Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

চাকরি নিয়ে চুপ, রিপোর্ট ফাঁসে ফোঁস!

২০১৭-১৮ সালে কাজের বাজারের হাল নিয়ে এনএসএসও-র সমীক্ষায় সিলমোহর দেওয়ার পরেও তা প্রকাশ না করার অভিযোগ তুলে এ বছরের গোড়াতেই জাতীয় পরিসংখ্যান কমিশন ছেড়েছিলেন দুই সদস্য।

বাড়ছে বেকারত্ব। ছবি- এপি

বাড়ছে বেকারত্ব। ছবি- এপি

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৭ মার্চ ২০১৯ ০৩:২৪
Share: Save:

দেশে কাজের সুযোগ কী হারে তৈরি হচ্ছে, তা নিয়ে কোনও উচ্চবাচ্য নেই। এই সংক্রান্ত সরকারি রিপোর্ট কবে প্রকাশিত হবে, সেই সম্পর্কেও মুখে কুলুপ। কিন্তু ওই রিপোর্ট সংবাদমাধ্যমে কী ভাবে ফাঁস হয়েছিল, তার তদন্ত করতে আস্ত কমিটি গড়ে ফেলল মোদী সরকার! বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিএমআইই-র সদ্য প্রকাশিত সমীক্ষায় কাজের বাজারের বিবর্ণ ছবি ফুটে ওঠায় ফের বিরোধীদের নিশানায় তারা।

২০১৭-১৮ সালে কাজের বাজারের হাল নিয়ে এনএসএসও-র সমীক্ষায় সিলমোহর দেওয়ার পরেও তা প্রকাশ না করার অভিযোগ তুলে এ বছরের গোড়াতেই জাতীয় পরিসংখ্যান কমিশন ছেড়েছিলেন দুই সদস্য। তার পরে সংবাদমাধ্যমে ফাঁস হওয়া রিপোর্টে দেখা গিয়েছিল, নোটবন্দির পরে দেশে বেকারত্বের হার ছিল সাড়ে চার দশকে সর্বোচ্চ (৬.১%)। এই তথ্য প্রামাণ্য নয় বলে কেন্দ্র এবং নীতি আয়োগ আসরে নামলেও, তা নিয়ে নাগাড়ে আক্রমণ শানাতে শুরু করেছিলেন বিরোধীরা। চাপের মুখে নীতি আয়োগের ভাইস চেয়ারম্যান রাজীব কুমারের প্রতিশ্রুতি ছিল, মার্চেই ওই রিপোর্ট প্রকাশিত হবে। এখনও পর্যন্ত ওই রিপোর্ট নিয়ে কোনও মন্তব্য সরকারের তরফে নেই। বরং উল্টে কী ভাবে তা ফাঁস হল, সেটি খুঁজে বার করতে এনএসএসও-র অতিরিক্ত ডিরেক্টর জেনারেল এ কে সাধুর নেতৃত্বে কমিটি তৈরি করেছে পরিসংখ্যান ও প্রকল্প রূপায়ণ মন্ত্রক।

রাফাল থেকে শুরু করে বেকারত্বের চড়া হার—ভারত-পাক তাল ঠোকাঠুকির কারণে হালে পিছনের সারিতে চলে গিয়েছে অন্য প্রায় সব কিছুই। এরই মধ্যে গতকাল প্রকাশিত সিএমআইই-র সমীক্ষা দেখাচ্ছে, ফেব্রুয়ারিতে দেশে বেকারত্বের হার পৌঁছেছে ৭.২ শতাংশে। ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরের পরে যা সব থেকে বেশি। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারির তুলনায় গত মাসে হাতে কাজ থাকা মানুষের সংখ্যা কমেছে ৬০ লক্ষ।

বিশেষজ্ঞদের মতে, চাকরি বাজারের এই বেহাল দশা ফের সামনে আসায় প্রচারের মুখ ও বিরোধীদের নিশানা ফের সে দিকে ঘুরতে শুরু করেছে। তার ইঙ্গিত সিপিএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরির কথাতেই। আজ তাঁর অভিযোগ, ‘‘মোদী জমানায় থমকে গিয়েছে অর্থনীতির চাকা। নতুন চাকরি তো দূর অস্ত্‌, হাতের কাজও খোয়াচ্ছেন সাধারণ মানুষ। সেই কারণেই অন্য দিকে নজর ঘোরাতে চাইছেন প্রধানমন্ত্রী।’’ প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম বেকারত্বের হারকে ‘ম্যান মেড ক্যাটাসট্রফ’ আখ্যা দিয়ে বলেছেন, ‘‘সরকারকে বেকারত্ব এবং নতুন প্রজন্মের দুর্দশার বাস্তবে ফিরিয়ে আনার এখনই সময়।’’ এ দিন ফেসবুকে কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধীরও কটাক্ষ, খেত আর কারখানায় ঘুরলে শুধু নতুন প্রজন্মের ভেঙে যাওয়া স্বপ্নের টুকরো পাওয়া যাবে।

বছরে দু’কোটি কাজের সুযোগ তৈরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মোদী। ফলে চাকরি নিয়ে তাঁর এবং তাঁর সরকারের নীরবতাকে এর আগেও বহু বার কটাক্ষ করেছেন বিরোধীরা। বলেছেন, বাজেটে বিস্তর প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও কেন্দ্র কার্যত চুপ একটি বিষয়েই। চাকরি! এ নিয়ে প্রামাণ্য পরিসংখ্যানও পেশ করেনি সরকার। কখনও বলা হয়েছে, কর্মী প্রভিডেন্ট ফান্ডের (ইপিএফ) খাতায় দু’বছরে নতুন নাম উঠেছে দু’কোটি। কিন্তু তার মানে কি দু’কোটি চাকরি? উত্তর মেলেনি। কখনও কাজের সুযোগের কথা বলতে গিয়ে টেনে আনা হয়েছে অ্যাপ নির্ভর গাড়ি, ই-রিকশা চালানো এমনকি, পকোড়া ভাজার কথা! কখনও কেন্দ্র বলেছে, দ্রুততম বৃদ্ধির দেশে চাকরি হচ্ছে না! তা হয় না কি?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Employment Report Narendra Modi Jobs
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE