Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
বিদায় ৩৭৭, স্বাগত পরিবর্তন

উৎসব চলুক, এ বার লড়াই রামধনু-বিয়ের

গত এপ্রিলে প্যারিসে বিয়ে করেছেন কেশব ও সিরিল। এ দেশে এখনও সমলিঙ্গের বিয়ে স্বীকৃত নয়। দশ বছরের সম্পর্কের পর বিয়ের খবরটা তাই ইনস্টাগ্রামেই ঘোষণা করেছিলেন। আজ কেশব সুপ্রিম কোর্ট থেকে বারাখাম্বা রোডের হোটেলে ফিরতেই উৎসব শুরু হয়ে গেল। হোটেলের কর্মীরা রামধনু রঙের স্কার্ফ গলায় জড়িয়ে নাচ শুরু করে দিলেন।

ছবি: পিটিআই।

ছবি: পিটিআই।

প্রেমাংশু চৌধুরী
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৪:৪৫
Share: Save:

সুপ্রিম কোর্টের রায় সবে ঘোষণা হয়েছে। প্রধান বিচারপতির এজলাসের সামনেই উৎসব শুরু হয়ে গেল।

করা হল নতুন লড়াইয়ের অঙ্গীকারও। সমস্বরে প্রথম প্রতিক্রিয়া, ‘আজ আমাদের বাসনার আগল খুলে গেল। এ বার চাই ভালবাসার মানুষকে বিয়ের অধিকারও।’

আনন্দে কী করবেন, বুঝে উঠতে পারছিলেন না একটি হোটেল গোষ্ঠীর এগজিকিউটিভ ডিরেক্টর কেশব সুরি। ‘‘আমার আসলে আনন্দে চিৎকার করতে ইচ্ছে করছে। জানি না, এখানে এ সব করা যায় কি না! দাঁড়ান, আমার স্বামীকে ডাকি।’’ তাঁর ফরাসি ‘স্বামী’ সিরিল ফেউল্লেবইস এগিয়ে আসতেই তাঁকে জড়িয়ে ধরে গালে চুমু খেলেন কেশব। বললেন, ‘‘বুঝতে পারছ, আজ কী হল? আমি এখন এ দেশেও তোমাকে জড়িয়ে ধরতে পারি। চুমু খেতে পারি। আর বাধা রইল না।’’

গত এপ্রিলে প্যারিসে বিয়ে করেছেন কেশব ও সিরিল। এ দেশে এখনও সমলিঙ্গের বিয়ে স্বীকৃত নয়। দশ বছরের সম্পর্কের পর বিয়ের খবরটা তাই ইনস্টাগ্রামেই ঘোষণা করেছিলেন। আজ কেশব সুপ্রিম কোর্ট থেকে বারাখাম্বা রোডের হোটেলে ফিরতেই উৎসব শুরু হয়ে গেল। হোটেলের কর্মীরা রামধনু রঙের স্কার্ফ গলায় জড়িয়ে নাচ শুরু করে দিলেন।

কিন্তু কেশব এ বার নতুন স্বপ্ন দেখছেন। সুপ্রিম কোর্ট আজ ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৭ ধারার যে অংশে সমকামিতাকে ‘প্রকৃতিবিরুদ্ধ’ বলেছে, তাকে ‘অসাংবিধানিক’ বলে রায় দিয়েছে। তবে এ দেশে এখনও সমকামীদের বিয়ে, সন্তান দত্তক নেওয়ার অধিকার মেলেনি।

আরও পড়ুন: সমাজের চোখরাঙানি থামবে কবে

আজকের রায়ের পরে কেশব বলেন, ‘‘কোনও এক দিন আমাদের বিয়েটা এ দেশেও নথিবদ্ধ করাতে চাই। তার জন্য এ বার নতুন লড়াই।’’ কেশবের সঙ্গে আরও পাঁচ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি নিজেদের সমকামী ঘোষণা করে সুপ্রিম কোর্টে ৩৭৭ ধারার বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন। সেই দলে ছিলেন সেলিব্রিটি শেফ রীতু ডালমিয়াও। তিনি এখন ব্রিটেনে। সুপ্রিম কোর্টের রায় জানার জন্য সে দেশের ভোর সাড়ে পাঁচটায় ঘড়িতে অ্যালার্ম দিয়েছিলেন। রায়ের পরে রীতু লিখেছেন, ‘‘জানি না আমার জীবদ্দশায় আমাদের সম্প্রদায় বিয়ের অধিকার পাবে কি না। তবে আজকের রায় সেই পথে সঠিক পদক্ষেপ। এ বার এই আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব নতুন প্রজন্মের।’’

আজকের রায়ে উচ্ছ্বসিত পরিচালক ওনির বলেন, ‘‘নিজের আসল পরিচয় লুকিয়ে, দ্বৈত জীবন বাঁচার দিন এ বার শেষ। নিজের পরিচয় নিয়ে গর্ব করার দিন আজ। আজকের এই রায় সমানাধিকার, সমাজে অন্তর্ভুক্তির দিকে আমাদের প্রথম ও বড় পদক্ষেপ। আর একটা যুদ্ধের শুরু হতে চলেছে এ বার।’’ লন্ডনের লাফবরো বিশ্ববিদ্যালয়ের জেন্ডার স্টাডিজ়ের শিক্ষক রোহীত দাশগুপ্তও বললেন, ‘‘বহু বছরের সংগ্রাম ও আন্দোলনের ফসল সুপ্রিম কোর্টের আজকের এই রায়।’’

৩৭৭ ধারার বিরুদ্ধে আইনি লড়াই শুরু করেছিল নাজ় ফাউন্ডেশন। সংস্থার কর্ণধার অঞ্জলি গোপালনেরও মত, ‘‘আজ সুপ্রিম কোর্ট শুধু সমকামিতাকে অপরাধমুক্ত করেই থামেনি। বিচারপতি ধনঞ্জয় চন্দ্রচূড় স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, সমকামীদেরও অন্যান্য নাগরিকের সমান অধিকার পাওয়ার অধিকার রয়েছে।’’

এ বার কি সরকারের কাছে সমকামীদের বিয়ের অধিকারের জন্য আইনের দাবি জানানো হবে? নরেন্দ্র মোদী সরকার সুপ্রিম কোর্টে নিরপেক্ষ অবস্থান নিলেও প্রথমে শুনানি পিছিয়ে দেওয়ার দাবি তুলেছিল। অঞ্জলির যুক্তি, ‘‘সরকারের থেকে আমরা কিছু আশা করি না। আমরা আবার আদালতেরই দ্বারস্থ হব।’’

এ দেশে সমকামী আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ পবন ঢাল মনে করিয়ে দিচ্ছেন, ‘‘এটাকে অল্প কয়েক জনের বিষয় বলে দেখবেন না। দেশ জুড়ে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে সমাজকর্মীদের লড়াই, দলিত অধিকারের লড়াইয়ের মধ্যে যৌন সংখ্যালঘুদের লড়াইও শরিক হল।’’ সমকামীদের অধিকারের দাবিতে অন্যতম আন্দোলনকারী হরিশ আইয়ারেরও মত, লড়াই সবে শুরু। হরিশের মা, পদ্মা আইয়ার দু’বছর আগে ছেলের জন্য ‘পাত্র চাই’-এর বিজ্ঞাপন দিয়েছিলেন। হরিশের কথায়, ‘‘আজ ভালবাসা প্রকৃতির নিয়ম হল। সুপ্রিম কোর্টকে ধন্যবাদ। কিন্তু সামনে অনেক বদল বাকি।’’

রায় শুনে অন্যতম মামলাকারী ও আন্দোলনকারী অশোক রাও কবি বললেন, ‘‘স্বাধীন ভারতে আমরা অবশেষে স্বাধীন হলাম!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE