে না।

কিন্তু তা বলে এর সবটাই কালো টাকা, তা মানতে নারাজ পীযূষ। তাঁর যুক্তি, অনাবাসী ভারতীয়দের টাকা থাকতে পারে। অরুণ জেটলিরও যুক্তি, সুইৎজ়ারল্যান্ড থেকে তথ্য মেলার চুক্তি হওয়ায় এখন কালো টাকার মালিকরাও বুঝে গিয়েছেন, কয়েক মাসের মধ্যে তার নাম-ধাম প্রকাশ পাবেই। ফলে সুইৎজ়ারল্যান্ড আর কর ফাঁকির স্বর্গরাজ্য নেই।

পীযূষের যুক্তি, চিদম্বরমের জমানাতেই বিদেশে টাকা পাঠানোর উদার ব্যবস্থা চালু হয়েছিল। যাতে যে কোনও ভারতীয় বিদেশে শিক্ষা, পর্যটন, চিকিৎসার খরচ, সম্পত্তি বা শেয়ার কেনা, আত্মীয়দের খরচ, উপহার হিসেবে সহজেই নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত টাকা পাঠাতে পারে। পীযূষ যা বলেননি, তা হল চিদম্বরমের জমানায় এই ব্যবস্থা চালু হলেও মোদী জমানায় এর ঊর্ধ্বসীমা দু’দফায় বাড়িয়ে আড়াই লক্ষ ডলার করা হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE