Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Note ban

নোটবন্দি, জিএসটি, লকডাউন, ধ্বংস করছে অর্থনীতি: কেন্দ্রকে তোপ রাহুলের

সোমবার ৩ মিনিট ৩৮ সেকেন্ডের একটি ভিডিয়ো টুইটার শেয়ার করেন রাহুল। তার শিরোনাম, ‘অর্থব্যবস্থা কি বাত,  রাহুল গাঁধী কে সাথ’।

অর্থনীতি নিয়ে সরব রাহুল গাঁধী। —ফাইল চিত্র

অর্থনীতি নিয়ে সরব রাহুল গাঁধী। —ফাইল চিত্র

সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ৩১ অগস্ট ২০২০ ১৭:২২
Share: Save:

নির্মলা সীতারামনের করোনা অতিমারিকে ‘দৈবদুর্বিপাক’ আখ্যা দেওয়া নিয়ে এখনও সরগরম শাসক-বিরোধী রাজনীতি। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীকে নিশানা করে একের পর এক আক্রমণ ধেয়ে আসছে বিরোধীদের তরফে। সেই আবহেই মোদী সরকারের অর্থনীতি নিয়ে সবচেয়ে জোরাল আঘাতটা করলেন রাহুল গাঁধী। তাঁর মতে, নোটবন্দি, অপরিকল্পিত জিএসটি এবং লকডাউন— এই ‘ত্রিশূল’-এর আঘাতে ধ্বংসের মুখে দেশের অসংগঠিত ক্ষেত্রের অর্থনীতি। তাঁর অভিযোগ, অসংগঠিত ক্ষেত্রের অর্থনীতিকে ধ্বংস করার লক্ষ্য নিয়েই ওই তিনটি পদক্ষেপ করা হয়েছে।

সোমবার ৩ মিনিট ৩৮ সেকেন্ডের একটি ভিডিয়ো টুইটার এবং ইউটিউবে শেয়ার করেন রাহুল। তার শিরোনাম, ‘অর্থব্যবস্থা কি বাত, রাহুল গাঁধী কে সাথ’, অর্থাৎ — ‘রাহুল গাঁধীর সঙ্গে অর্থনীতির কথা’। সেই ভিডিয়োতেই ইউপিএ আমলের সঙ্গে এনডিএ জমানার অর্থনীতির তুলনা টেনেছেন তিনি। ২০০৮ সালে পৃথিবী জুড়ে আর্থিক মন্দার ইতিহাস টেনে বলেছেন, ‘‘ওই সময়ে পৃথিবী জুড়ে আর্থিক মন্দা এসেছিল। আমেরিকা, জাপান, ইউরোপ, চিন— সর্বত্র তার ছাপ পড়েছিল। আমেরিকার ব্যাঙ্ক দেউলিয়া হয়ে গিয়েছিল। একের পর এক কোম্পানি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। ইউরোপের ব্যাঙ্কও দেউলিয়া হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু ভারতের কিছু হয়নি। তখন দেশে ইউপিএ সরকার।’’ এর কারণ কী ছিল? ভিডিয়ো বার্তায় সেই উত্তরও দিয়েছেন রাহুল। বলেছেন, ‘‘সে সময় আমি প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, গোটা দুনিয়া যখন আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে তখন ভারতের কিছু হল না কেন? মনমোহন সিংহ তখন আমাকে বলেন, যদি ভারতের অর্থনীতি বুঝতে চাও তা হলে দেশের দুটো অর্থনৈতিক ক্ষেত্রকে বুঝতে হবে। প্রথমটা অসংগঠিত অর্থনীতি এবং দ্বিতীয়টা সংগঠিত অর্থনীতি। সংগঠিত অর্থনীতি মানে বড় বড় সংস্থা। আর অসংগঠিত অর্থনীতি মানে, কৃষক, মজুর, মাঝারি সংস্থা, ছোট দোকানদার। যত দিন দেশের অসংগঠিত অর্থনৈতিক ক্ষেত্র মজবুত থাকবে, তত দিন দেশকে আর্থিক মন্দা ছুঁতে পারবে না।’’

ইউপিএ জমানার সেই ঘটনার কথা তুলে ধরেই নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকারের অর্থনৈতিক অবস্থার প্রসঙ্গ টেনেছেন রাহুল। বলেছেন, ‘‘গত ৬ বছর ধরে বিজেপির সরকার সেই অসংগঠিত ক্ষেত্রেই আঘাত হেনেছে। তার তিনটি উদাহরণও রয়েছে— প্রথমত নোটবন্দি, দ্বিতীয়ত অপরিকল্পিত জিএসটি এবং তৃতীয়ত লকডাউন।’’ রাহুল বলছেন, ‘‘এমনটা ভাববেন না, লকডাউনের পিছনে কোনও ভাবনা ছিল না বা একেবারে শেষ মুহূর্তে লকডাউন করা হয়েছে। এই তিনটির লক্ষ্যই ছিল আমাদের দেশের অসংগঠিত অর্থনৈতিক ক্ষেত্রকে ধ্বংস করে দেওয়া।’’

আরও পড়ুন: করোনার জের, জিডিপি কমতে পারে ১৯ শতাংশ, বলছে সমীক্ষা

রাহুলের দাবি কেন্দ্রীয় সরকারের এই চেষ্টার ভয়াবহ ফল হবে। তিনি আরও যোগ করেছেন, ‘‘এর ফলে কর্মসংস্থান তৈরি হবে না। কারণ অসংগঠিত ক্ষেত্রই ৯০ শতাংশের বেশি কর্মসংস্থান তৈরি করে।’’ তাঁর আশঙ্কা, ‘‘যে দিন এই ক্ষেত্র পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যাবে, সে দিন ভারতে আর চাকরি থাকবে না।’’ দেশের অসংগঠিত অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অবস্থানকারী বিপুল অংশের মানুষের উদ্দেশে বার্তাও দিয়েছেন রাহুল। বলেছেন, ‘‘আপনারাই এই দেশকে চালান, এই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যান। অথচ আপনাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। আপনাদের সঙ্গে প্রতারণা করা হচ্ছে। আপনাদের গোলাম বানানোর চেষ্টা চলছে। পুরো দেশ একজোট হয়ে এই আক্রমণকে প্রতিহত করতে হবে।’’

আরও পড়ুন: চিন কখনও সীমা লঙ্ঘন করে না, ভারতের অভিযোগ উড়িয়ে দাবি বেজিংয়ের

লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় চিনা অনুপ্রবেশের বিষয়টিকে সামনে রেখে ঠিক একই রকম ভিডিয়ো বার্তা প্রকাশ করেছিলেন রাহুল। সম্প্রতি রাজ্যগুলির সঙ্গে জিএসটি কাউন্সিলের বৈঠকে করোনা অতিমারিকে ‘দৈবদুর্বিপাক’ (অ্যাক্ট অব গড) আখ্যা দেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। আশঙ্কা প্রকাশ করেন, এর ধাক্কায় অর্থনীতির সঙ্কোচন হতে পারে। তাঁর সেই মন্তব্য নিয়ে আক্রমণ শানাচ্ছে বিরোধীরা। এই পরিস্থিতিতে দেশের অসংগঠিত অর্থনৈতিক ক্ষেত্রের কথা তুলে ধরে কৌশলে অন্য বার্তাও দিয়ে রাখলেন রাহুল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE