Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

৫ বছরে বেড়েছে তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার

পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৪ সালে তৃতীয় লিঙ্গের মোট ভোটার ছিলেন ২৮,৫২৭ জন, যা এ বার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৮,৩২৫। এই সংখ্যার নিরিখে শীর্ষ স্থানে রয়েছে উত্তরপ্রদেশ। তার পরেই কর্নাটক, তামিলনাড়ু ও অন্ধ্রপ্রদেশ। প্রবাসীদের মধ্যেও তৃতীয় লিঙ্গের ভোটারের সংখ্যা বেড়েছে।

অধিকারের দাবিতে শহরে এলজিবিটিদের মিছিল। ফাইল চিত্র

অধিকারের দাবিতে শহরে এলজিবিটিদের মিছিল। ফাইল চিত্র

স্বাতী মল্লিক
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ মার্চ ২০১৯ ০৩:২৮
Share: Save:

আগের লোকসভা নির্বাচনেই প্রথম বার নিজেদের ‘তৃতীয় লিঙ্গ’ হিসেবে পরিচয় দিয়ে ভোট দিতে পেরেছিলেন এ দেশের রূপান্তরকামীরা। পাঁচ বছরে তাঁদের সংখ্যা বেড়েছে অনেকটাই। নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪ সালের তুলনায় ২০১৯ সালে সারা দেশে তৃতীয় লিঙ্গভুক্ত ভোটারের সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ৩৪ শতাংশ।

পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৪ সালে তৃতীয় লিঙ্গের মোট ভোটার ছিলেন ২৮,৫২৭ জন, যা এ বার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৮,৩২৫। এই সংখ্যার নিরিখে শীর্ষ স্থানে রয়েছে উত্তরপ্রদেশ। তার পরেই কর্নাটক, তামিলনাড়ু ও অন্ধ্রপ্রদেশ। প্রবাসীদের মধ্যেও তৃতীয় লিঙ্গের ভোটারের সংখ্যা বেড়েছে। যদিও অরুণাচলপ্রদেশ, গোয়া, হরিয়ানা, মেঘালয়, নাগাল্যান্ড, দাদরা ও নগর হাভেলি এবং লক্ষদ্বীপ থেকে এক জন ভোটারও নিজেকে তৃতীয় লিঙ্গ বলে চিহ্নিত করেননি।

নির্বাচন কমিশনের হিসেব বলছে, ২০১৪ সালে পশ্চিমবঙ্গে তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ছিলেন মাত্র ৪৯৯ জন। ২০১৬ সালে বিধানসভা নির্বাচনের সময়ে সেই সংখ্যাটা ছিল ৭৫৭। এ বছরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪২৬ (গত জানুয়ারি পর্যন্ত)।

ভোটার তালিকায় তৃতীয় লিঙ্গের উপস্থিতির এই পরিসংখ্যানে ইতিবাচক দিক দেখতে পাচ্ছেন রূপান্তরকামী আইনজীবী মেঘ সায়ন্তন ঘোষ। তাঁর কথায়, ‘‘ট্রান্সজেন্ডার বিল নিয়ে লেখালিখি এবং ৩৭৭ ধারা বাতিল হওয়ায় অনেকেরই মানসিকতা বদলাচ্ছে। সমাজের কাছে আমাদের গ্রহণযোগ্যতাও বেড়েছে। ফলে নিজেদের তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে পরিচয় দেওয়ার সাহস পাচ্ছেন অনেকে।’’

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

তবে রাজ্যের এই পরিসংখ্যান নিয়ে উচ্ছ্বসিত হতে পারছেন না অনেকেই। কারণ, ২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী, ভারতে রূপান্তরকামীদের সংখ্যা প্রায় ৪ লক্ষ ৮৮ হাজার। এ রাজ্যে ৩০ হাজার ৩৪৯ জন। অর্থাৎ, রাজ্যে তৃতীয় লিঙ্গভুক্ত মানুষের সংখ্যার তুলনায় ভোটার তালিকার পরিসংখ্যান নেহাতই নগণ্য। কেন এই অসাম্য? রাজ্যের ‘ট্রান্সজেন্ডার ওয়েলফেয়ার বোর্ড’-এর প্রাক্তন সদস্য রঞ্জিতা সিংহের মতে, ‘‘সামাজিক ছুতমার্গ কাটাতে পারছেন না অনেকেই। পারিবারিক চাপও থাকে অনেক ক্ষেত্রে। এ ছাড়া, সরকারের পক্ষ থেকে ভোটারদের তথ্য সংগ্রহে যাঁরা আসেন, তাঁরা কতটা সংবেদনশীল, তা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে।’’ এলজিবিটি সম্প্রদায়ের অধিকার নিয়ে কাজ করা সমাজকর্মী পবন ঢাল আবার দায়ী করছেন সরকারি উদাসীনতাকেই। বলছেন, ‘‘রূপান্তরকামীদের উন্নয়নে কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য সরকার সে ভাবে উদ্যোগী হয়নি। ট্রান্সজেন্ডার ওয়েলফেয়ার বোর্ডও এ বিষয়ে সে ভাবে কিছু করেনি। না-হলে ভোটার তালিকার সংখ্যাটি এত দিনে আরও বাড়ত।’’ রূপান্তরকামীদের উপরে হেনস্থার ঘটনা বন্ধ না হলে এই পরিস্থিতি বদলাবে না বলেও মত তাঁর।

নিয়মানুযায়ী, তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার হিসেবে নথিভুক্ত হতে হলে প্রথমে চিকিৎসক এবং ম্যাজিস্ট্রেটের সার্টিফিকেট নিয়ে নাম পরিবর্তন করতে হবে কোনও হিজড়ে, রূপান্তরকামী বা রূপান্তরিতকে। তার পরেই মিলবে ভোটার তালিকায় তৃতীয় লিঙ্গের স্বীকৃতি, যা যথেষ্ট সময় ও ব্যয়সাপেক্ষ। তাই এত কাণ্ড করার চেয়ে ভোটার কার্ডে নিজেকে নারী বা পুরুষ হিসেবে দেখানো সহজ বলেই মনে করেন অনেকে। কেউ কেউ আবার লিঙ্গ পরিবর্তনের অস্ত্রোপচারের পরে নিজেকে তৃতীয় লিঙ্গ না বলে নারী বা পুরুষের পরিচয় দিতে পছন্দ করেন। ফলে বাস্তব ও পরিসংখ্যানে ফারাক বাড়তে থাকে।

রাজনীতির ময়দানে ইতিমধ্যেই পা রেখেছেন রূপান্তরকামীরা। ২০১৮ সালে কংগ্রেসের মহিলা শাখার জাতীয় সম্পাদক হিসেবে রূপান্তরকামী অপ্সরা রেড্ডিকে নিয়োগ তারই উদাহরণ। গত লোকসভা নির্বাচনে সারা দেশে প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন ৯ জন রূপান্তরকামী, যাঁদের কেউ উত্তরপ্রদেশ, আবার কেউ তামিলনাড়ু বা কর্নাটকের বাসিন্দা। কিন্তু এ রাজ্যে এখনও পর্যন্ত কোনও রূপান্তরকামীকে প্রার্থী করেনি প্রথম সারির কোনও রাজনৈতিক দল। এ প্রসঙ্গে রঞ্জিতা বলছেন, ‘‘রূপান্তরকামীদের ভোটের টিকিট কেন নয়? তা হলে তো অন্তত এক জন রূপান্তরকামী আমাদের সমস্যার কথা সংসদে তুলে ধরতে পারতেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Lok Sabha Election 2019 Third Gender LGBTQ Voter
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE