Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
National News

ইরান থেকে আমদানি চলবে, পেট্রল-ডিজেলের ফের দামবৃদ্ধি নভেম্বরে

অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখনই ভারতে পেট্রল, ডিজেলের দাম সর্বকালীন রেকর্ড গড়েছে। প্রায় রোজই বেড়ে চলেছে পেট্রল ও ডিজেলের দাম।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৭ অক্টোবর ২০১৮ ১৬:০৫
Share: Save:

ফের পেট্রল, ডিজেলের দাম বাড়তে পারে নভেম্বরে। কেন্দ্রীয় তেল মন্ত্রক সূত্রের খবর, আমেরিকার নিষেধাজ্ঞা জারির হুমকির পরোয়া না করে আগামী ৪ নভেম্বরের পরেও ইরান থেকে অপরিশোধিত তেল আমদানি চালিয়ে যেতে পারে ভারত। সে ক্ষেত্রে ইরান-সহ বিশ্বের তেল উৎপাদক দেশগুলি যে ভাবে অপরিশোধিত তেলের দাম উত্তরোত্তর বাড়িয়ে চলেছে, তাতে নভেম্বরে পেট্রল, ডিজেলের দাম ভারতে আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে যথেষ্টই। ভারতে তেলের মোট চাহিদার ৮৩ শতাংশই মেটানো হয় ইরান, সৌদি আরব-সহ আরব দুনিয়ার দেশগুলি থেকে তেল আমদানি করে।

অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখনই ভারতে পেট্রল, ডিজেলের দাম সর্বকালীন রেকর্ড গড়েছে। প্রায় রোজই বেড়ে চলেছে পেট্রল ও ডিজেলের দাম। তার ওপর মার্কিন ডলারের সঙ্গে দামের দৌড়ে যে ভাবে উত্তরোত্তর পিছিয়ে পড়ছে টাকা, তাতে আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম আরও বাড়লে, এ দেশে পেট্রল ও ডিজেলের দাম নভেম্বর থেকে আরও চড়বে। আর তা আন্তর্জাতিক বাজারের দাঁড়িপাল্লার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে অন্তত আগামী বছরের মার্চ, এপ্রিল পর্যন্ত বেড়েই চলবে বলে আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের। আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দামবৃদ্ধির জন্য ইতিমধ্যেই ভারতীয় মুদ্রা টাকার দাম পড়েছে ১৪.৫ শতাংশ।

দিল্লিতে গত সেপ্টেম্বরে ভারত ও আমেরিকার বিদেশমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রীদের ‘টু প্লাস টু’ বৈঠকের পর দু’দেশের মধ্যে সমরাস্ত্র, প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম ও প্রযুক্তি বেচা-কেনার যে চুক্তি (‘ক্যাটসা’) হয়, তাতে কয়েকটি শর্ত দেওয়া হয়েছিল ট্রাম্প প্রশাসনের তরফে। বলা হয়েছিল, ওই চুক্তির শর্ত হিসেবে ভারত রাশিয়ার কাছ থেকে সর্বাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধী ব্যবস্থা ‘এস-৪০০’ কিনতে পারবে না। আর আগামী ৪ নভেম্বরের পর ইরানের কাছ থেকে কিনতে পারবে না অপরিশোধিত তেলও। ওয়াশিংটনের বক্তব্য ছিল, ‘কাছের দেশ’গুলির সঙ্গেই ‘ক্যাটসা’ চুক্তি করেছে আমেরিকা। তাই যাদের সঙ্গে ওই চুক্তি করা হয়েছে, তারা মার্কিন শর্তগুলি মেনে চলবে, এটাই প্রত্যাশিত। তা না মেনে আগামী ৪ নভেম্বরের পরেও ইরান থেকে অপরিশোধিত তেল আমদানি চালিয়ে গেলে, ভারতের ওপরেও মার্কিন অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা জারির প্রচ্ছন্ন হুমকি ইতিমধ্যেই শোনা গিয়েছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও বিদেশ দফতরের মুখপাত্র হিদার ন্যুয়ার্টের গলায়।

আরও পড়ুন- জিপিএফে সুদের হার বেড়ে ৮ শতাংশ​

আরও পড়ুন- ফের বাড়ছে তেল, তোপ কেন্দ্রকে​

বিদেশমন্ত্রকের একটি সূত্রের খবর, ভারত কোনও ভাবেই আমেরিকার চাপের কাছে মাথা নোয়াবে না। বরং ওয়াশিংটনকে বোঝানো হবে, ভারতের সার্বভৌমত্ব কেউ খর্ব করার চেষ্টা হলে তা মেনে নেওয়া হবে না। সেই বার্তা দিতেই মার্কিন নিষেধাজ্ঞা জারির আশঙ্কাকে পরোয়া না করে দিল্লি ‘এস-৪০০’ কেনার ব্যাপারে চুক্তি করেছে রাশিয়ার সঙ্গে। ভারত সফরে সাড়ম্বরে অভ্যর্থনা জানানো হয়েছে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে। আর অক্টোবরের গোড়ার দিকে কেন্দ্রীয় তেল মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছে, নভেম্বরেও ইরান থেকে অপরিশোধিত তেল আমদানির জন্য কয়েকটি তেল শোধনাগার ইতিমধ্যেই অর্ডার দিয়ে রেখেছে।

এই অর্ডার দেওয়ার কারণ মূলত দু’টি। এক, আমেরিকাকে বোঝানো ‘ক্যাটসা’-য় সই করার অর্থ এই নয় যে, ওয়াশিংটন যা চাইবে, দিল্লি সেটাই মেনে চলবে। ভারত তার বিদেশনীতি নিজেই নির্ধারণ করবে। অন্য কোনও দেশের কথায় তার বিদেশনীতি বদলাবে না। দুই, ভারতে অপরিশোধিত তেলের ভাণ্ডার খুব একটা বেশি নয়। কোনও আন্তর্জাতিক চাপে মাথা নুইয়ে ভারত তড়িঘড়ি সেই ভাঁড়ারে এখন হাতও দিতে চাইছে না। বরং দেশের সেই তেল-ভাণ্ডারকে আরও অনিশ্চিত ভবিষ্যতের জন্য বাঁচিয়ে রাখতে চাইছে দিল্লি।

তবে সামনে পাঁচ রাজ্যে বিধানসভা ভোট। তার পর আগামী বছরে লোকসভা নির্বাচন। পেট্রল, ডিজেলের দাম ভবিষ্যতে আরও বাড়ার আশঙ্কা থাকায় সে ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট অত্যাবশ্যকীয় পণ্যাদির দামও বাড়ার আশঙ্কা কম নয়। এই মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব আসন্ন বিধানসভা ও লোকসভা ভোটে পড়ার আশঙ্কায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী গত সোমবার (১৫ অক্টোবর) একটি জরুরি বৈঠক করেন তেল সংস্থাগুলির সঙ্গে। সেই বৈঠকে দেশের প্রতিটি তেল সংস্থার চেয়ারম্যান তো বটেই, ছিলেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীরা (অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি ও পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান), প্রাকৃতিক গ্যাস ও তেল উত্তোলনকারী বেসরকারি সংস্থা ও বিদেশি তেল সংস্থাগুলির কর্তারাও। ছিলেন ‘অর্গানাইজেশন অফ দ্য পেট্রোলিয়াম এক্সপোর্টিং কান্ট্রিজ’ (ওপেক), সৌদি আরবের পেট্রোলিয়াম মন্ত্রক, রিলায়্যান্স ইন্ডাস্ট্রিজ ও বেদান্ত গোষ্ঠীর কর্তারা।

সমস্যা মেটাতে একটি নতুন বিষয়ের উল্লেখ করেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। ‘নীতি আয়োগ’-এ আয়োজিত ওই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী সবচেয়ে বেশি জোর দিয়েছেন উৎপাদক ও ক্রেতা রাষ্ট্রের মধ্যে একটি পার্টনারশিপ গড়ে তোলার ব্যাপারে। বৈঠকে মোদী বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেল উৎপাদনের পরিমাণ, গুণমান ও দরদাম, সবটাই উৎপাদক রাষ্ট্র নির্ধারণ করবে, এই নিয়মটা এ বার বদলানোর প্রয়োজন। এ ব্যাপারে সামগ্রিক সমন্বয় না থাকলে পেট্রল, ডিজেল নিয়ে অনিশ্চয়তার আবহ থেকেই যাবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Oil narendra modi OPEC তেল
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE