ফাইল চিত্র।
ক্রুদ্ধ ভাবে দেশের কোনও বিষয় নিয়ে বা দেশের সমালোচনা করলেই সেটা রাষ্ট্রদ্রোহ নয় বলে অভিমত জাতীয় আইন কমিশনের। তাদের মতে, হিংসার মাধ্যমে বা অন্য বেআইনি পথে সরকারকে উৎখাত করার লক্ষ্যে কিছু করা হলে, সেই ক্ষেত্রে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ আনা যেতে পারে। তবে এটা আইন কমিশনের পর্যবেক্ষণ মাত্র। এই বক্তব্যকে তারা কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে চূড়ান্ত মত বা সুপারিশ আকারে পাঠাচ্ছে না। এ নিয়ে আরও বিতর্ক হওয়ার দরকার মনে করে তারা একটি আলোচনাপত্রে তাদের বক্তব্য প্রকাশ করেছে।
রাষ্ট্রদ্রোহ নিয়ে ভারতীয় দণ্ডবিধি (আইপিসি)-র ১২৪এ ধারাটি ব্রিটিশ জমানার। তৈরি হয়েছিল ১৮৬০ সালে। স্বাধীন ভারতে, বিশেষ করে বর্তমান যুগের পরিপ্রেক্ষিতে এটির পর্যালোচনার দাবি দীর্ঘদিনের। জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে আজাদির স্লোগান তোলা ও উত্তেজক বক্তৃতার জেরে বাম ছাত্রনেতা কানহাইয়া সহ কয়েক জনের বিরুদ্ধে ওই ধারায় রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ আনা হলে তুমুল বিতর্ক তৈরি হয় গোটা দেশে। নরেন্দ্র মোদীর সরকার ওই ধারা পর্যালোচনা করে সুনির্দিষ্ট সুপারিশ জানানোর ভার দেয় আইন কমিশনকে। গত ৫ জুলাইয়ের বৈঠকে কমিশন সিদ্ধান্ত নেয়, চূড়ান্ত সুপারিশ জানানোর আগে বিষয়টি নিয়ে দেশে আরও বিতর্ক হওয়া দরকার। সে সূত্রেই কমিশন আজ তার পর্যবেক্ষণ ওয়াবসাইটে প্রকাশ করেছে।
আলোচনাপত্রে কমিশন তাদের পর্যবেক্ষণগুলি সাজিয়েছে ১০টি প্রশ্নের আকারে। ব্রিটেন দশ বছর আগেই রাষ্ট্রদ্রোহের আইন বর্জন করেছে। তারা চায় না কোনও দানবীয় আইনের নজির হিসেবে তাদের দেশের উল্লেখ হোক। এর উল্লেখ করে কমিশনের প্রথম প্রশ্ন, ভারতীয়দের দমন করার জন্য ব্রিটিশরা আইপিসি-তে ওই ধারা ঢুকিয়েছিল। এখনও তা চালু রাখা কতটা সঙ্গত?
প্রশ্ন দুই, বাক্স্বাধীনতা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা বিশ্বের বৃহত্তম এই গণতন্ত্রের অঙ্গ। রাষ্ট্রদ্রোহের সংজ্ঞা তাই নতুন করে লেখার প্রয়োজন নয় কি? তিন, ‘সিডিশন’ তথা রাষ্ট্রদ্রোহ শব্দটির বদলে উপযুক্ত অন্য শব্দ ব্যবহার করে দণ্ডবিধিতে শাস্তির মাত্রা বলে দেওয়া যায় কি? চার, কতটা বিরোধের অধিকার রয়েছে নাগরিকদের? পাঁচ, কতটা বিরোধিতা করলে তা ঘৃণা ছড়ানো? ছয়, ১২৪এ ধারার সঙ্গে বাক্স্বাধীনতা ও মত প্রকাশের অধিকারের মধ্যে ভারসাম্য কী ভাবে আনা যাবে? প্রশ্ন সাত ও আটের বক্তব্য, যে কাজগুলিকে রাষ্ট্রদ্রোহ মনে করা হয়, সেগুলির জন্য আলাদা আলাদা আইন রয়েছে, সেখানে ১২৪এ ধারাটি রেখে দেওয়ার আদৌ প্রয়োজন আছে কি? প্রশ্ন নয়, আদালতের অবমাননা যেখানে দণ্ডনীয়, সেখানে বৈধ ভাবে প্রতিষ্ঠিত সরকারের অবমাননা কি শাস্তিযোগ্য নয়? দশ, ১২৪এ ধারার অপপ্রয়োগ বন্ধে সম্ভাব্য রক্ষাকবচ কী হতে পারে? বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে কমিশনের শেষ দু’টি প্রশ্ন বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ মনে করছে বিভিন্ন মহল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy