Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

কবে ছুটি হবে, অধীর বিরোধী, শাসকেরাও

দুপুর তখন দুটো। মধ্যাহ্নভোজের পর ফের শুরু হচ্ছে রাজ্যসভার অধিবেশন।

রাজ্যসভা অধিবেশন। —ফাইল চিত্র।

রাজ্যসভা অধিবেশন। —ফাইল চিত্র।

দিগন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০২ অগস্ট ২০১৯ ০৩:৩৭
Share: Save:

বিল নিয়ে আলোচনা শুরু হল। কিন্তু মন্ত্রীমশাই নিজেই নেই। নেই তাঁর প্রতিমন্ত্রীও।

দুপুর তখন দুটো। মধ্যাহ্নভোজের পর ফের শুরু হচ্ছে রাজ্যসভার অধিবেশন। জাতীয় মেডিক্যাল বিল নিয়ে আলোচনা হবে। কিন্তু স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষবর্ধনই নেই। প্রতিমন্ত্রী অশ্বিনী কুমার চৌবেও উধাও। বিরোধী শিবিরও অনেক পাতলা। কংগ্রেসের জয়রাম রমেশ বিষয়টি নজর করেই হইচই শুরু করলেন। রাজ্যসভায় বিজেপির দলনেতা, সামাজিক ন্যায়মন্ত্রী থাওরচন্দ্র গহলৌত বোঝানোর চেষ্টা করলেন, ‘‘আমি তো আছি।’’ কিন্তু নাছোড় বিরোধীরা।

দশ মিনিটের জন্য বন্ধ করতে হল অধিবেশন। বাংলার দেবশ্রী চৌধুরীকে দেখিয়ে রূপা গঙ্গোপাধ্যায় বললেন, ‘‘এই দেখুন আর একজন মন্ত্রী তো আছেন!’’ জয়রামরা বললেন, ‘‘তাতে কী? যে মন্ত্রকের বিল, তার মন্ত্রী কোথায়?’’ গহলৌত বার্তা পাঠালেন। কিছুক্ষণ পর হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এলেন হর্ষবর্ধন, সঙ্গে প্রতিমন্ত্রী। সকলকে শুনিয়েই তাঁদের বেজায় ধমক দিলেন গহলৌত: ‘‘হচ্ছেটা কী? আপনাদের বিল আর আপনারাই নেই?’’ কাঁচুমাচু মুখে হর্ষবর্ধন বোঝালেন, ‘‘এই একটু দেরি হয়ে গেল, আর কী!’’

তিনশোর বেশি আসন নিয়ে ফের জিতে আসার পর সংসদ অধিবেশনের মেয়াদ বাড়িয়ে যে ভাবে একের পর এক বিল পাশ করাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী, তাতে শুধু বিরোধী নয়, শাসক শিবিরেও নাজেহাল অবস্থা। সংসদীয় মন্ত্রী প্রহ্লাদ জোশী শুনিয়ে রেখেছেন, দরকার হলে আরও বাড়বে সংসদের অধিবেশন। সকলের মাথায় হাত।

লোকসভা ভোটের আগে মোদীকে যিনি ‘আশীর্বাদ’ দিয়েছিলেন, আজ সেই মুলায়ম সিংহও লোকসভায় বললেন, ‘‘ঢের হয়েছে। অধিবেশন আর কত বাড়াবে সরকার? কেউ বিয়েবাড়িও যেতে পারছেন না।’’ বিজেপির এক মন্ত্রী বলেন, ‘‘মন্ত্রকের কাজ করতে হবে, সংসদ সামলাতে হবে, নির্বাচনী কেন্দ্রও দেখতে হবে। সকলের বয়স হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী কারও কথা বোঝেন না, শোনেনও না।’’ আর এক মন্ত্রীর রসিক মন্তব্য: ‘‘আজই কংগ্রেস বলেছে, সংসদের অধিবেশন শেষ হলে ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক ডেকে নতুন সভাপতি খুঁজবে। প্রধানমন্ত্রী জানতে পারলে অধিবেশন শেষই করবেন না।’’

বিরোধীদের কাছে আরও বড় সমস্যা হল, সরকার গায়ের জোরে সংসদ বাড়াচ্ছে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বিল পাশ করাচ্ছে। কিন্তু কোন দিন কী বিল আনবে, তা আচমকাই এক রাত আগে স্থির করছে। ফলে বিরোধীরা বিল নিয়ে প্রস্তুত হয়েও আসতে পারছেন না। আজ লোকসভা শুরু হতেই এই নিয়ে বিরোধীরা সরব হন। অধীর চৌধুরী থেকে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, কানিমোঝি থেকে সৌগত রায়— সকলেরই মুখে এক রা— বিরোধীরা সরকারকে সাহায্য করছে, কিন্তু শাসক দল শুধুই নিজের খেয়ালে চলবে, এমন হতে পারে না!

সংসদের মেয়াদ আরও দু’দিন বৃদ্ধির কথা কানাঘুষো শুনে আজ সরকারকে এক বৈঠকে চেপেই ধরলেন বিরোধীরা। সংসদীয় মন্ত্রী অবশ্য বললেন, মেয়াদ বাড়ছে না। কিন্তু শর্ত হল, দিনে তিনটি বিল পাশ করাতে হবে। আর সেটি না হলে?

এই সপ্তাহে শনি-রবির ছুটিও কেড়ে নিয়েছেন মোদী। দু’দিনই সকালে প্রাতরাশ থেকে নৈশভোজ পর্যন্ত বিজেপি সাংসদদের প্রশিক্ষণ হবে। সভাপতি অমিত শাহ জানিয়ে দিয়েছেন, ‘‘সকলকে থাকতেই হবে। কোনও বাহানা চলবে না।’’ বিজেপির এক সাংসদের বক্তব্য, ‘‘পরিবারে লোক অসুস্থ, তবু ছুটি পাব না। এ ভাবে আর কত দিন? প্রধানমন্ত্রীর না হয় পরিবার নেই, আমাদের তো আছে। আর আমাদের সংসদে থাকতে বলে প্রধানমন্ত্রী তো আসেন না!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Parliament Parliament Session Congress BJP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE